শীত আসতে খুব বেশি দিন আর বাকী নেই। ত্বক-চুলের সুরক্ষা নিয়ে কমবেশি সবাই চিন্তিত থাকেন শীতের আগে। কিন্তু যারা শ্বাসকষ্টের মতো রোগে ভুগেন তারা শীতের সময়টাতে তুলনামূলক বেশি দুশ্চিন্তায় থাকেন। কারণ শীতের ধুলাবালি থেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যায়।    

শুধু শ্বাসকষ্ট নয়, শীতের পোশাক, লেপ, কম্বলের ব্যবহার শুরু হলেই হাঁচি-কাশিও বড়ে যায় অনেকের। একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো, রাস্তার ধুলায় যতটা না হাঁচি, কাশি বা হাঁপানির কষ্ট বাড়ে তার থেকে বেশি হয় ঘরের মধ্যে জমে থাকা ধুলায়। কারণ, পথের ধুলায় যে অজৈব পদার্থ থাকে তাতে হাঁচি-কাশি অতটা হয় না, ঘরে জমে থাকা ধুলায় হয়, অ্যালার্জিক অ্যাজমা।

কোন ধরনের জীবাণু দায়ী: এ ধরনের অ্যাজমার পেছনে মাইট নামক আর্থোপড জাতীয় জীবণু দায়ী। বিছানা, বালিশ, কার্পেট হলো মাইটের আদর্শ বাসস্থান। আর্দ্রতা ও গরম আবহাওয়ায় মাইট জীবনচক্র সম্পূর্ণ করে থাকে। ধুলার মধ্যে মিশে যায় মাইটের শরীর নিঃসৃত রস, লালা ও মল, যা একসঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং অ্যালার্জি বাড়ায়, যা অ্যাজমায় রূপান্তরিত হয়।

প্রতিকার: শীতে শ্বাসকষ্ট থেকে মুক্তি পেতে কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন, ঘরের কার্পেট সরিয়ে নিতে হবে। ঘামে ভেজা তোষক ও বালিশের ধুলায় মাইট বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, সেজন্য ধুলা প্রতিরোধক ঢাকনা ব্যবহার করতে পারেন তোষক-বালিশে। প্রয়োজনে তোষকের পরিবর্তে মাদুর পেতে ঘুমাতে পারেন। মুখে মাস্ক পরে থাকবেন। নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করবেন। এক সপ্তাহ পর পর বিছানার চাদর-বালিশের কাভার গরম পানিতে ধুয়ে নেবেন। এর ফলে ধুলার অ্যালারজেন ধুয়ে যাবে এবং মাইট মেরে ফেলতে সাহায্য করবে।

প্রতিষেধক: এ ধরনের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে ওষুধ হয়তো সাময়িকভাবে অ্যালার্জির উপশম করে। মনে রাখতে হবে, যতদিন ওষুধ ব্যবহার করা যায় ততদিনই ভালো থাকে এবং ওষুধ বন্ধ করলেই রোগের লক্ষণ বেড়ে যায়। এ রোগের প্রধান ওষুধ হল ইনহেলার স্টেরয়েড। কিন্তু স্টেরয়েডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তাই এ ওষুধ এক নাগাড়ে বেশিদিন ব্যবহার করা ঠিক নয়।

ইমুনোথেরাপি: প্রথমেই অ্যালার্জি দ্রব্যাদি এড়িয়ে চলবেন। ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা রোগীদের সুস্থ থাকার অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। ইমুরোথেরাপির মূল উদ্দেশ্য হলো মাইট দ্বারা অ্যাজমার সমস্যা হচ্ছে সেই এলারজেন স্বল্প মাত্রায় শরীরে প্রয়োগ করা হয়। ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়ানো হয়, যাতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়। শরীরের ইমুউন সিস্টেমের পরিবর্তন ঘটায় কিংবা শরীরের অ্যালার্জির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জি ওষুধ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

আরও যা করবেন:
স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ এড়িয়ে চলবেন। মশার কয়েলের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে। তাই মশারি ব্যবহার করে ঘুমাতে চেষ্টা করুন। পথ চলতে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। ফ্রিজের ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। যেসব খাবারে অ্যালার্জি বাড়তে পারে সেসব খাবেন না। যেমন-গরুর মাংস, চিংড়ি মাছ, বেগুন। অ্যালার্জি বাড়লে সেখান থেকে শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে। শীতের সময়টাতে গরম কাপড় সঙ্গে রাখবেন এবং পোশাক রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করবনে। তার পরেও যদি অ্যালার্জি বেড়ে যায়, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

সূত্রঃ ইত্তেফাক/আরএম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে