বাড়ি বাংলাদেশ কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনা এবং  পরবর্তীতে মন্দিরে হামলা কোন ধার্মিকের...

কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনা এবং  পরবর্তীতে মন্দিরে হামলা কোন ধার্মিকের কাজ হতে পারে না

95
0

।। আকবর হোসেন।।

পবিত্র কোরআন এসেছে গোটা মানবগোষ্ঠিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে। এটি শুধুই মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ নয়। এর আবেদন সবার প্রতি। একজন মুসলমান বিশ্বাস করে যে আল্লাহ এক, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) হচ্ছেন শেষ নবী এবং পবিত্র কোরআন হচ্ছে সর্বশেষ আসমানী কিতাব। এ যদি হয় বিশ্বাস তাহলে কী করে একজন ধার্মিক মুসলমান এই গর্হিত কাজ করতে পারে? আমি ঘটনার কোন বিস্তারিত বর্ণনায় যাচ্ছি না। কারণ ঘটনাটি সবার কাছেই পরিস্কার। একই সাথে আমরা এও বিশ্বাস করি যে, সনাতন হিন্দু সহ অন্য যেকোন ধর্মই কোন পবিত্র গ্রন্থকে অবমাননা করা কিংবা অন্য কোন ধর্মের অনুসারীদের প্রতি অবিচার করার কোন অধিকার দেয়নি, আর ইসলামে তো এর কোন সুযোগই নেই। তাহলে একাজটি যে বা যারা করেছে তারা কোনভাবেই ধার্মিক হতে পারে না। তাদের এই অপকর্ম অগণিত মানুষের মনে আঘাত হেনেছে। তারা চেয়েছিলো এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে কোন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে, তাও সম্ভব হয়নি। শুধু বিক্ষুব্ধ করেছে মুসলমানদের যারা বাংলাদেশের মতো দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশে কোরআনের অমর্যাদায় মর্মাহত হয়েছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ যারা তাদের উৎসবের পুরোপুরি আমেজ থেকে বঞ্চিত হলো, আক্রান্ত হলো কিছু মন্দির। প্রাণ গেলো কিছু মানুষের যারা প্রতিবাদমুখর হয়েছিলো এই দুস্কর্মের বিরুদ্ধে। এ সমস্ত সকল ক্ষতির জন্য আমরা সমব্যথিত।

আমরা এ ধরণের গর্হিত অপরাধমূলক কাজের তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে রয়েছে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি সুদীর্ঘ সুমধুর সম্পর্ক। এখানে মসজিদে নামাজ হয় আবার পাশাপাশি মন্দিরে পুজা হয়। আমাদের কোন সমস্যা হয় না। ঈদেপর্বে, পুজা পার্বনে, আচার অনুষ্ঠানে, সামাজিকতায়, বিয়েশাদী, আপদ বিপদে, আনন্দে দুঃখে, সাহায্য সহযোগিতায় একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। আমরা ছোট বেলা থেকেই এসব দেখে আসছি। আমার রণধির স্যারের কথা এখনো মনে পড়ে। তিনি আমাকে কতো ভালবাসতেন! দেশে গেলে সময় পেলে আমি মইকে (আম্মার বইনারী অর্থাৎ বান্ধবী) দেখে আসি। আম্মাই আমাকে মনে করিয়ে দেন যাতে উনাকে দেখে আসি। এমনকি উনার ছেলেমেয়েদের কথাও আম্মা আমাদের শুনান। আসলে দুস্কৃীতিকারীরা বার বারই চায় এ সম্পর্কে ফাটল ধরাতে। কিন্তু তারা সফল হয়নি এবং আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ভবিষ্যতেও সফল হবেনা। তারা চায় শান্তির ধর্ম ইসলামের গায়ে কালিমা লেপন করতে। কিন্তু এদেশের মুসলমানরা তা‘ কখনো সফল হতে দেবে না। অন্য দেশে মুসলমানদের উপর কোন ধরনের নির‌্যযাতনের কারনে বাংলাদেশে কোন প্রতিশোধ নেয়া যাবেনা তাতো আমরা ইসলামে এবং হক্কানী আলেমদের কাছ থেকেই জেনেছি। সুতরাং এ সমস্ত অপকর্ম করে আর যাই হোক এ সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করা যাবেনা । তাদের সব অপচে্ষ্টা ব্যর্থ হবে।

আর আরেকটা জিনিষ করতে হবে, তা‘ হলো এ জাতীয় ঘটনাকে রাজনীতিকরণ না করে অপরাধ হিসেবেই দেখুন। দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করুন এবং শাস্তি দিন। অদৃশ্ কোন জুজুর ভয় দেখিয়ে কার লাভ হচ্ছে? কোন ঘটনা ঘটলেই তদন্তের আগেই যাতে অমুকে করেছে, তমুকে করেছে অথবা অমুক দেশের ইন্ধন তমুক দেশের ইন্ধন, অমুকের দোসর তমুকের দোসর ইত্যাদি তকমা দিয়ে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিনা এবং আসল অপরাধীরা পার পেয়ে যায় কিনা সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলকে খতিয়ে দেখতে হবে। রামু থেকে শাল্লা পর্যন্ত ঘটনাবলীতো আমাদের সামনেই আছে।

আমাদের আরো সহনশীল হতে হবে। অযথা উস্কানী, উগ্রবাদী মতবাদ, জঙ্গীপনা, কাল্পনিক কাহিনী, উত্তেজনা, উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণায় কর্ণপাত না করে যারা এগুলোক করছে বিশেষ করে তরুণ সমাজকে ফিরিয়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা উগ্রবাদকে না বলি। আমরা আরো পরমতসহিষ্ণু হতে শিখি।

কালপ্রিট যেই হোক তাকে অনতিবিলম্বে বের করুন। এই ক্রান্তিকালে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসই হতে পারে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটি উপায়। এলাকায় এলাকায় সম্প্রীতি কমিটি করুন, মিটিং করুন। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশ, প্রিয় বাংলাদেশ হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-সংঘাতমুক্ত থাকবে। এটাই আমাদের কামনা।

এই বৃটেনেও আমরা কোন কোন সময় বর্ণবাদ, বৈষম্যের শিকার হই। কিন্তু এখানকার প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা রাষ্ট্রই দিয়ে যাচ্ছে। আমরা জাতীয়ভাবে কোন ধর্মীয় ছুটি না পেলেও এখানে ধর্মকর্মের চর্চা, মত প্রকাশের অধিকারের নিশ্চয়তা আছে। বাংলাদেশেতো অন্য সব ধর্মের বিশেষ দিবসে জাতীয় ছুটি থাকে যা‘ এখানে নেই। এখানে রয়েছে খৃষ্টানদের সব ধর্মীয় দিবস পালনের রাষ্টীয় সুবিধা। এ দিক থেকে মুসলিমপ্রধান দেশ হলেও যার যার ধর্ম পালনের জন্য বাংলাদেশ হচ্ছে একটি উর্বর ভূমি। আমরা এটা ব্যাহত হোক তা কোনভাবেই চাই না।

সেইসাথে আমরা একজন বৃটিশ এমপি স্যার ডেভিড এমিস দুস্কৃতিকারীর চুরিকাঘাতে তার সার্জারীতে প্রাণ হারানোর ঘটনারও তীব্র নিন্দা জানাই এবং সহমর্মিতা জানাচ্ছি তার পরিবারের প্রতি। ইতোমধ্যেই অপরাধীকে ধরা হয়েছে। আশা করি সে উপযুক্ত শাস্তি পাবে। এ জাতীয় দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য বৃটিশ সরকার নানা পদক্ষেপ এবং এমপিদের সিকিউরিটি মেজার নিয়ে আরো কাজ করছেন।

“পৃথিবীতে যত মন্দ আছে তা ভালো হোক, ভালো হোক ভালো,

এই বিদ্বেষ-আঁধার দুনিয়া তাঁর প্রেমে আলো হোক, আলো।

সব মালিন্য দূর হয়ে যাক সব মানুষের মন হতে,

তাঁহার আলোক প্রতিভাত হোক এই ঘরে ঘরে পথে পথে।“ – জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম।

সবার প্রতি শুভ কামনা নিরন্তর। আল্লাহ সহায় হোন।

টুইকেনহাম, ওয়েষ্ট লন্ডন

১৭ অক্টোবর, ২০২১

akbargermany92@gmail.com

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে