মার্কিন প্রেসিডেন্ট নতুন পেট্রোল এবং ডিজেল গাড়ি বিক্রি বন্ধ করার জন্য বিশ্বব্যাপী একটি যুগান্তকারী অঙ্গীকার চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করার পরে এটি সামনে আসে। আগামী বুধবার যুক্তরাজ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে ধনী দেশগুলির জন্য এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য ২০৪০ সালের মধ্যে নতুন দূষণকারী গাড়ি বিক্রি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করতে প্রস্তুত নিচ্ছে। যুক্তরাজ্য সরকার শেষ মুহুর্তে বাইডেন প্রশাসনের সাথে আলোচনায় রয়েছে, যারা দেশীয় রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার উদ্বেগের কারণে চুক্তিতে অংশ নিতে অস্বীকার করছে। কারণ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কংগ্রেসে তার জলবায়ু এজেন্ডা পাশ করতে হিমশীম খাচ্ছেন।
এখন, মিঃ ওবামা, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সাথে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আশায় গ্লাসগোতে ভ্রমণ করছেন। পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্কের ক্রমাবনতির কারণে চীনও চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
পেট্রোল এবং ডিজেল গাড়িগুলি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার বিষয়ে ইইউ-এর নিজস্ব সময়সীমাও সমস্যার সম্মুখীন কারণ ডিকার্বনাইজেশন প্যাকেজ নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আলোচনায় কোন অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।
এই অচলাবস্থা বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করার প্যারিস চুক্তির উচ্চাভিলাশী আকাংখাকে “জীবিত রাখতে” প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের লক্ষ্যকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। মিঃ জনসনকে এখন সাধ্যের অতীত প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
মিঃ বিডেন এই বছরই ২০৩০ সালের মধ্যে সমস্ত গাড়ি বিক্রির অর্ধেক বৈদ্যুতিক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং দূষণের হার কমিয়ে আনার বিরদ্ধে তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেয়া পদক্ষেপগুলি বাতিল করেছেন। কিন্তু কংগ্রেসের মাধ্যমে তহবিল পেতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
তার অবকাঠামো চুক্তি, যার মধ্যে পরিচ্ছন্ন শক্তির জন্য কোটি কোটি টাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে পাস হয়েছে এবং দ্বিতীয় বিল – যার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের তহবিলের বেশিরভাগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে – এখনও আটকে রয়েছে।
মিঃ বাইডেন পরিবেশ রক্ষায় আরও বেশী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানের মুখোমুখি হয়েছেন। তবে তিনি দেশে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন কেননা তার দেশে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলিকে ব্যাপকভাবে ব্যয়বহুল এবং অবাস্তব হিসাবে দেখা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে বিক্রি হওয়া গাড়ির মাত্র দুই শতাংশ বিশুদ্ধ বৈদ্যুতিক, তুলনায় যুক্তরাজ্যে প্রায় সাত শতাংশ এবং ইউরোপে ১০ শতাংশের ওপর গাড়ী হলো বিদ্যুৎ চালিত।
এখন, অনেক ডেমোক্র্যাট এবং কনজারভেটিভরা আশা করছেন যে মিঃ ওবামা সবকিছু কে আবার ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারেন।
মিঃ ওবামার মুখপাত্র হান্না হ্যানকিনস অঙ্গীকার করেছেন যে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিশেষভাবে “প্যারিস চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর পাঁচ বছরে যে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে তা তুলে ধরবেন, সারা বিশ্বের তরুণদের নেতৃত্বকে তুলে ধরবেন এবং সরকার, বেসরকারী খাত, দাতব্য প্রচেষ্টা এবং সুশীল সমাজ” সহ সকলের সমন্বিত প্রয়াশে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাবেন।
কপ-২৬-এ মিঃ ওবামার উপস্থিতি জলবায়ু কর্মীদের পরামর্শের ফল। তবে কপ-২৬ এর কথোপকথনের সাথে পরিচিত লোকেরা সিএনএনকে জানিয়েছে যে, প্রকৃতপক্ষে তার প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মিঃ বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক রাষ্ট্রপতির বিশেষ দূত জন কেরির প্রচেষ্টায় এটি বাস্তব রূপ নিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, হোয়াইট হাউস পর্দার আড়ালে কথোপকথন নিয়ে আলোচনা করার জন্য ওবামার সাহায্যের আগ্রহী ছিল।
ক্ষ্মতায় থাকাকালীন মিঃ ওবামা পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন।
এদিকে, অনলাইনে অনেকেই মিঃ বাইডেনের সমালোচনা করেছেন, অন্তত এই দাবি সামনে আসার পর যে তিনি সম্মেলনের সময় “ঘুমিয়ে” ছিলেন। টুইটারে অন্যরা একে “অপমানজনক”, “ভয়ানক” এবং এমনকি “নেতৃত্বের পতন” বলে অভিহিত করেছেন।
কপ-২৬-এর একজন মুখপাত্র বলেছেন: “কপ-২৬-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে, যুক্তরাজ্য জি২০ এবং অন্যান্য দেশগুলিকে ১.৫ সেন্টিগ্রেডের লক্ষ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বড় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে চলেছে। এর মধ্যে রয়েছে, কয়লাচালিত শক্তিকেন্দ্র বন্দ্ব করা , বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসারকে ত্বরান্বিত করা এবং বন উজাড়ের পরিকল্পনা মোকাবেলা করা।
“আমাদের প্রিয় গ্রহের জন্য একটি ইতিবাচক ফলাফলের জন্য আমরা কপ-২৬-এর একটি উত্পাদনশীল দ্বিতীয় সপ্তাহের অপেক্ষায় রয়েছি।”