আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সব কিছু আল্লাহর নামে তাসবিহ পড়ে। আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে। আল্লাহর নামের গান গায়। প্রশংসা ঘোষণা করে। এমন কোনো সৃষ্টি নেই, যা আল্লাহর নামে তাসবিহ পাঠ করে না।

মানুষের মুখে আল্লাহর প্রশংসার কথা মানুষ শুনতে পারে। অনুধাবন করতে পারে। কিন্তু অন্য সৃষ্টির তাসবিহ পাঠ মানুষ বুঝতে পারে না। আল্লাহ বলেন, ‘সাত আসমান ও জমিন এবং এদের অন্তর্ভুক্ত সব সৃষ্টি তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে। এমন কোনো জিনিস নেই, যা তাঁর সপ্রশংস তাসবিহ পাঠ করে না। কিন্তু তোমরা তাদের তাসবিহ পাঠ বুঝতে পারো না।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৪৪)

মুমিন-মুসলমান আল্লাহর তাসবিহ পড়ে। তাসবিহ পাঠ যেমন মুমিনের বৈশিষ্ট্য, তেমনি জান্নাতিদেরও। মুমিনরা জান্নাতে গিয়ে শুধু তাসবিহই পাঠ করবে। আল্লাহ বলেন, ‘(অন্যদিকে) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের ইমানের কারণে তাদের প্রতিপালক তাদের এমন স্থানে পৌঁছাবেন, প্রাচুর্যময় উদ্যানরাজিতে তাদের তলদেশ দিয়ে নহর বহমান থাকবে। তাতে (প্রবেশকালে) তাদের ধ্বনি হবে এই, হে আল্লাহ, সকল দোষ-ত্রুটি থেকে আপনি পবিত্র।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৯-১০)

প্রতিটি সৃষ্টির তাসবিহ পাঠের পদ্ধতি জানা আছে। মানুষের তাসবিহ পাঠের ধরন ও পদ্ধতির ভিন্নতা আছে। ভিন্নতা আছে অন্য সৃষ্টির তাসবিহ পাঠেও। পাখির কুহুতান, নদীর কলতান, বাতাসের গুঞ্জন, ঝরনার বয়ে চলা, পাহাড়ের স্থিরতা, পাখির উড়ে বেড়ানো, আসমানে নীল রঙের চাদর, সেখানে ছড়ানো-ছিটানো কালো-সাদা মেঘদল—এগুলো আল্লাহর কাছে সমর্পণের নজির। প্রভুর তাসবিহ পাঠের দৃশ্য। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি কি দেখেননি আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, তারা আল্লাহরই তাসবিহ পাঠ করে এবং পাখিরাও, যারা পাখা বিস্তার করে উড়ছে। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ নামাজ ও তাসবিহের পদ্ধতি জানা আছে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৪১)

পাহাড় ও পাখি আল্লাহর তাসবিহ পড়ে। পাহাড়ের অবিচল দাঁড়িয়ে থাকা, পাখির ডানা ঝাপটে উড়ে চলা আল্লাহর তাসবিহ পাঠের চিত্র। পাখিরা গাছের ডালে, পাহাড়ে বসে আল্লাহর তাসবিহ জপে। পাখির জিকিরের পবিত্র ধ্বনিতে মুখরিত হয় পৃথিবী। কোরআনে আছে, ‘আমি পর্বতমালাকে নিয়োজিত করেছিলাম, যাতে তারা তার (দাউদের) সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ও সূর্যোদয়কালে তাসবিহ পাঠ করে। এবং পাখিদেরও, যাদের একত্র করে নেওয়া হতো। তারা তাঁর সঙ্গে মিলে আল্লাহর (অভিমুখী হয়ে) জিকিরে লিপ্ত থাকত। (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ১৮-১৯)

আকাশে মেঘ জমে। বিদ্যুৎ চমকায়। বজ্রপাত হয়। বজ্র ও আল্লাহর তাসবিহ পড়ে। আল্লাহর আদেশের কাছে শতভাগ আনুগত্য থাকে। বিদ্যুতের চমকই আল্লাহর তাসবিহ পাঠের নিদর্শন। আল্লাহ বলেন, ‘বজ্র তাঁরই তাসবিহ ও হামদ জ্ঞাপন করে।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ১৩)

ফেরেশতারও রাত-দিন আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে। নিরন্তর আল্লাহর স্তুতি বর্ণনা করে। কোরআনে আছে, ‘তারা রাত-দিন তাঁর তাসবিহ পাঠে লিপ্ত থাকে, কখনো অবসন্ন হয় না।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ২০)

আল্লাহর আরশের চারপাশে যাঁরা থাকে এবং যাঁরা আল্লাহর আরশ বহন করে আছে—সবাই আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে। আল্লাহর তাসবিহ পাঠই তাঁদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি ফেরেশতাদের দেখতে পাবেন, তারা আরশের চারপাশ ঘিরে তাদের প্রতিপালকের প্রশংসার সঙ্গে তাঁর তাসবিহ পাঠ করছে।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৭৫)

তাসবিহ পাঠ মানুষকে বিপদাপদ থেকে মুক্তি দেয়। মানুষের জীবনকে রক্ষা করে। ইউনুস (আ.) সাগরের মাছের পেটের অন্ধকার থেকে আল্লাহর তাসবিহ পাঠের মাধ্যমেই বেঁচে ফিরে এসেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর মাছ সম্পর্কিত [নবী (আ.)]-কে দেখুন, যখন সে ক্ষুব্ধ হয়ে চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল, আমি তাকে পাকড়াও করব না। অতঃপর সে অন্ধকার থেকে ডাক দিয়েছিল,  (হে আল্লাহ) আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি সব ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮৭)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে