আলাউদ্দিন চৌধুরী

সারা বিশ্বে সম্পদের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৈষম্য। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে সম্পদ বাড়লেও সারা বিশ্বে যত সম্পদ রয়েছে তাতে এই দেশগুলোর হিস্যা এখনো ১ শতাংশের নিচে রয়ে গেছে। বর্তমান করোনার সংকটে বিশ্বব্যাপী নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মানবসম্পদ মূল্য কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে বিশ্বব্যাংক। ‘দ্য চেঞ্জিং ওয়েলথ অব ন্যাশন ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমনটি আশঙ্কা করেছে সংস্থাটি।

সম্প্রতি প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১৪৬টি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদ, উত্পাদিত সম্পদ ও বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। এবারের প্রতিবেদনে প্রথম বারের মতো ম্যানগ্রোভ এবং সমুদ্রের মৎস্য সম্পদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ১৯২৬৫ ডলার। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫২৫ টাকা। এর মধ্যে উত্পাদিত সম্পদের বাজারমূল্য ৫৩৪৬ ডলার (৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪১০ টাকা), মানব সম্পদের মূল্য ১২৯৩৪ ডলার ( প্রায় ১১ লাখ টাকা) এবং প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য ২১৬৭ ডলার (১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা)।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ১৯৯৫ সালের পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার সম্পদ বাড়ছে। কিন্তু একই সঙ্গে এই অঞ্চলের জনসংখ্যাও বেড়েছে। এজন্য মাথপিছু সম্পদের পরিমাণও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে সবচেয়ে কম লক্ষ্য করা গেছে। এই অঞ্চলে সম্পদের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে মানবসম্পদের অবদান। কিন্তু মানবসম্পদে নারী-পুরুষের ভারসাম্য নেই। মানবসম্পদে ৮০ শতাংশ পুরুষের অবদান লক্ষ্য করা গেছে। অবশ্য গত দুই দশকে এর অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯৫ থেকে ২০১৮ এই ২৩ বছরে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর সম্পদ সামান্যই বেড়েছে। এর পরেও সারা বিশ্বের যে সম্পদ রয়েছে তার মাত্র ১ শতাংশেরও কম রয়েছে এসব দেশের দখলে। অথচ নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে বিশ্বের ৮ শতাংশ মানুষ বাস করছে। এই ২৩ বছরে নিম্ন আয়ের এক-তৃতীয়াংশ দেশের মাথাপিছু সম্পদ কমেছে। ঐতিহ্যগতভাবে মোট দেশজ উত্পাদনকে (জিডিপি) উন্নতির মাপকাঠি বিবেচনা করা হয়। তবে বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে দেশগুলোর উৎপাদিত সম্পদের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদের বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন বন, ফসলি জমি এবং সমুদ্র সম্পদের আর্থিক মূল্যের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রথম বারের মতো ম্যানগ্রোভ এবং সামুদ্রিক মত্স্য সম্পদের তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ম্যানগ্রোভ সম্পদের মূল্য ১৯৯৫ সালে ২০৪ কোটি ডলার থেকে ২০১৮ সালে বেড়ে ১২২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাত্ ২৩ বছরে এ খাতে সম্পদমূল্য বেড়েছে ৪০২ শতাংশ বা চার গুণ। ম্যানগ্রোভ সম্পদের মূল্য চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও তাইওয়ানে সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব দেশে ম্যানগ্রোভের আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার সংরক্ষিত সম্পদের মূল্যও বেড়েছে। চীনে ম্যানগ্রোভ সম্পদের মূল্য বেড়েছে সর্বোচ্চ ৭৬৭ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৫৯১ শতাংশ। এছাড়া জাপানে ৩১১ শতাংশ, তাইওয়ানে ২৬৭ শতাংশ, ভারতে ১৯৪ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ায় ১৪৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর বন সম্পদ ১৯৯৫ থেকে ২০১৮ সালের সময়কালের মধ্যে মাথাপিছু ৮ শতাংশ কমেছে। ব্যাপকহারে বন ধ্বংস এর বড় কারণ। এই সময়কালে বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক মত্স্য সম্পদের পরিমাণ ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং অপরিকল্পিত মত্স্য আহরণের ফলে এমনিট হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবে সামুদ্রিক মেস্যর পরিমাণ আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবসম্পদে বিনিয়োগ করে মধ্য আয়ের দেশগুলো উন্নতি করছে। চলমান কোভিড-১৯-এর প্রভাব কতটা হবে সেটি এখনো মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, করোনার প্রভাবে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মানবসম্পদের অন্তত ১৪ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া লিঙ্গ বৈষম্যও বাড়তে পারে। টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং প্রকৃতি সুরক্ষায় বিনিয়োগ করতে নীতিনির্ধারকদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

ইত্তেফাক/কেকে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে