ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় বাংলাদেশ থেকে এক কৃষককে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় বিএসএফের বিরুদ্ধে।
ঠাকুরগাঁওয়ের কাঁঠালডাঙ্গী বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার আবুল হোসেন জানান, রুহুল আমিন (৩৮) নামে এক বাংলাদেশী এই নির্যাতনের শিকার হন বলে খবর পাওয়ার পর সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তারা বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রুহুল জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভদ্রেশ্বরী ভেলাপুকুর গ্রামের আক্কেল আলীর ছেলে। কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন তিনি।
সোমবার (২ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে তাকে ঠাকুরগাঁও শহরের রোদেলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসক ওবায়দুল হক বলেন, ‘রুহুল আমিনের পুরো শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার পুরো দেহে কালো কালো দাগ হয়ে গেছে। তার প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা চিকিৎসা করছি তবে তার সুস্থ হতে বেশ সময় লাগবে।’
চিকিৎসাধীন রুহুল আমিন বলেন যে, সোমবার সকাল ১০টার দিকে রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নে কাঁঠালডাঙ্গীর ৩৭৪/১ এস পিলার এলাকা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্তত ২০০ গজ অভ্যন্তরে কুলিক নদীর ধারে দুটি মহিষ দিয়ে আমি আমার জমি চাষ করছিলাম। এ সময় কুলিক নদীতে নেমে সাদা পোশাকধারী দুই ব্যক্তি মাছ ধরা শুরু করে। পরে তারা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, কেন আমি এ জমি চাষ করছি। তাদের প্রশ্নের জবাবে আমি বলি, এ জমিতে আলু ও রসুন চাষ করবো। তারা আর কথা না বলে আমার গলায় ছোরা ঠেকিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়া সংলগ্ন বটগাছের তলায় নিয়ে যায়। আমার দুটি মহিষও সেখানে নিয়ে যায় তারা। সেখানে এ দু’ব্যক্তির সাথে তিনজন পোশাকধারী বিএসএফ সদস্য যোগ দেয়।’
পরে পাঁচজন মিলে তাকে পিটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রুহুল আমিন বলেন, ‘কেউ বাঁশের লাঠি দিয়ে, কেউ বেতের লাঠি দিয়ে পেটায়। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে। সীমান্তের কাছে তখন বাংলাদেশিরা ভিড় করছিলেন। তখন বিএসএফ সদস্যরা আমাকে কাঁটাতারের দরজার কাছে নিয়ে যায়। তারা মহিষের জোয়াল খুলতে বললে খুলতে গিয়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। প্রায় দুই মিনিট পর আমার জ্ঞান ফিরে আসে। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা আমাকে বলে, বাংলাদেশে গিয়ে বলবি, ভারতে আর কাউকে আসতে দেয়া হবে না, কেউ আসলে গুলি করে মেরে ফেলা হবে।’
বেলা দেড়টার দিকে বিএসএফ সদস্যরা তাকে ছেড়ে দেয় বলে জানান রুহুল।
রুহুল আমিনের ছোটভাই রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনছারুল হক বলেন, ভারতের কিশানগঞ্জ ব্যাটালিয়নের মুকেশ ক্যাম্পের সদস্যরা তার ভাইকে নির্যাতন করেছে।
খবর পেয়ে তারা তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবির জগদল বিওপির সদস্যদের জানান।
বিজিবি কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ‘রুহুল আমিনকে নির্যাতন করার খবর পাওয়ার পর বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএসএফ-এর কাছে আমরা মৌখিকভাবে ঘটনার প্রতিবাদ জানাই। বিএসএফ সদস্যদের দাবি, রুহুল আমিন মহিষ নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিলেন। তার পরও তারা ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’