।।কামাল শিকদার।। অ্যাঞ্জেল হার্নান্দেজ তার স্ত্রীকে বারবিটুরেটের গ্লাস দেওয়ার কিছুক্ষণ আগে তাকে আরও একবার জিজ্ঞাসা করলেন, সে আসলেই মরতে চায় কিনা। যত তাড়াতাড়ি যেতে পারি ততই ভালো, মারিয়ার দ্বিধাহীন জবাব। মারিয়ার শরীর নানাবিধ স্কেলরিসের কারণে প্রায় বিধ্বস্ত। বিষটুকু গিলতেও তার বেশ কষ্ট হচ্ছিলো । অবশেষে তিনি জোর করের স্ট্রর সাহায্যে বিষটুকু গলায় চালান করে দিতে পারলেন।
২০১৯ সালে মিস কারাস্কোর মৃত্যু স্পেনের মিডিয়ায় ব্যাপক ঝড় তোলে। মাদ্রিদে তদন্তকারী বিচারক প্রাথমিকভাবে মামলাটি মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় বিশেষজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেছিলেন । সরকারী কৌশলী ৭০ বছর বয়সী মিঃ হার্নান্দেজকে ছয় মাসের কারাদন্ডের শুপারিশ করেন। কিন্তু ২৫ শে জুন স্পেন একটি আইন প্রণয়ন করে যাতে “গুরুতর বা দুরারোগ্য অসুস্থতা” বা “দীর্ঘস্থায়ী বা অক্ষম” অবস্থা রয়েছে এমন ব্যাক্তিদের নিজেদের জীবন শেষ করার জন্য সাহায্য চাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। বারো দিন পরে, মিঃ হার্নান্দেজ বেকসুর খালাস পান।
অনেকদিন থেকেই পশ্চিমের বেশিরভাগ জনমত সাহায্যপ্রাপ্ত মৃত্যুর পক্ষে। ২০০২ সালে স্পেনে এই সমর্থনের হার ছিলো ৬০% যা ২০১৯ সালে ৭১% এ দাঁড়ায় । ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ক্রমবর্ধমান উদার মূল্যবোধের বিস্তার স্বেচ্ছা মৃত্যুর পক্ষে সমর্থন বাড়ার কারণ। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও জনমত তৈরীতে ভূমিকা রেখেছে, বিশেষ করে বেবি-বুমার জেনারেশন, যারা তাদের পিতামাতার দুর্ভোগ প্রতিনিয়ত দেখেছে, তারা তাদের নিজেদের পছন্দমতো মৃত্যুর অধিকারের জন্য লড়াই করছে।
পরিবর্তন হয়েছে দ্রুত । সাহায্যপ্রাপ্ত মৃত্যু এখন কমপক্ষে এক ডজন দেশে আইনসম্মত বা অপরাধমুক্ত করা হয়েছে। অনেক দেশে আইন বা আদালতের চ্যালেঞ্জর ফলে বিষয়টি মুলতুবি রয়েছে। গত ৫ ই নভেম্বর পর্তুগালের সংসদ একটি সংশোধিত বিল অনুমোদন করে যা “গুরুতর, দুরারোগ্য এবং অপরিবর্তনীয়” অবস্থার সাথে যারা জীবন যাপন করছেন তাদের জীবন শেষ করতে সাহায্য পেতে অনুমতি দেবে (সাংবিধানিক আদালত মার্চমাসে একটি পূর্ববর্তী সংস্করণকে খুব অস্পষ্ট বলে ফেরত পাঠিয়েছিলো )। চিলি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি এবং উরুগুয়ের মতো অন্যান্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্যাথলিক দেশগুলিও মৃত্যুর অধিকার নিশ্চিত করার দিকে এগিয়ে চলেছে। বেলজিয়াম, কলম্বিয়া এবং নেদারল্যান্ডের সরকারগুলি গুরুতর অসুস্থ শিশুদেরও এর আওতায় এনেছে।
বছরের পর বছর ধরে সংগ্রামের পর, সক্রিয় কর্মী এবং রাজনীতিবিদরা অনিচ্ছুক বিধায়কদের পাশ কাটানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন। আমেরিকানরা ব্যালটের মাধ্যমে স্বেচ্ছা মৃত্যুর অধিকার নিশ্চিত করেছে, অস্ট্রেলীয় আইনসভাকে চেপে ধরে তা পাশ করিয়ে নেয়া হয়েছে, এবং কানাডা ও ইউরোপে তা আদালতের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। স্বেচ্ছা মৃত্যুর প্রবক্তারা জনসমর্থন দেখানোর জন্য জনসাধারণের মধ্যে পরামর্শ, প্রচারণা এবং আবেদন ব্যবহার করছেন। সহায়ক মৃত্যু বৈধ এমন দেশগুলির ক্রমবর্ধ্মান উদাহরণ প্রমাণ করেছে যে, দাদী, নানীকে হত্যা করাকে এই আইনের মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হবে বলে যে আশংকা করা হয় তার কোন ভিত্তি নেই। পরিবর্তনগুলি একসাথে হচ্ছে কারণ এক দেশের ক্যাম্পেইনাররা অন্য দেশের কৌশলীদের কাছ থেকে শিখছেন ৷
সহায়ক মৃত্যু এখনো পর্যন্ত ব্যপক হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার-সম্পর্কিত, এবং মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। তবে তা মৃত্যু সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলে দিচ্ছে। কিছু দেশে মানসিক ব্যাধি এবং স্মৃতিভ্রংশ এবং এমনকি বৃদ্ধ ব্যক্তি যারা বেঁচে থাকাকে ক্লান্তিকর মনে করেন তাদের মৃত্যুতে সহায়তা করা হচ্ছে। স্বেচ্ছা মৃত্যুর নানা উপায় বাতলে দিতে ইন্টারনেটে বেবী-বুমারদের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। বিষয়টির সুদূর প্রসারী প্রভাব চিন্তা করে স্বেচ্ছা মৃত্যুর অনেক প্রবক্তাও আশংকিত।
ত্রিশ বছর আগে সুইজারল্যান্ডের সর্বত্র সাহায্যকারী স্বেচ্ছা মৃত্যু অবৈধ ছিল। কিন্তু ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন রাজ্য “মর্যাদার সাথে মৃত্যু” আইন অনুমোদন করার মাধ্যমে বিষয়টির উদারীকরণের সূচনা করে। তবে ডাক্তার নয়, রোগীই (চিকিৎসক-সহায়তা মৃত্যু ) এর মূল প্রয়োগকারী। এই আইনের অধীনে প্রায় ২,০০০ লোক মৃতুকে বরণ করেছেন। কোন অন্যায় মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। আইনটি যুক্তরাষ্ট্রের ১০ টি রাজ্য এবং রাজধানী ওয়াশিংটনে বলবত আছে।
ওরেগনের আইনটি কিছু পরিবর্তন সাপেক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে কপি করা হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডে অরেগনের অনুরূপ আইন গত ৭ ই নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্য ২০১৭ সালে একই ধরনের আইন পাস করেছে । অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি রাজ্যের মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সবাই ভিক্টোরিয়ার অনুসরণ করেছে। ব্রিটেনে, অরেগনের মতো একটি বিল অক্টোবরে হাউস অফ লর্ডস দ্বিতীয় সংস্করণ পাস করেছে। কিন্তু আইনে পরিণত হওয়ার জন্য হাউস অফ কমন্স এবং সরকারের সমর্থনেরও প্রয়োজন হবে, যার সম্ভাবনা নেই বলে মনে হচ্ছে। যদিও তিন-চতুর্থাংশ ব্রিটেনবাসী মৃত্যুর অধিকারকে সমর্থন করে, কিন্তু সংসদ সদস্যদের মধ্যে এই সমর্থন মাত্র ৩৫%।
কিছু প্রচারক আদালতের শরণাপন্ন হয়ে আইনপ্রণেতাদের পাশ কাটাচ্ছেন। ফেব্রুয়ারী মাসে পেরুর সাংবিধানিক আদালত রায় দেয় যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডিজেনারেটিভ পোলিও আক্রান্ত এক মহিলাকে তার জীবন শেষ করতে সাহায্য করতে অস্বীকার করে, তার “মর্যাদা” এবং “স্বাধীন ইচ্ছার” অধিকার লঙ্ঘন করেছে। অস্ট্রিয়ার মতো বেশ কয়েকটি দেশ ২০১১ সালে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের একটি রায় কার্যকর করতে শুরু করেছে। এই রায় জনতাকে তাদের মৃত্যুর সময় এবং পদ্ধতি নির্ধারণকরার অধিকার দিয়েছে। ২০২০ সালে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত ঘোষণা করে যে, অন্যদের মরতে সাহায্য করার উপর নিষেধাজ্ঞা অসাংবিধানিক। উল্লেখ্য, “ডিগনিটাস জার্মানি”, একটি অলাভজনক সংগঠন যেটি মানুষকে স্বেচ্ছা মৃত্যতে সাহায্য করে। এমনকি আইনসভা বা আদালত সাহায্যপ্রাপ্ত মৃত্যুর দরজা খোলার পরেও, যারা এর সুবিধা নিতে চান তারা বড় বাধার সম্মুখীন হতে পারেন। ৬৮ টি রক্ষাকবচসহ প্রণীত ভিক্টোরিয়ার আইনে কিছু লোককে বাদ দেওয়া হয়েছে অথচ আইনটির করার উদ্দেশ্য ছিল তাদের সাহায্য করা । ডাক্তাররা তাদের রোগীদের সাথে সাহায্যপ্রাপ্ত মৃত্যু নিয়ে আলাপ করতে পারেন না , তাই অনেকে জানেন না যে এরকম একটি বিকল্প রয়েছে। কলম্বিয়া ১৯৯৭ সালে স্বেচ্ছামৃত্যুকে অপরাধ মুক্ত করে। কিন্তু এখন এই প্রথা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ব্যপকভাবে । ফলে কলম্বিয়ার অনেক ডাক্তার বিচারের ভয়ে এর সাথে জড়িত হতে অস্বীকার করেন। স্বেচ্ছা মৃত্যুর অনুমোদন বিরল এবং তা যে কোন সময় প্রত্যাহার করা হতে পারে।
এত কঠোরতা সত্ত্বেও, মৃত্যুর অধিকারের সম্প্রসারণ বিতর্কের উর্ধে নয়। কানাডার সুপ্রিম কোর্ট ২০১৫ সালের এক রায়ে ঘোষণা দেয় যে সহায়ক মৃত্যু (এমএআইডি) চিকিৎসার উপর নিষেধাজ্ঞা জাতীয় অধিকার সনদের লঙ্ঘন । এখন MAID যারা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুস্থতা বা অক্ষমতার শিকার সেসমস্ত কানাডিয়ানদের জন্য অনুমোদিত । বিশেষদিক হলো, অসহনীয় কষ্ট কি তা নির্ধারণ করার অধিকার রোগীদের দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালে, MAID এর জন্য লিখিত অনুরোধের মাত্র ৬% প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রতিবন্ধীদের স্বার্থ দেখেন এমন এডভোকেটরা শঙ্কিত যে সংশোধিত আইন প্রতিবন্ধীদের জীবনকে অবমূল্যায়ন করবে। এটা “আক্ষরিক অর্থে কল্পনাও করা যায় না” যে, জাতি, লিঙ্গ বা অন্য কোন সুরক্ষিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে MAID এর অনুমতি দেয়া হবে। বলেন সাহায্যপ্রাপ্ত মৃত্যুর বিরুদ্ধে প্রচারণাকারী চৌকশ আইনজীবী ডেভিড শ্যানন। অন্যরা যুক্তি দেয় যে, প্রতিবন্ধী আন্দোলনের ভিত্তি হল নিজের পছন্দ নিজেরাই করার স্বাধীনতা তৈরি করার মধ্যেই নিহিত।
বিরোধীরা এও আশঙ্কা করছে যে কানাডা হয়তো মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করার আগেই মারা যেতে সাহায্য করবে। বিরোধীদের যুক্তি হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যারা পর্যাপ্ত সমর্থন পান না তারা মৃত্যুকে বেছে নিতে পারেন কারণ সমাজ তাদের ব্যর্থ করেছে । তারা আশঙ্কিত যে নির্যাতন, বর্ণবাদ এবং দারিদ্র পর্যুদস্তদের জন্য এটি বিশেষভাবে সত্য প্রমাণিত হতে পারে। তবে, আমেরিকার থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী যারা সাহায্যপ্রাপ্ত মৃত্যু বেছে নেয় তাদের বেশীরভাগ মধ্যবিত্ত, শ্বেতাঙ্গ এবং শিক্ষিত। প্রবক্তারা যুক্তি দেখান যে, যারা মরতে চায় তাদের সমাজের ব্যর্থতার জন্য জিম্মি করা উচিত নয়।
২০২৩ সাল থেকে কানাডা শুধুমাত্র মানসিক রোগে আক্রান্তদের জন্য MAID অনুমোদন করবে। অন্যথায় এটির অনুমোদন করা বৈষম্যমূলক হবে বলে দাবী করা হয়। অনেক কানাডিয়ান এটিকে বিপজ্জনক বলে মনে করেন। তারা চিন্তিত যে, ডাক্তাররা আত্মহত্যার প্রবণতাকে প্রশ্রয় দিতে পারেন যা অনেক মানসিক রোগের লক্ষণ: কিছু গবেষণা অনুসারে স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত প্রতি দশজনের মধ্যে একজন আত্মহত্যার প্রবণতায় ভোগে। অন্যান্য সমালোচকরা প্রশ্ন করেন যে, মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসা এবং এর সম্পর্কে সামাজিক বোঝাপড়া এখনও এত প্রাথমিক পর্যায়ে ও মানসিক-স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলি যখন খুবই অপর্যাপ্ত তখন একজন রোগীর সম্ভাব্য সমস্ত চিকিত্সার চেষ্টা করা ছাড়া জীবন নেওয়ার চিন্তা সঙ্গত কিনা।
কুইবেক নিবাসী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং বায়োএথিসিস্ট মোনা গুপ্তা বলেন, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই একটি জটিল মানসিক অবস্থা কতটা গুরুতর হতে পারে তার অবমূল্যায়ন করেন। তারা মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে ধারণা পান জনপ্রিয় সংস্কৃতি থেকে। খুব কম লোকই গুরুতরভাবে আক্রান্ত কারো দেখা পেয়েছেন। জন স্কালি, যিনি কয়েক দশক ধরে গুরুতর হতাশা এবং পিটিএসডি নিয়ে বেঁচে আছেন এর সাথে ঐক্যমত প্রকাশ করেন। ৮০ বছর বয়সী মিঃ স্কালি একজন যুদ্ধ সংবাদদাতা হিসেবে যে ভয়াবহতা দেখেছেন তার আতংক তাকে এখন তাড়িয়ে ফেরে। তিনি বলেন, “এর কোন প্রতিকার নেই। উনিশটি শক থেরাপি, অগণিত ওষুধ এবং মনোরোগ রোগী হিসাবে ছয়টি কাজ শান্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে। “
মিঃ স্কালি বিশ্বাস করেন, “একমাত্র সাহায্য হলো”, যদি মারা যেতে সহায়তা করা হয়। তিনি এটিকে আত্মহত্যার চেয়ে অনেক বেশি মর্যাদাপূর্ণ পছন্দ হিসাবে দেখেন, যা তিনি দুবার চেষ্টা করেছেন এবং তার মতে এটি তার পরিবারের জন্য কম বেদনাদায়ক হবে।
অন্যান্য বায়োএথিসিস্টদের মতো, ডাঃ গুপ্তা মনে করেন যে, মানসিক ব্যাধিগুলিকে অন্যান্য অবস্থার মতো একই আলোতে দেখা উচিত । তিনি বলেন, ডাক্তারদের জন্য মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অনেকটা একই হবে: একটি আবেগপ্রবণ মৃত্যু-ইচ্ছা এবং একটি বিবেচিত ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য করা, এবং একজন রোগী মানসিকভাবে সক্ষম কিনা তা নির্ধারণ করা। এই ধরনের ঘটনা বিরল। সহায়ক মৃত্যুর অনুরোধকারীদের মধ্যে ২০২০ সালে নেদারল্যান্ডসে মাত্র ৮৮ জন মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে ১২% অনুরোধের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।
কানাডা নেদারল্যান্ডসের মতো একই ভুল করছে, মনে করেন থিও বোয়ের, একজন ডাচ নৈতিকতাবাদী যিনি একসময় তার দেশের স্বেচ্ছামৃত্যু আইনকে সমর্থন করেছিলেন। যেহেতু ডাচ ডাক্তাররা ২০ বছর আগে সাহায্যপ্রাপ্ত মৃত্যুকে বৈধ করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে স্বেচ্ছামৃত্যু “একটি ভয়ানক মৃত্যু কে প্রতিরোধ করার শেষ উপায়” থেকে “একটি ভয়ানক জীবন প্রতিরোধের শেষ উপায়” হয়ে উঠেছে।
স্বেচ্ছাসেবী ইথানেশিয়া হল মৃত্যুর শর্ট-কাট, যেমন সি-সেকশন হল জন্মের শর্ট-কাট। তিনি উল্লেখ করেন, নেদারল্যান্ডসে সামগ্রিকভাবে ২৫ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুকে সহায়তা করা হয়, কিন্তু কিছু শহরে এই সংখ্যা প্রতি সাতজনের মধ্যে একজনের মতো হতে পারে। যারা স্মৃতিভ্রংশ রোগী তাদের জন্য মৃত্যু পছন্দ করার বিষয়টি প্রায়শই অস্পষ্ট। ২০১৬ সালে গুরুতর অ্যালঝাইমার্স আক্রান্ত এক ডাচ মহিলা তার স্বেচ্ছামৃত্যুর সময় জেগে উঠেছিলেন এবং তিনি লড়াই করেছিলেন, তখন তার পরিবারকে তাকে চেপে ধরে রাখতে হয়েছিল। স্মৃতিভ্রংশ হয়ার আগে , তিনি স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য একটি লিখিত অনুরোধ করেছিলেন, এবং ডাক্তার অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন তার সেই পছন্দকে । ২০২০ সালে, ডাক্তারকে বেআইনি কাজের অভিযোগ থেকে খালাশ দেওয়ার পর, সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দেয় যে স্মৃতিভ্রংশ রোগীদের উপর স্বেচ্ছামৃত্যু প্রয়োগ করার জন্য ডাক্তারদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। যদিও তাঁরা আর মৃত্যুর বিষয়ে স্পষ্ট মতামত দিতে সক্ষম থাকেননা। নেদারল্যান্ডসে বছরে গড়ে এই জাতীয় প্রায় দুটি ঘটনা ঘটে।
পাশ্চাত্যে, সাহায্যপ্রাপ্ত মৃত্যু, মৃত্যু এবং মৃত্যুর সংস্কৃতির মাঝে পরিবর্তন আনতে সহায়তা করছে। ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ নাওমি রিচার্ডস বলেন, লোকেরা মৃত্যুর কথা বেশি বলছে, এমনকি এর স্ক্রিপ্টও তৈরী করছে। মৃত্যু এখন একটি নির্ধারিত ইভেন্ট হয়ে উঠছে। যা বার্ধক্য এড়ানো বা ভোগান্তি থেকে বাচার জন্য একটি নিয়ন্ত্রিত উপায় হয়ে উঠছে। ইনস্টাগ্রামের এই যুগে, একটি “শান্তিময় মৃত্যু” কল্পনা করা সম্ভব এবং এই চিন্তাকে যত্নের সাথে লালন করা হচ্ছে। কানাডিয়ান ডাক্তার এলেন উইবে জানান যে, তিনি মানুষকে “সৈকতে, বনে এমনকি পার্টির মাঝখানে” মরতে সাহায্য করেছেন। এই ধরনের মৃত্যু বিশেষভাবে আকর্ষণীয় মনে হতে পারে যখন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে, মৃত্যুর চিকিৎসা করা হয়েছে এবং লুকানো হয়েছে আর চলমান মহামারীর সময়ে অনেকে হাসপাতালে একা মারা গেছে।
যারা পিছনে রয়ে গেছেন, তাদের জন্য সাহায্যপ্রাপ্ত মৃত্যু আশীর্বাদ বা অভিশাপের মতো মনে হতে পারে। টম মর্টিয়ারের মতো কেউ কেউ, যিনি তার মামলাটি ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে নিয়ে গেছেন, তারা এই ভেবে ক্ষুব্ধ যে তাদের নিকটজনকে সময়ের আগেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে বেশিরভাগই সান্ত্বনা খুঁজে পান। হিদার কুকের ছেলে অ্যারন বল গত বছর ৪২ বছর বয়সে মেটাস্ট্যাটিক কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে স্বেচ্ছা মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেন। মিসেস কুক একজন মায়ের যন্ত্রণা ভোগ করেন। যিনি তার একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন। তবে তিনি এই ভেবে আনন্দিত যে তার ছেলে শান্তিতে, বাড়িতে, তার পরিবার দ্বারা বেষ্টিত হয়ে মারা গেছেন। হেদার বলেন, চিকিৎসা সহায়তায় মৃত্যু আমাদের জন্য একটি “উপহার” ছিল । “কিন্তু আমি বুঝি কেন মানুষ এটাকে ভয় পায়।”
– ইকোনমিস্ট অবলম্বনে।