ব্রহ্মাণ্ডে কেন খুব দ্রুত হারে গায়েগতরে বাড়ছে ‘রাক্ষস’, ‘মহারাক্ষস’রা? কল্পনাতীত ভাবে তারা আরও বেশি দৈত্যাকার হয়ে উঠছে কী ভাবে? এই প্রশ্নের জবাব মিলল সাম্প্রতিক গবেষণায়।
যা জানাল, ব্রহ্মাণ্ড বেলুনের মতো উত্তরোত্তর দ্রুত হারে চার দিকে ফুলেফেঁপে উঠছে বলেই তার ভিতরে থাকা রাক্ষসগুলি গায়েগতরে বেড়ে উঠতে পারছে কল্পনাতীত ভাবে। ব্রহ্মাণ্ডের ফুলেফেঁপে ওঠা থেকেই গায়েগতরে কল্পনাতীত ভাবে বেড়ে ওঠার রসদ পাচ্ছে রাক্ষস আর মহারাক্ষসগুলি। ১০০ বছরেরও আগে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের নির্যাসেই যার ইঙ্গিত লুকিয়ে ছিল।
সেই রাক্ষসগুলি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। আর মহারাক্ষসগুলি হল প্রতিটি ছায়াপথেরই প্রায় কেন্দ্রস্থলে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল। যারা তারা থেকে শুরু করে ব্রহ্মাণ্ডের সব কিছুই নাগালে পেলে টেনে এনে গিলে খায়। এমনকি আলোও তার নাগপাশ এড়াতে পারে না। বেরিয়ে আসতে পারে না গ্রাস থেকে।

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ। গবেষকদলে রয়েছেন আমেরিকার মানওয়ায় হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যান আর্বর-এর মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
কয়েকশো কোটি বছর আগে ব্ল্যাক হোলগুলির ধাক্কাধাক্কির ফলে তৈরি হওয়া তরঙ্গ পৃথিবীতে প্রথম ধরা পড়ে ২০১৫ সালে। আবিষ্কৃত হয় অভিকর্ষীয় তরঙ্গ। তার পর থেকে গত ছ’বছরে এমন প্রায় ডজনখানেক ঘটনার খবর পৌঁছছে আমেরিকায় বসানো ‘লাইগো’ এবং ইটালির পিসার কাছে ‘ভার্গো’ অবজারভেটরির ডিটেক্টরে।

কিন্তু তাতে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। দেখা গিয়েছে, ধাক্কাধাক্কির পর মিলেমিশে গিয়ে যে রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলগুলির জন্ম হয়েছে তারা কল্পনাতীত ভাবে দৈত্যাকার হয়ে উঠেছে। তাদের ভর এতটাই বেড়ে গিয়েছে যা কখনও হিসাবের মধ্যেই ধরেননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, আমাদের সূর্যের ভর যতটা তার ৪০ গুণের চেয়ে কিছুটা কম হতে পারে ব্ল্যাক হোলগুলির ভর, খুব বেশি হলে। কিন্তু গত ছ’বছরে তাঁরা জানতে পারেন এই ধারণায় বিস্তর গলদ রয়েছে। সূর্যের ভরের ৫০ গুণ এমনকি ১০০ গুণ ভারী ব্ল্যাক হোলও রয়েছে ব্রহ্মাণ্ডে।

এটা কী ভাবে সম্ভব হল? এত গায়েগতরে এত মহাদৈত্যাকার হয়ে উঠল কী ভাবে ব্ল্যাক হোলগুলি? কে তাদের শক্তি জোগাচ্ছে?

এতদিন এই প্রশ্নগুলির কোনও গ্রহণযোগ্য উত্তর মিলছিল না। এই গবেষণাপত্রেই প্রথম সেই উত্তর মিলল। জানা গেল, ব্ল্যাক হোলগুলি সেই রসদ পাচ্ছে ব্রহ্মাণ্ডের উত্তরোত্তর দ্রুত থেকে দ্রুততর হারে চার দিকে ফুলেফেঁপে ওঠা থেকে। ব্রহ্মাণ্ডের সেই প্রসারণই শক্তি জোগাচ্ছে ব্ল্যাক হোলগুলিকে। ১০০ বছর আগে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের নির্যাসেই যার ইঙ্গিত দেওয়া ছিল, জানিয়েছেন গবেষকরা। ব্রহ্মাণ্ডের এই প্রসারণ যে শুধুই ব্ল্যাক হোলগুলিকে গায়েগতরে খুব দ্রুত বাড়িয়ে দিচ্ছে, তা-ই নয়; আলোর শক্তিও নিংড়ে নিচ্ছে। আলোও তার শক্তি খোয়াচ্ছে।

প্রমাণ মিলল ব্রহ্মাণ্ডের রাক্ষস, মহারাক্ষসদের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা আরও বাড়ছে। কল্পনাতীত ভাবে তাদের মহাদৈত্যাকার হয়ে ওঠা আদতে ব্রহ্মাণ্ডেরই পরিণতি। আর সেই পরিণতির দিকে এগিয়ে যেতে সহায়ক হয়ে উঠছে ব্রহ্মাণ্ডের উত্তরোত্তর প্রসারণ। দ্রুত থেকে দ্রুততর হারে।

সূত্রঃ আনন্দ বাজার পত্রিকা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে