বাড়ি বিশ্ব ফিলিস্তিনিদের নিজেদের বাড়িঘর ধ্বংস করতে বাধ্য করছে ইসরাইল

ফিলিস্তিনিদের নিজেদের বাড়িঘর ধ্বংস করতে বাধ্য করছে ইসরাইল

77
0

ইউরোবাংলা রিপোর্টঃ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জাবাল আল-মুকাব্বারের দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম এলাকার জাবাল আল-মুকাব্বারের দুই ফিলিস্তিনি পরিবারকে তাদের নিজদের বাড়িঘর ধ্বংস করতে বাধ্য করেছে। যার ফলে পাঁচ শিশুসহ ১৩ জন গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

বাড়ীগুলোর মালিক শকিরাত পরিবার জানিয়েছে যে, জেরুজালেমের ইসরায়েলি জেলা আদালত রবিবার একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জারি করে তাদের বাড়িগুলি একদিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বিল্ডিং পারমিটের না থাকাকে কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছে। তবে ইসরায়েলি-নিয়ন্ত্রিত জেরুজালেম মিউনিসিপ্যালিটি শহরের সমস্ত ফিলিস্তিনি বিল্ডিং পারমিটের আবেদনের কমপক্ষে ৯৩ শতাংশ অনুমোদন দিতে অস্বীকার করেছে।

বাড়ির মালিক দুই ভাই মাহমুদ এবং দাউদ শকেইরাত, এবং তাদের পরিবার রবিবার গভীর রাতে অধিকৃত ওল্ড সিটির পূর্ব দিকে তাদের বাড়িগুলি খালি করতে শুরু করে।

আরাফাত শাকিরাত, তাদের একজন চাচাতো ভাই এবং পাশের বাড়ির প্রতিবেশী, আল জাজিরাকে জাবাল আল-মুকাব্বের থেকে বলেছেন, যা আল-সাওয়াহরাহ আল-গারবিয়া নামেও পরিচিত, “রবিবার সকালে আদালতের রায়ের পরপরই সীমান্ত পুলিশ বাড়িতে এসে পরিবারগুলোকে বলে যে, তারা যদি স্ব-ইচ্ছায় বাড়ী ভেঙ্গে না ফেলে, তবে তারা [পুলিশ] তাদের যন্ত্রপাতি নিয়ে আসবে এবং নিজেরাই ভাঙার কাজ চালাবে এবং পরিবারকে খরচ বহন করতে হবে” ।

জেরুজালেমের অন্যান্য অনেক ফিলিস্তিনি পরিবারের মতো, শকিরাতরা ধ্বংসের উচ্চ খরচ এড়াতে জেরুজালেম মিউনিসিপ্যালিটির পরিবর্তে তারা নিজেরাই বাড়ি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কয়েক হাজার শেকেল পর্যন্ত যেতে পারে।

৪৫ বছর বয়সী আরাফাত বলেন, “মিউনিসিপ্যালিটি ইন্সপেক্টর গতকাল আমাকে বলেছিলেন: ‘আমি যে বোতলের পানি ধ্বংসকারী কর্মকর্তাকে দিব তার জন্যও আপনাকে অর্থ প্রদান করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গত রাতে ঘরের সব কিছু খুলে নিয়েছি। জানালা, দরজা, রান্নাঘর। তারা আমাদের বলেছিল যে, তারা আজকের মধ্যে আসবে এবং পরীক্ষা করে দেখবে যে আমরা বাড়ী ভাঙ্গার ক্ষেত্রে কতটুকু এগিয়েছি,” তিনি আরো বলেন।

দুটি বাড়ি ২০১২ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং প্রতিটি ৮০ বর্গ মিটার আয়তনের। মাহমুদ (৩৮) আট মাসের একটি শিশুসহ চার সন্তানের জনক এবং তার ভাই দাউদ পাঁচ সন্তানের জনক।

পরিবারগুলি তিন বছর আগে প্রথম ধ্বংসের আদেশ পেয়েছিল কিন্তু ইসরায়েলি আদালতে এর বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করেছিল, কোন লাভ হয়নি। অনুমতি না থাকার কারণে বাড়ি তৈরি করার পর থেকে তারা এযাবত জেরুজালেম পৌরসভাকে ৫০,০০০ শেকেল ($১৫,৮৬০) জরিমানা দিয়েছে।

আরাফাত বলেন,, “আমরা এখন পরিবারগুলির জন্য ভাড়া বাড়ি খুঁজছি। গতকাল আমরা তাদের ভাইয়ের একটি বাড়িতে তাদের জিনিসপত্র রেখেছি। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি (আইসিআরসি) তারা বাড়ি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত কয়েক দিনের থাকার জন্য একটি তাঁবু সরবরাহ করবে”।

“আমরা খুঁজছি। জেরুজালেমের বাড়ী ভাড়া অনেক বেশি।”

নিয়মিত ফিলিস্তিনি বাড়ী ধ্বংশ

ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিতভাবে বিভিন্ন আইনি অজুহাতে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংস করে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে “অনুমতি ছাড়াই নির্মাণ”। জেরুজালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ বাড়িতে ইমারত নির্মাণের অনুমতি নেই, যার ফলে প্রায় ১,০০,০০০ ফিলিস্তিনি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

কমপক্ষে ২১৮ টি ফিলিস্তিনি পরিবার, যার মধ্যে ৪২৪ জন শিশু সহ ৯৭০ জন লোক রয়েছে, সরকারী মদদে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী গ্রুপগুলির দায়ের করা চলমান আইনি মামলার কারণে জোরপূর্বক উচ্ছেদের মুখোমুখি হচ্ছে। বর্তমানে জেরুজালেমে প্রায় ৩,৫০,০০০ ফিলিস্তিনি বাস করে। তাদের মাঝে ২,২০,০০০ অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীও বাস করে।

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এবং সামরিকভাবে দখলকৃত জনগোষ্ঠীর স্থানান্তর আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ।

গত সপ্তাহে, কারামেহ পরিবারের ১৫ জন ফিলিস্তিনিকে গৃহহীন করা হয়েছিল যখন ইসরায়েলি বাহিনী আল-তুরের নিকটবর্তী এলাকায় তাদের বাড়ি ধ্বংস করে দেয়। আল-তুরে এই ধ্বংসযজ্ঞের কয়েক দিন পর কর্তৃপক্ষ শেখ জাররার ফ্ল্যাশপয়েন্ট এলাকায় একটি ১৮ সদস্যের বাড়িও ধ্বংস করে ।

স্থানীয় এনজিও এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলি দীর্ঘদিন ধরে জেরুজালেমে ইহুদিদের পক্ষে জনসংখ্যার অনুপাত পরিবর্তন করার লক্ষ্যে ইসরায়েলি চেষ্টা এবং নীতির কথা বলে আসছে। পৌরসভার ২০০০ সালে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানে “শহরে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ বজায় রাখাকে ” একটি লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে৷

অধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, বেআইনি বসতি সম্প্রসারণ, ফিলিস্তিনিদের বাড়ি ধ্বংস এবং ফিলিস্তিনের নগর উন্নয়নে বিধিনিষেধ এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবহৃত কিছু প্রধান উপায়।

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুসালেম এলাকা সামরিকভাবে দখল করে নেয়। মাত্র ১৩ শতাংশ ভূমি ফিলিস্তিনি উন্নয়ন ও আবাসিক নির্মাণের জন্য জোন করা হয়েছে। যার বেশিরভাগই ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে। দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের সমস্ত জমির প্রায় ৫৭ শতাংশ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বেসরকারী ফিলিস্তিনি মালিকদের অবৈধ বসতি নির্মাণ এবং “সবুজ এলাকা ও পাবলিক অবকাঠামো” হিসাবে গড়ার জন্য বেদখল করেছে। বাকি ৩০ শতাংশ “অপরিকল্পিত এলাকা” যেখানে যে কোন ধরণের নির্মাণ কাজ নিষিদ্ধ।

আরাফাত বলেন, “এটি স্পষ্ট দখলদারিত্ব। এদের কোন মমতা নেয়, কোনো ধর্ম নেই। তারা বয়স্ক বা অল্প বয়স্ক লোকদের কথা চিন্তা করে না । যদি তারা তা করতো তবে তারা শীতের মাঝামাঝি সময়ে আপনার বাড়িটি ভেঙে ফেলতো না। কিন্তু না, তারা এমন সময়ে উচ্ছেদ করতে আসে যখন মানুষকে ঘরের ভেতরে থাকা দরকার” ।

“এটি জেরুজালেমের ইহুদিকরণের প্রয়াস। তারা ফিলিস্তিনিরা শহর ছেড়ে চলে যাক।”

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে