বাড়ি কমিউনিটি হৃদয়ে মনোয়ার

হৃদয়ে মনোয়ার

73
0

তিনটি বছর কেটে গেলো। আজ আমি ইউকেতে, মামা নেই। হ্যাঁ, মামা থাকলে হয়তো আসা হতোনা; এই দেশের কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা হই এটা মামা কখনোই চাননি। আজ হাড়ে হাড়ে টের পাই কেন মামা চাইতেন না তাঁর কাছের কেউ এদেশে এসে কষ্ট করুক!

তিন বছর আগে আজকের এইদিনে সকালেই খবর আসে মামা নেই,আর বেঁচে নেই আমাদের ছোট মামা! (Monowar H Badrudduza ) আমার মামা ছিলেন,আমার গার্ডিয়ান,আমার আদর্শ, আমার প্রিয় ব্যাক্তিত্ব,আমার সুখ দুঃখ শুনার একমাত্র মানুষ।

আমরা ভাইবোন, সব কাজিন মিলে সবার কথা আমি একাই বলতাম মামার সাথে। মামার আচরণ সবসময়ই বন্ধুসুলভ হলেও সবাই মামাকে ভয় পেত! যদি হঠাৎ একটা ধমক দিয়ে বসেন; সেই ভয়েই কেউই মামার সাথে ফ্র্যাংকলি কথা বলতনা। মাধ্যম আমি। নিজের এলাকার আত্মীয়/অসহায়, মামার সার্কেলের বেশির ভাগ মানুষের সাথে আমিই কথা বলতাম। মামার কাজে হোক আর তাদের কাজে হোক।

ইচ্ছে ছিল শেষ বয়সটা নিজের বাড়িতে কাটাবেন।তা আর হলোনা। প্রতিবছর দেশে আসার সময় বিমানে উঠেই ফোনকল দিয়ে বলতেন “মামাই দু’এক মিনিটের মধ্যে বিমান ছেড়ে দিবে,সকাল ৯/১০/১১ টায় পৌছাবো, সিলেটে ফ্লাইট হলে বলতেন এয়ারপোর্টে কাউকে থাকতে হবেনা আমি চলে আসতে পারব,ঢাকায় হলে বলতেন ফাহমিদ ভাই/মোহসিন ভাই আসবেন ; চিন্তা করোনা। আর বাড়িতে এসে যেন তোমার বড় মামা মামী,আম্মি-আব্বু,খালাম্মা-খালু,আন্টি সবাইকে পাই। ছোট মামা জানতেন, ছোট মামা বলছেন আর আমি ঐ কাজকে অবহেলা করব তা হবেনা।সবাইকে নিয়ে উপস্থিত থাকব। যে কয়দিন উনি সিলেটে থাকবেন সে ক’দিন তাঁর বাড়িতে সবাইকে থাকতে হবে।এটাই ছিল উনার নিয়ম।

তিনটা বছর কেটে গেছে,একটা সেকেন্ড এর জন্যেও আমি মামাকে ভুলিনি।ভুলতে পারিনি। যতবার ওয়াটস এপ /মেসেঞ্জারে যাই মামার মেসেজগুলা পড়ি।রেকর্ড গুলা শুনি।মৃত্যুর আগে সবকিছু গুটায়ে যেতে পারলেও অনেক অনেক কষ্ট দিয়ে গেছেন লন্ডনে উনার বন্ধুদের (বয়সে ছোট বড় ভাই,ফ্রেন্ড,কলিগ,পরিচিত)। আমাদের দুর্ভাগ্য ছিল আমরা কাছ থেকে মামাকে দেখতে পারিনি।

অথচ আমরা বর্তমানে যেই অবস্থানে আছি,হোক ছোট না হয় বড় পুরোটাই ছোট মামার কষ্টের ফসল। ভাইবোন দুইজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, এর পেছনে ছোট মামার অবদান সব থেকে বেশি। ফ্যামিলি/আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা শিখেছিই ছোট মামার কাছ থেকে।ম্যাটারনাল ফ্যামিলির আজকের এতো সুন্দর বন্ডিংটাই ছোট মামার জন্যে।নানা নেই,নানু নেই,মা নেই অথচ এখনো আমরা সবাই নানুবাড়িতে যাই,থাকি। এসব ছোট মামার অবদান।প্রতি কুরবানী ঈদে মামার বাড়িতে থাকতে হবে এটাই ছিল তাঁর আবদার।আর কেউ না থাকলে আমি থাকতাম ই।

আমার রক্তের সাথে, শিরায় শিরায় মিশে আছে ছোট মামার অবদান। আমার সময় যায়না; রাত ভোর হয়, ভোর বিকেল হয় আবার বিকেল রাত হয় ছোট মামা আর আম্মাকে ভেবে। প্রতিদিনই মনে হয় এই বুঝি আম্মা ফোন দিচ্ছেন তার ভাইয়ের খবর নিতে; তোর মামার কোনো খবর জানস।অথবা মামা ওয়াটস এপ করছেন মামাই,বড় আপার শরীরের কি অবস্থা এখন। দুইটা মানুষ যেন জীবনের সব সুখ দুঃখ কেড়ে নিয়ে চলে গেলেন। আম্মার প্রতিটা সেকেন্ডের দোয়া ছিল “আল্লাহ আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আমার ভাইটাকে সুস্থ করে দাও”। কিন্তু ছোট মামাই আগে চলে গেলেন,তার ঠিক ৫ মাস পর আম্মাও।

আমার ছোট মামা আর আম্মার জন্য দোয়া চাই।আল্লাহ যেন জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করেন।
মাকসুদা চৌধুরী, লন্ডন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে