বাড়ি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দীর্ঘ জীবনের রহস্য খুঁজে বের করার জীন আবিষ্কার

দীর্ঘ জীবনের রহস্য খুঁজে বের করার জীন আবিষ্কার

183
0

ইউরোবাংলা ডেস্কঃ সুন্দর এই ভূবনে কে না বেশীদিন বেঁচে থাকতে চায়। বেঁচে থাকার আকুতিতে মানুষকে নানা চেষ্টা করতে দেখা যায়। সেজন্য বিজ্ঞানীরাও নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ কত বছর বাঁচবে সেটা নির্ধারণ হয়ে যায় তার জন্মের মূহুর্তে। প্রাতিটি জীনের শেষ প্রান্তে থাকে টেলিমেয়ার। এর দৈর্ঘ নির্ধারণ করে কে কত বছর বাঁচবে। অবশ্য রোগ বা দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু এই হিসাবের বাইরে।

ছবি স্বত্ত্বঃ ফ্লিকর

আয়ু নির্ধারণে সাহায্য করে এমন জিনগুলির একটি গ্রুপ সনাক্ত করেছে বিজ্ঞানীরা। আশা জাগিয়েছে যে, ওষুধ ব্যবহার করার মাধ্যমে এই চিহ্নিত জীনগুলোকে ম্যনিপুলেট করে মানুষকে দীর্ঘ এবং স্বাস্থ্যকর জীবন দেওয়া যাবে।

গবেষকরা বলছেন, অনুরূপ গবেষণা করা হয়েছে কিছু প্রাণীর ওপর এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের আয়ু ১০ভাগ পর্যন্ত বাড়ানো গেছে।

তারা আশা করছেন যে, কিছু লোক এক দশকের মধ্যে জীবনকাল দীর্ঘায়িত করার ওষুধ থেকে উপকৃত হতে শুরু করবে। যদিও তারা স্বীকার করেছেন যে, এটি একটি খুব বেশী আশাবাদী চিন্তা।

জীবনকালের জন্য দায়ী জীনগূলো মধুমাছির মতো ক্ষুদ্র প্রাণীর দেহেও চিহ্নিত করা হয়েছিলো। এসব মাছির ওপর ওষুধ ব্যবহার করে তাদের জীবনকাল ১০শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো গেছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকরা মানুষের মধ্যেও একই যোগসূত্র পেয়েছেন। যদিও এটি একই মাত্রার কিনা তা স্পষ্ট নয়। জিনগুলি পেটের চর্বি, যকৃত এবং কঙ্কালের পেশীগুলির মতো শরীরের অংশগুলিতে পাওয়া কিছু প্রোটিন বিকাশে ভূমিকা পালন করে। তবে দীর্ঘায়ুতে তাদের প্রভাবটি কোনও নির্দিষ্ট বয়স-সম্পর্কিত রোগের সাথে সম্পর্কের বাইরে।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, যেসব মানুষের শরীরে এই জীনগূলোর কার্যক্রম সীমিত তারা সাধারণতঃ দীর্ঘায়ু হন। কিন্ত কেন? গবেষকরা এখনো তা জানেন না।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের নাজিফ আলিক বলেন, “সকলের জন্য একটি সুস্থ বার্ধক্যের সম্ভাবনা খুবই রোমাঞ্চকর ভাবনা। এমনকি তা আয়ু বাড়ানোর চেয়েও বেশি। যদিও ব্যাপার দুটি পরস্পরের সাথে যুক্ত ” ।

তিনি বলেন। “আমি আশা করি যে আগামী দশক বা তারও বেশি সময়ের মধ্যে আমরা সর্বসাধারনের জন্য এর সুফল দেখতে পাব” । গবেষণায় দেখা গেছে যে রাপামাইসিন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রত্যাখ্যান প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত একটি ড্রাগ। এই ড্রাগ বয়সসীমার জন্য দায়ী জিনের ক্রিয়াকলাপ হ্রাস করে দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে । এর ফলে এমন একটি জীবন আমরা পেতে পারি যা সামগ্রিকভাবে দীর্ঘ এবং গুরুত্বপূর্ণ হলো তা ভালো স্বাস্থ্যরও নিশ্চয়তা দিতে পারে। তবে, ডাঃ আলিক আরও গবেষণা না হওয়া পর্যন্ত জীবনকে দীর্ঘায়িত করার প্রয়াসে রেপামাইসিন গ্রহণের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।

তিনি বলেন, “পরিচিত এবং অনুমান করা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। আমি মানুষের মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ইতিবাচক ফলাফল না আসা পর্যন্ত এর ব্যপক ব্যবহার সীমিত করার পক্ষপাতি। সুস্থ থাকার জন্য খুব নিশ্চিত এবং সহজ উপায় রয়েছে – যেমন ব্যায়াম এবং খাদ্য; এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে নিযুক্ত থাকা। আমাদের এসবের সুবিধাগুলিকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়”।

ট্রামেটিনিব, মেলানোমার একটি নতুন চিকিত্সা যা ডক্টর অ্যালিক বিকাশে সহায়তা করছেন এবং মধু মাছির ওপর প্রয়োগ করে ভালো ফল পেয়েছেন। এটি মানুষের জীবনকে দীর্ঘায়িত করতেও সাহায্য করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

একবার এই জিনগুলির অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াটি বোঝা গেলে নতুন ওষুধগুলি তাদের ক্রিয়াকলাপকে দমন করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা যেতে পারে, ডঃ আলিক বলেন।

গবেষণাটি জিনোম রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে