| আকবর হোসেন| লাল নীল বাত্তি নয়, লাল নীল পাসপোর্ট দেইখা আমার আশা ফুরাইছে। সবুজ থেকে লাল তারপর নীল। এ যেনো জীবনের বিভিন্ন ধাপ পার হবার নানা রঙের সংকেত। পাসপোর্ট নিয়ে বেশ টেনশনে ছিলাম। ফ্লাই করতে হলে ৬ মাসের মেয়াদ থাকা লাগে পাসপোর্টে, সে হিসেবে ১০ বছরের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হতে চলছিলো। বৃটিশ পাসপোর্ট অফিসে অনলাইন এপ্লিকেশন করলাম। ওমা, ১০ সপ্তাহ লাগবে অর্ডিনারী পাসপোর্ট আসতে। তাছাড়া আগের সব পাসপোর্টও জমা দিতে হবে। যেখানে আমার মেয়াদোত্তীর্ণ বাংলাদেশী পাসপোর্টও লাগবে। আমি আমার নামের মোহাম্মদ যা‘ কিনা এমডি ছিলো সেটাকে পুরোপুরি লিখে নাম পরিবর্তন করেছি। এ কারণে বাংলাদেশী পাসপোর্টেও পরিবর্তিত নাম থাকতে হবে। মহা মুশকিলে পড়লাম। এমডি মানে মোহাম্মদ। পদে পদে সেটি ব্যাখ্যা করা লাগে। সেজন্যেই এমডি কেটে মোহাম্মদ লিখলাম।

বাংলাদেশী পাসপোর্ট রিনিউ করতে বার্থ সার্টিফিকেট আনালাম। এখন আবার মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। অনলাইনে এপ্লিকেশন জমা দিলাম। বন্ধু বান্ধব অনেকের কাছ থেকে পরামর্শ নিলাম। তারা সবাই বললো অন্য পাসপোর্ট আছে সেখানে টিক দিলাম কেনো! শুধু এখনকার মেয়াদোত্তীর্ণের পথে বৃটিশ পাসপোর্ট জমা দিলেই হতো। তারা কেউ কেউ মশকারা করে বললো ইয়েস নো‘র উপরে তো সারা দুনিয়াই চলছে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট রিনিউ করে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট পেতে সময় লাগবে। বৃটিশ পাসপোর্টও ১০ সপ্তাহের আগে পাওয়া যাবে না অর্ডিনারী এপ্লিকেশনের কারণে। এখন কী করা! একটাই পথ অর্ডিনারী ক্যানসেল করে আরজেন্ট এপ্লিকেশন করতে হবে। যে পয়সা গেছে তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না্। পাসপোর্ট অফিসে আলাপ করে অর্ডিনারী বাতিল করতে চিঠি লিখতে হলো। অবশ্য এর আগেই ৭ দিনে পাসপোর্ট পাবার জন্য অনলাইনে আবেদন করে এপয়েন্টমেন্ট নেই এবং পে করি। সময়মতো লন্ডনের ভিক্টোরিয়াস্থ বৃটিশ পাসপোর্ট অফিসে হাজির হই। গাড়ি পার্ক করা নিয়ে এক বিড়ম্বনায় পড়লাম। উপায়ান্তর না দেখে পার্কিং টিকিট ছাড়াই গাড়ি রেখে পাসপোর্ট অফিসে ঢুকলাম। তবে একটি চিরকুট লিখে রাখি ডাশবোর্ডে – পার্কিং টিকিট সিস্টেম কাজ করছে না মর্মে। প্লেনে ঢুকার মতো সিকিউরিটি চেক হলো তারপর সিরিয়েল অনুযায়ী কাউন্টারে গেলাম। ভদ্র মহিলাকে খুব টায়ার্ড দেখাচ্ছিলো। তবে মুখে এক টুকরো হাসির রেখা ফুটানোর চেষ্টা।

গুড আফটারনুন। হাউ আর ইউ ইত্যাদি বলে কাগজপত্র বের করলাম এবং একে একে তার সামনে জমা দিলাম। পাসপোর্ট অফিসারও এমডি থেকে মোহাম্মদের ব্যাখ্যা শুনলেন আমার কাছ থেকে। বুকে তখনো দুরু দুরু করছে না জানি বাংলাদেশি পাসপোর্টের কোন প্রসঙ্গ আসে কিনা ভেবে। কারণ সেখানে তো সংশোধন করা হয়নি। সাথে করে অবশ্য বাংলাদেশী পাসপোর্ট রিনিউ এপ্লিকেশনের কপি নিয়ে গিয়েছিলাম। ভদ্র মহিলাকে শুধু পুরনো বৃটিশ পাসপোর্টই জমা দিতে হয়েছে। সাথে নাম পরিবর্তনের ডিড পল। বাংলাদেশী পাসপোর্টের কোন প্রসঙই আসেনি। কাজের ফাঁকে এটা সেটা কথা হলো। হাউ ডাজ দ্যা ওয়েদার লুক আউটসাইড জানতে চাইলেন। বর্তমানে খুব ব্যস্ত সময় যাচ্ছে জানালেন। মনে হচ্ছে যেনো সবারই পাসপোর্টের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে এক সাথে। কোভিডের রিলাক্সের সুযোগে বাইরের দেশে যেতে সবাই যেনো উদগ্রীব! ফাঁকে গাড়ি পার্কিংয়ের ঘটনার কথা বললাম। উপদেশ দিলেন যেনো আগামীতে ট্রেনে আসি। তিনি কাজ শেষ করলেন এবং হাতে একটি রিসিট ধরিয়ে দিয়ে আমাকে আশ্বাস দিলেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে স্পেশাল ডেলিভারীতে আমার নুতন পাসপোর্ট পাবো এবং অন্যান্য ডকুমেন্টগুলোও ফেরত পাঠানো হবে।

অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে পাসপোর্ট অফিস থেকে বিদায় নিয়ে হন্যে হয়ে গাড়ির দিকে ছুটলাম। মনে একটা বিরাট প্রশান্তি পেলাম ঠিকই কিন্তু পার্কিংয়ের অবস্থা কী, সে শংকা তখনো মনে আছে। না উইর্ডস্ক্রীনে কোন টিকিট নেই। আলহামদুলিল্লাহ!যথারীতি পাসপোর্ট ঘরে চলে আসলো তিন দিনের মাথায়, এক সপ্তাহ লাগেনি। তারপর আসলো পুরনো পাসপোর্ট এবং ডিড পলের কপি। এখন ফ্লাই করতে পারবো ভেবে মনে ভীষণ আনন্দ লাগছে। তবে এর আগে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড‘ সিল লাগাতে হবে। চলে গেলাম সরাসরি এম্বেসিতে অনলাইন এপ্লিকেশন নিয়ে। লাইনে দাঁড়ালাম, টিকিট নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম, কাগজপত্র জমা দিলাম, ফি পে করলাম। এক সপ্তাহ পর পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। সেই ফাঁকে বাংলাদেশী পাসপোর্ট রিনিউ অর্থাৎ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের এপ্লিকেশন জমা দিলাম। ফিংগার প্রিন্ট ও ছবি নেয় হলো। ফি জমা দিলাম। এখানে দু‘ঘন্টার মতো সময় চলে গেলো।

বৃটিশ পাসপোর্ট অফিসে লেগেছিলো আধাঘন্টার মতো। সে যাক পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর মোবাইল নাম্বারে পাসপোর্ট কালেকশনের তারিখ পাবো। যথারীতি পুলিশ ভেরিফিকেশন অফিসারের ম্যাসেজও পেলাম। কথা হলো ফোনে অফিসারের সাথে। কারণ তিনি ফোনের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আশা করি বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেতে আর কোন অসুবিধা হবে না। লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের সেবার মানের উন্নতি হয়েছে। তবে আরো কিছু পরামর্শ আছে যা হয়তো অন্য কোন সময় লিখবো। একটি কথা শুধু বলতে চাই। তা হচ্ছে কনসুলার সার্ভিসটা যদি হাই কমিশনের বেইজমেন্টে না হয়ে ফার্ষট ফ্লোরে ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে অনেক ভালো হতো এবং লোকজনের বেশ আরাম হতো। তাছাড়া অন্য দেশের নাগরিকেরাও ভিসার জন্য আসেন তারাও আরো কমফোর্ট ফিল করতেন। একটি ফটো কপি মেশিনের ব্যবস্থা থাকলে আরো ভালো হতো। লোকজন সানন্দে পে করতো যারা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের ফটো কপি সাথে আনেননি। সার্ভিস আরো কিভাবে দ্রুত করা যায় সেদিকে কর্তৃপক্ষ নজর দিলে উপকৃত হবেন অনেকে। একটি পরামর্শ: নামের আগে মোঃ অথবা এমডি লিখবেন না। লিখলে পুরো মোহাম্মদ লিখবেন। কারণ মোঃ অথবা এমডি বাংলাদেশের সবার জানা থাকলেও দেশ থেকে বের হলে এর মর্মার্থ পদে পদে ব্যাখ্যা করা লাগবে যে কারণে অযথা বিড়ম্বনায় পড়বেন। আজ এখানেই থাক। নিরন্তর শুভ কামনা সবার জন্যে।

আকবর হোসেন| টুইকেনহাম, ওয়েষ্ট লন্ডন |২১ নভেম্বর ২০২১|akbargermany92@gmail.com

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে