১৯৯৩ সালের অক্টোবরমাসে আমি লন্ডনের একটি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবা-মা এবং তারপর চার মাসের ভাই আগের বছর পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন।  আমার বাবা ওয়ার্ক ভিসা পাওয়ায় তারা পাকিস্তান থেকে ব্রিটেনে অভিবাসী হোন।

পরের বছর, তিনজনই স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসের অনুমতি পান।  এর এক বছর পরে, তারা ব্রিটিশ নাগরিক হন।

এই সঙ্গে, বাবা মার কারণে আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অর্জন করেছি।  আমি এখানে জন্মগ্রহণ করেছি । তাই মন-প্রাণ দিয়েই  আমি ব্রিটিশ ছিলাম এবং আছি।

আমি উত্তর লন্ডনে বেড়ে উঠি। প্রাথমিক শিক্ষা নেই বার্নেটের একটি স্কুলে। তারপর পাশের মাধ্যমিক স্কুলেও গিয়েছিলাম।

অবশেষে, আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন নানা খন্ড চাকুরি  করার মধ্য দিয়ে  লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হই।

এরপর আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার কর্মজীবন শুরু করি।  আমার আশা ছিলো এই মাধ্যমে দক্ষিন এশিয়া এবং এখান থেকে আগতদের সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারণা আছে  আমি তা বদলাতে পারবো।

উনজেলা খান লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেছেন – কিন্তু সরকারের নতুন বিল তার ব্রিটিশ পাসপোর্ট থেকে কোন সতর্কতা ছাড়াই বঞ্চিত করতে পারে যদি হোম অফিস দাবি করে যে তিনি জনগণের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

আমার মতো প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ আছেন,  যাদেরএখানে জন্ম এবং বেড়ে ওঠার একই গল্প রয়েছে। এরা যুক্তরাজ্যে কাজ করছেন এবং নিজেদের ব্রিটিশ পাকিস্তানি হিসাবে পরিচিত করেছেন। এই পরিচয়ের শেষে পাকিস্তানি থাকা সত্ত্বেও, এর ‘ব্রিটিশ’ অংশটিকে কম বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে না। আসলেই কি তা-ই?  

যদিও মাঝে মাঝে মনে হয় যেন আমরা অবাঞ্ছিত এখানে। আমাদের জ্ঞান এবং বিশ্বের সাথে আমাদের পরিচয় এই দেশটির মাধ্যমেই।

এমনকি যদি আমরা আমাদের সংস্কৃতির সাথে আরও সংযোগ অর্জনের জন্য আমাদের নিজ দেশগুলিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই, দিনের শেষে আমরা ব্রিটিশ নাগরিকই, তাই না?

কিন্তু আমরা যতটা ব্রিটিশ পাকিস্তানী বা ব্রিটিশ বাংলাদেশী, ব্রিটিশ যে কোন কিছু কে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করি, শিরোনামের দ্বিতীয় অংশটি  আমাদের বিরুদ্ধে একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এটি  আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি যে আমরা আসলে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক।  

এর কারণ যদিও আমি এখানে জন্মগ্রহণ করেছি, আমি কেবল তখনই আমার নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হতে পারি যদি আমি অন্য দেশের নাগরিক হতে পারি।  আমার ক্ষেত্রে? আমাকে পাকিস্তানে নির্বাসিত করা হবে। 

জুলাই মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের প্রস্তাবিত এবং গত মাসে আপডেট করা ধারা ৯ অনুযায়ী এখানে জন্মগ্রহণ করা এবং বড় হওয়া সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র দপ্তর কোনরকম বিজ্ঞপ্তি প্রদান না করে আমাকে আমার নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করতে পারবে।

এর অর্থ, যদি আমি বিদেশে যাই এবং সরকার আমার সাথে যোগাযোগ করতে অক্ষম হয়, বিমানে ওঠার আগে আমাকে বলা হবে যে আমার পাসপোর্ট আর বৈধ নয়।

শামিমা বেগমের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পরিচিত আইনজীবী মোহাম্মদ তাসনিম আকুঞ্জি মাই লন্ডনের সাথে কথা বলার সময় ব্যাখ্যা করেন নতুন ধারাটি আমার মতো ব্রিটিশ নাগরিককে কীভাবে প্রভাবিত করে। 

তিনি বলেন: “বিদ্যমান আইনটি হ’ল যদি স্বরাষ্ট্র সচিব আপনাকে জনকল্যাণের জন্য অনুকূল মনে না করেন, এবং আপনাকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করতে চান, তবে তাদের আপনাকে এই সিদ্ধান্তের একটি নোটিশ পাঠাতে হবে  যেখানে ব্যখ্যা করা হবে কেন আপনার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে।  

” এখন, নতুন ধারা অনুযায়ী, তাদের আপনাকে আর আপনার নাগরিকত্ব বাতিল করা সম্পর্কে ওয়াকেবহাল করতে হবেনা। আপনি যখন বিমানে ওঠার চেষ্টা করবেন তখনই আপনাকে জানানো হবে এবং আপনি অবগত হবেন যে, আপনার ব্রিটিশ পাসপোর্ট আর কার্যকর নেই।”

সরকার অবশ্য বলেছে যে, যারা বিনা নোটিশে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হবেন তাদের আপিল করার অধিকার রয়েছে, তবে মিঃ আকুঞ্জি বলেছেন যে, কিছু সমস্যা রয়েছে সরকারের এই বক্তব্যে।

তিনি বলেন: “সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য আপনার একটি নোটিশের কপি প্রয়োজন। যদি আপনার কাছে  তা না থাকে তবে আদালত দাবি করবে যে আপনি প্রমাণ করুন যে আপনাকে আসলে নাগরিকত্ব বঞ্চিত করা হয়েছে।”

“আপনাকে সেই প্রমাণ অর্জন করতে হবে এবং আপিল করার আগে আদালতে তা জমা দিতে সক্ষম হতে হবে।” যদি নোটিশই না থাকে তাহলে আপনি কিসের ভিত্তিতে আপীল করবেন?

উপরন্তু, যদিও কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে এখানে জন্মগ্রহণ করা আপনাকে আপনার মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি কম রাখবে, মিঃ আকুঞ্জি  বলেন, আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে এর কোন নিশ্চয়তা নেই।

তিনি বলেন: “এখানে জন্মগ্রহণকারী বা নাগরিকত্ব অর্জনকারী উভয় ব্যক্তির নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া যেতে পারে, এখানে জন্ম নেওয়া বা না নেয়া এই বিল অনুযায়ী তাতে কিছু যায় আসেনা।”

দ্য গার্ডিয়ান-এর মতে, স্বরাষ্ট্র দপ্তর বলেছে যে: “ব্রিটিশ নাগরিকত্ব একটি বিশেষ সুযোগ, অধিকার নয়।”

” নাগরিকত্ব বঞ্চনা তাদের জন্য সংরক্ষিত যারা যুক্তরাজ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে বা যাদের আচরণে সমাজের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।”

“জাতীয়তা এবং সীমানা বিল আইন সরকারকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এমন ব্যাক্তিদের সরসরি এসম্পর্কে নোটিশ সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত করবে যেখানে নোটিশ দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়, উদাহরণস্বরূপ, যদি ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের কোনও উপায় না থাকে।”

সুতরাং এর মানে হল যতক্ষণ আমি একজন ভাল অভিবাসী, আমি কেবল ততক্ষন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে থাকতে পারবো?”

যাইহোক, যদি আমি সাদা হতাম, এর ফলে আমার আরেকটি জাতীয়তা পাওয়ার সম্ভাবনা কম হত তবে আমি জনগণের জন্য হুমকি হই বা না হই আমার নাগরিকত্ব বজায় বজায় থাকবে।   

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে