১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের প্রারম্ভেই বলেছিলেন “ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি”। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রথম বাক্যের সঙ্গে প্রতিধ্বনি করে আমিও বলতে চাই, দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমার লেখাটি শুরু করছি। আমার আজকের লেখার প্রসঙ্গ হলো লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নির্বাচন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন। এ দুটো প্রসঙ্গকে বিনিসুতোর মালায় গাঁথার চেষ্টা থাকবে। আগেভাগেই বলে রাখি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার বা হেয় করার কোনোরকম বাসনা আমার নেই। আমাদের চারপাশের অনেক কিছু অবলোকন করার পর মনে হলো সময় এসেছে এ দুটো প্রসঙ্গ সম্পর্কে আমার মতামত অন্যদের জানানো। আর তাই আজকের এই লেখার উদ্যোগ। আমার মতামতের সঙ্গে আপনারা যে সহমত পোষণ করবেন সে প্রত্যাশাও আমি করছি না।

লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব সংক্ষেপে এলবিপিসির আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের নিবার্চনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি ইমেইল, টেক্সট মেসেজ এবং ফোন কল পেয়েছি। ভালোই লাগছে অন্তত নির্বাচনকে ঘিরে কেউ কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করছেন। তবে দুঃখের বিষয় হলো গত দুবছরের প্যানডেমিকের পুরো সময়টাতে এলবিপিসির হাতেগোনা চার – পাঁচ জন সদস্য ছাড়া কেউই আমার খোঁজ খবর নেননি। তবে নিয়মিতভাবে আমার খবর নিতেন, এখনও নেন, চ্যানেল এস এ আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও বন্ধু শহিদুল ইসলাম সাগর, তৌহিদ শাকীল আর ডা: জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার। যেহেতু মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত, কিমোথেরাপি চলছে। তাই সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে ফোন পেলে ভালো লাগতো। লন্ডনের বাংলা টিভি চ্যানেলগুলোতে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোভিড আক্রান্তদের অভিজ্ঞতা জানার জন্য অনেকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। আমিও করোনা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নয়দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছি। মহান রাব্বুল আল আমিন আমাকে নতুন জীবন দান করেছেন। স্বচক্ষে দেখেছি আমার পাশের আর সামনের রোগী মারা যাচ্ছেন, দেখেছি তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কান্না ও আহাজারি। আমার এসব অভিজ্ঞতার কথা কোনো সাংবাদিক বা উপস্থাপক জানতে চাননি। কে জানে আমার জ্ঞান, যোগ্যতা কম বলে এবং আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ বলেই আমার কথা শোনার আগ্রহ হয়তো কারোর নেই? তবে ২০২১ সালে আমি তিনটি ‘টক শো’তে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। একটি চ্যানেল এস এর “নিউজ টক এ” আর দুবার “মৃধা শোতে”। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রিয় সহকর্মী কামাল মেহেদী ও রেজাউল করিম মৃধার প্রতি।

এলবিপিসির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোনো কোনো প্রার্থী নির্বাচনে বিজয়ী হতে নানা বিশেষণে ভোটারদের সম্মোধন করছেন। কয়েকটি নমুনা এখানে তুলে ধরলাম। ” আপনি জাতির শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তান”, “আপনি সাংস্কৃতিক জগতের অনন্য তারকা”, “আপনার মতো অভিজ্ঞ সাংবাদিককে নিয়ে এগিয়ে যাবো” ইত্যাদি ইত্যাদি। আরে ভাই, আপনি যদি যোগ্য প্রার্থী হয়ে থাকেন, তাহলে এমনিতেই ভোট পাবেন। এসব তোষামোদী শব্দ ব্যবহার করে কেনো নিজের যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন? কেনো নিজেকে খাটো করছেন? অনুরোধ করছি অনর্থক এধরণের শব্দ ব্যবহার করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কারণ আপনার সম্মান মানে আমাদের সবার সম্মান। আরেকটি বিষয় এখানে না বলেই পারছি না। সম্প্রতি একজন বাঙালি নারী ব্যারিস্টার কিউ সি হয়ে আমাদের বাঙালি – বাংলাদেশী কমিউনিটির মুখ উজ্জ্বল করেছেন। অভিনন্দন তাঁর প্রতি। কোনো কোনো সাংবাদিক এ নিয়ে খবর করেছেন – “সিলেটি কন্যার সাফল্য”। অতীতেও দেখেছি রেডব্রিজ কাউন্সিলে একজন বাঙালি নারী ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হবার পর তাঁকে নিয়েও কেউ কেউ খবরের শিরোনাম করেছিলেন “সিলেটি কন্যার সাফল্য” বলে। “বাংলাদেশী কন্যার সাফল্য” বলতে আপনাদের এতো আপত্তি কেনো? জাতীয় গৌরবকে কেনো আঞ্চলিক গৌরবে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছেন? কয়দিন আগে গ্রুপে একজন সাংবাদিক লিখেছেন “নোয়াখালীর কাদের মির্জা এবং “সিলেটের পররাষ্ট্র মন্ত্রী”। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন কেনো আপনারা কূপমন্ডকতার পরিচয় দিচ্ছেন? আমরা সবাই যার যার জেলা নিয়ে গর্বিত। তাই বলে সাংবাদিকতায় পুরো দেশকে হাইলাইট না করে স্বীয় জেলাকে প্রাধান্য দেয়া কি জাত সাংবাদিকের কাজ? আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে আপনারা জেনেশুনেই কি সর্বজনীনতাকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছেন? আমার বিশ্বাস এধরণের সাংবাদিকতা অনেকেই পছন্দ করেন না। হয়তো সাহস করে বলতে পারছেন না। তাই বিনীত অনুরোধ এ ধরনের শিরোনাম লিখে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন রেখা টানার অপচেষ্টা করবেন না। ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলবো ভোট দেয়ার আগে অনুগ্রহ করে এসব মাথায় রাখবেন। সাংবাদিকদের দায়িত্ব “সিলেটি – নন সিলেটি” বিষয়টি চিরতরে কবর দেয়া। তাকে জিইয়ে রাখা নয়। আশা করবো এলবিপিসির কর্তা ব্যক্তিরা এদিকে নজর দিবেন। এসব দেখলে, পড়লে ভীষণ কষ্ট পাই। মনে হয় এলবিপিসির সদস্যদের মাঝে এখনও ঐক্যের বিস্তর ঘাটতি রয়েছে!

দেশে – বিদেশে যারপরনাই সরকারী – বেসরকারীভাবে মহা ধুমধামে পালিত হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব। বিশেষ করে বাংলাদেশে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের আয়োজন চোখে পড়ার মতো। আর কেনোইবা হবে না। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর বলে কথা। আর এই উৎসবের কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের আপামর জনসাধারণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে। যাঁর নেতৃত্বে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমাদের বীর মুক্তি সেনারা বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে পেয়েছিলেন স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ, প্রাণের বাংলাদেশ। তাই সংগত কারণেই সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবে বঙ্গবন্ধুকে প্রাধান্য দেয়াটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যুদ্ধের পুরোটা সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিব নগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। তাজউদ্দীন আহমদের বড়ো মেয়ে শারমিন আহমদের লেখা “তাজউদ্দিন আহমদ, নেতা ও পিতা” বইয়ের ৬৪ নম্বর পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, ” মুজিব কাকু পাকিস্তান কারাগারে বন্দী। তারপরও স্বাধীনতার যুদ্ধ থেমে থাকেনি। হুঁশিয়ার কাণ্ডারির মতোই আব্বু ধরেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের হাল। সে কারণেই পাকিস্তান সরকার আব্বুকে তাদের এক নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিল”।

অবাক কান্ড! দেশে – বিদেশে সরকারীভাবে আয়োজিত সুবর্ণজয়ন্তীর কোনো উৎসবেই তাজউদ্দীন আহমদের নাম কোনোভাবে উচ্চারিত হয়নি। হতে শুনিনি। ঠিক একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারের নাম উঠে আসেনি। লন্ডন থেকে যিনি বহির্বিশ্বে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন, সেই আবু সাঈদ চৌধুরীর নাম কাউকে মুখে আনতে শুনিনি। যুদ্ধপরবর্তী কিংবা পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে এঁদের ভূমিকা যাই হোক না কেনো, তাই বলে তাঁদের একাত্তরের ভূমিকা আমরা ভুলে যাই কিভাবে? কেনো আমরা এতো অকৃতজ্ঞ? শুধু কি তাই? সুবর্ণজয়ন্তীতে সম্মান জানানো হয়নি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু বলে খ্যাত, হোসেইন মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীকে, শের- ই বাংলা এ কে ফজলুল হককে এবং মাওলানা ভাসানীকে। যাঁরা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্যে আজীবন লড়ে গেছেন। তাঁদের সবার প্রতি যে অবমাননা প্রদর্শন করা হয়েছে আমি মনে করি তা সত্যিই লজ্জার বৈকি। মনস্তাপের বিষয় হলো এ নিয়ে এলবিপিসির কোনো সাংবাদিককে কথা বলতে অথবা লিখতে দেখিনি। সাংবাদিক বন্ধুদের নিঃশ্চুপ থাকার ব্যাপারটি একদিকে আমাকে যেমনি বিস্মিত করেছে, অন্যদিকে ঠিক তেমনি করেছে পীড়িত।

ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয়দের কেউ কেউ দাবি করছে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিলো নাকি পাক – ভারত যুদ্ধ! ভারত নাকি আমাদের বিজয় এনে দিয়েছে! তাদের ধৃষ্টতা দেখে অবাক হতে হয়। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ বিশেষ করে কৃষক সমাজ যদি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়তেন, তাঁরা যদি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় না দিতেন, তাঁদের খাবার সরবরাহ না করতেন, লুকিয়ে থাকার ব্যবস্থা না করে দিতেন, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা না করতেন, তাহলে নয়মাসের পরিবর্তে দীর্ঘ সময় লেগে যেতো স্বাধীনতা অর্জনের। সে সময় এক পর্যায়ে উত্তর ভারতে পাকিস্তানিদের বিমান হামলার পর ভারত ৩রা ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত হয়েছিল। আর তার তেরো দিনের মাথায় বাংলাদেশিদের কাছে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। তবে কি ধরে নিবো আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ছিল ব্যর্থ? ভারত কেবল তেরো দিন যুদ্ধ করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে? এসব কথা ভাবলে একদিকে যেমন হাসি পায়, অন্যদিকে রাগে, ক্ষোভে শরীরের ভেতর আগুন ধরে যায়। অথচ এনিয়ে বাংলাদেশে কিংবা ব্রিটেন প্রবাসে তথাকথিত গৃহপালিত বুদ্ধিজীবীদের কিংবা সাংবাদিকদের প্রতিবাদ করতে শুনিনি। বরং স্বাধীনতা পদক, একুশে পদকসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করার জন্য আজ এদের সবাই তাদের বক্তৃতায়, লেখালেখিতে যেভাবে সরকারের পদলেহন করে আওয়ামীলীগের এবং ভারতের বন্দনা করে চলেছে তা নতুন প্রজন্মের জন্য শুধু দুর্ভাগ্যকেই আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। কোনো আশার আলো দেখাচ্ছে না। এলবিপিসির সদস্যরাও এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন কেনো তাও বোধগম্য নয়। হ্যা, আমরা জানি সে সময় ভারত বাংলাদেশী শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলো, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়েছিলো, খাবার, অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল। জানি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভে তাদের অবদান রয়েছে। তবে সে সময় বোঝা না গেলেও বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ভারত নিজেদের স্বার্থেই তখন বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। ফলে ভারতের কাছে আমাদের চির কৃতজ্ঞ থাকার দরকার আছে বলে আমি অন্তত মনে করি না। চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ দেখানো তখনই যেতে পারে, যখন দুদেশের স্বার্থ অভিন্ন হবে। তবে উভয়দেশের স্বার্থের জায়গায় সংঘাত থাকলে চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ দেখানো চরম ভুল হবে। এলবিপিসির মধ্যে কি এমন কোনো অগ্নিগর্ভ সাংবাদিক আছেন যিনি এ নিয়ে কথা বলতে ভবিষ্যতে এগিয়ে আসবেন? মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের কৃষক সমাজের অবদানের কথা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কি তুলে ধরা সরকারের উচিত ছিল না? অনুতাপের বিষয় সাংবাদিকরাও এ ব্যাপারে নীরব ভুমিকা পালন করছেন।

১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল কভেন্ট্রি সম্মেলনে “অ্যাকশন কমিটি ফর দ্যা পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইন ইউ কে” নামের সংগঠনের কার্য পরিচালনার জন্য গঠিত পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্য, শেখ আব্দুল মান্নান বেঁচে থাকালীন বাংলা টিভি কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ” যুদ্ধ শেষ হবার পর মানুষ কেবলই সেনাপতির কথা মনে রাখে। সাধারণ সৈন্যদের কথা কেউ মনে রাখে না”। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। তাঁর সেদিনের মহা মূল্যবান বাণী আজ সত্যে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা সবাই শুধু বঙ্গবন্ধুকেই স্মরণ করছি। সাধারণ সৈন্যদের অবদানের কথা কেউ বলছি না।

এলবিপিসির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাংবাদিক বন্ধুরা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে যেমনি হুমড়ি খেয়ে পড়েন, আশা করি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ বিকৃতি করতে চাইলে তার বিরুদ্ধেও তড়িৎ সোচ্চার হবেন। আমার বাড়িতে ডাকযোগে নিয়মিতভাবে একটি সংবাদ পত্র আসে। সংবাদ পত্রটির গত সংখ্যার শেষের পাতায় বাংলাদেশিদের অহংকার, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এর “চ্যাম্পিয়ন অব গ্লোবাল চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড ” অর্জনের কথা ছাপা হয়েছে। এ সংবাদটি কি প্রথম পাতায় ছাপা যেতো না? অথচ সম্প্রতি আমাদের কমিউনিটির কয়েকজন বিশিষ্টজনের “ব্রিটিশ কারী অ্যাওয়ার্ড ” লাভের কথা একই সংবাদ পত্রের প্রথম পাতায় ছাপানো হয়েছিল। তাহলে কি ধরে নেবো “চ্যাম্পিয়ন অব গ্লোবাল চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড ” এর চেয়ে “ব্রিটিশ কারী অ্যাওয়ার্ড “এর গুরুত্ব বেশি? নাকি এটাও আসন্ন নির্বাচনে ভোট পাওয়ার একটা কৌশল মাত্র? এদিকে কোনো কোনো রাজনীতিবিদের এলবিপিসির সদস্যপদ বাতিল হওয়ায় তাঁরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন সদস্য পদ ফিরে পাওয়ার জন্য। সংবিধানকে এমনকি সাধারণ সদস্যদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে ভার্চ্যুয়াল মিটিং করে চলেছেন। শুনেছি তাঁরা ক্লাবের কর্তা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। এতে করে তাঁরা ক্লাবের সম্মান ক্ষুন্ন হবার পাশাপাশি সাধারণ সদস্যদের মাঝে এক ধরণের বিভাজন তৈরী করছেন। ছড়াচ্ছেন বিষোদ্গার। এসবের কি আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল? আসলে আমাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের বড়োই অভাব। আশা করবো বিদ্রোহী সাংবাদিক বন্ধুরা আর কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি না করে এলবিপিসির সংবিধানের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে সমস্যা সমাধানে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন ।

এলবিপিসির আসন্ন নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা নিরপেক্ষ ও নির্ভীক সাংবাদিকতা করার প্রতিশ্রুতি দিবেন, যাঁরা সত্যিকার জাত সাংবাদিক হিসেবে এরইমধ্যে তাঁদের কর্মতৎপরতার স্বাক্ষর রেখেছেন, যাঁরা জেলাভিত্তিক সাংবাদিকতা না করে সমগ্র বাংলাদেশকে দেশে – বিদেশে তুলে ধরবেন, যাঁরা সংকীর্ণ মনোস্কতার ঊর্ধ্বে থাকবেন, যে সব সংবাদ পত্রের সম্পাদকরা স্বাধীনভাবে লেখালেখি করার ক্ষেত্র তৈরী করে দিবেন, নিজের গা বাঁচানোর জন্য কিংবা নির্বাচনে জয়ী হবার লক্ষ্যে সত্য কথা ছাপাতে পিছপা হবেন না, আমার মতে ভোটারদের করণীয় তাঁদের বিজয়ী হতে সাহায্য করা। সকল প্রার্থীদের প্রতি রইলো নিরন্তর শুভ কামনা। সে সাথে এলবিপিসির সব সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি থাকছে আমার হৃদয় নিংড়ানো ইংরেজি নব বর্ষের শুভাশীষ। নতুন বছরে মহান সৃষ্টিকর্তা যেনো আমাদের “করোনামুক্ত নিরাপদ বিশ্ব” উপহার দেন এ প্রত্যাশাই করছি।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও কমিউনিটি কর্মী,  এমবিই, এফআরএসএ, এফআরএএস ।
৩০ ডিসেম্বর ২০২১, লন্ডন,যুক্তরাজ্য।

আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি – 52BanglaTV.com52BanglaTV.com

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে