বাড়ি মতামত সেই পতাকার সন্ধানে

সেই পতাকার সন্ধানে

85
0

মহামান্য রাণী এলিজাবেথের
সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর : একটি স্মরণীয় দিন

আজ জুমুয়াবার। প্লাটিনাম জুবিলি’র দ্বিতীয় দিন। ছুটির দিন। আবহাওয়া খুব ই ভালো, রৌদ্রজ্জ্বল দিন। ভাবলাম রিজেন্টস পার্ক মসজিদে জুমুয়ার নামাজ আদায় করবো। সেই কবে যে সেখানে জুমুয়া পড়েছি তা আর মনে নেই। সেই সাথে পার্কেও বেড়ানো হবে, মহামান্য রাণীর বাকিংহাম প্যালেস এলাকায় যাবো যেখানে চলছে নানা আয়োজন, এলিজাবেথ লাইনও চড়া হবে আর দিনটাকে নিজের মতো করে কাটাবো। বলা যায় এটি একটি ডে ট্রিপ টু লন্ডন। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এ ঘুরবো। গাড়ি নিয়ে গেলে পার্কিং সমস্যায় পড়তে হবে এছাড়া কংগেষচন চার্জ, রোড বন্ধ ইত্যাদি ঝামেলাতো থাকবেই।

সকালে টুইকেনহাম থেকে ট্রেনে রওয়ানা দিলাম। ওয়াটারলু থেকে বেকারলু লাইনে রিজেন্টস পার্ক। তারপর ১৫/২০ মিনিট হেঁটে পার্ক এর ভেতর দিয়েই মনোরম বৃক্ষরাজি, প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করে করে লেক পেরিয়ে মসজিদে গেলাম। নামাজ আদায় হলো। সৌভাগ্য আরাবিয়ান ইমাম সাহেবের সাথেও সাক্ষাত হলো, দুয়া চাইলাম,ছবি তোলার অনুমতিও পেলাম।

এবার ধরতে হবে নতুন এলিজাবেথ লাইন। টটেনহাম কোর্ট রোড থেকে লিভারপুল ষ্ট্রীট হয়ে বাংগালী অধুয়্যষিত হোয়াইট চ্যাপেলে যাবো। মনে আছে খুদিলার আন্দোলনের কথা?! ক্রসরেল প্রজেক্টের কারনে বিকলেন এলাকাজুড়ে মাটি খোড়া হবে তা বন্ধের জন্য ছিলো সেই আন্দোলন। যাইহোক এই ক্রসরেল এর কারণে কিন্তু আজ আমরা এলিজাবেথ লাইনের সেবা পাচ্ছি। সংক্ষিপ্ত কিন্তু আরামদায়ক সময় কাটালাম এলিজাবেথ লাইনে। অনেক ভালো লাগলো। হোয়াইট চ্যাপেলে নেমে বাংগালী দোকানে কাজ সারলাম। সাথে গাড়ি না থাকার কারণে বাজার সওদা যতসামান্য। যা রাকসাকে ভরা যায় চোখের সামনে বিশাল রয়্যাল লন্ডন হস্পিটাল। হোয়াইটচ্যাপেল রোডে পুরনো হসপিটাল এখন টাউন হল হচ্ছে। কাজ শেষ হলে এখানেই বসবেন টাওয়ার হ্যামলেটস এর নতুন মেয়র লুতফুর রহমান।

হোয়াইটচ্যাপেল থেকে ডিষ্ট্রিক্ট লাইনে অয়েষ্টমিনষ্টার নেমে লন্ডন আই, বিগবেন, পার্লামেন্ট, চার্চিল, গান্ধী জি, ম্যান্ডেলা, আব্রাহাম লিনকন এর ষ্ট্যাচো পেরিয়ে সেন্ট জেমস পার্ক হয়ে বাকিংহাম প্যালেসের সামনে জনতার সাথে মিশে গেলাম কিছুক্ষন। তারপর হেঁটে হেঁটে প্যারেড গ্রাউন্ড হয়ে হোয়াইট হলের দিকে আসতে আসতে কমনওয়েলথ দেশের পতাকার সাথে আমার দেশের লাল সবুজের পতাকা পত পত করে উড়ছে সন্ধান পেলাম। নয়ন জুড়িয়ে গেলো। যা জুবিলির প্রথম দিন বিবিসি সরাসরি প্যারেডের সময় দেখিয়েছিলো।

এবার ১০ ডাউনিং ষ্ট্রীটের দিকে যাত্রা। ফরেন অফিসের মুখে লর্ড ক্লাইভের একটি স্টেচো নজরে পড়লো। ইষট ইন্ডিয়া কোম্পানী ব্যবসার নাম করে আমাদের উপর উপনিবেশ স্থাপন করে। বাংলার শেষ নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে সরিয়ে ব্রিটিস রাজ কায়েম হয়। আমাদের গলায় পরাধীনতার জিঞ্জির পরানো হয়। এসব কথা মনে পড়লো।

ডাউনিং ষ্ট্রীট থেকে ওয়েষ্ট মিনস্টার টিউব। ঘরে ফেরার পালা। টিউবে ঢুকেই সাবওয়েতে বব মারলের ‘নো ওয়েমেন নো ক্রাই’ গান গিটারে বাজাচ্ছে দেখে থমকে দাঁড়ালাম। আমাদের দেশে যেভাবে গান গজল জারি গেয়ে ফকিরেরা ভিক্ষা করে কিংবা জীবিকা নির্বাহ করে এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। ‘আমার আল্লাহ রাসুলের নাম’, ‘হরিণ একটা বান্ধা ছিলো গাছের তলায় গো’, আয় আয় পুবেতে বন্ধনা করি …..ইত্যাদি। ভাবি এভাবে আল্লাহ রাসুলের নাম ভাংগিয়ে আমার দেশে ভিক্ষা করতে হবে কেনো! নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা।

ওয়াটালুতে এসে সাউথওয়েষ্টার্ণ ট্রেনে চেপে বসলাম। ক্লান্ত শরীর। আজ কয়েক মাইল হাঁটা হয়েছে। সারাদিনের তোলা ছবিগুলো দেখতে দেখতে এবং আওয়ার আইসব্যার্গ ইজ মেয়াল্টিনং বইটি পড়তে পড়তে একসময় টুইকেনহাম এসে পোঁছুলাম। আজকের দিনটি অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আকবর হোসেন
৩ জুন ২০২২
টুইকেনহাম, ওয়েষ্ট লন্ডন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে