ইউরোবাংলা রিপোর্টঃ অচিরেই টাক পড়া রোধ করা কিংবা টাক পড়া মাথায় আবার চুল গজাবে বলে এমন এক সম্ভাবনার দাবী করেছে একদল গবেষক। তাদের মতে মাথায় টাক পড়ার জন্য দায়ী যে রাসায়নিক উপাদান সেটিকে তারা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বএল, আশ্চর্যের বিষয় হলো ঐ একই রাসায়নিক উপদান চুলের বৃদ্ধিরও কারন। যখন উপাদানটি পরমাণে বেশী হয়ে যায় তখনই টাক পড়া শুরু হয়।
তাদের আবিস্কৃত প্রোটিন্টির নাম হলো টিজিএফ-বিটা। এটি কেবল চুলের গোড়ার বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণই করে না এর মৃত্যুর কারণও হতে পারে। ইউসিআর গবেষণা দল বিশ্বাস করে যে, চুল পড়া বন্ধ করতে এর মাত্রা ‘নিয়ন্ত্রিন’ করা যেতে পারে।
টাক পড়া লোকের সংখ্যা বিশ্বে কয়েক বিলিয়ন হবে। অনেকে একে বার্ধ্যক্যের লক্ষন হিসেবে মেনে নেন। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে এখন টেকো মাথায় চুল আবার গজাবে।
ডক্টর কিক্সুয়ান ওয়াং, ইউসিআর-এর গাণিতিক জীববিজ্ঞানী যিনি এই গবেষণাপত্রটির নেতৃত্ব দিয়েছেন, বলেছেন তার গবেষণা বিজ্ঞানীদের টাক সৃষ্টিকারী ‘নিয়ন্ত্রণ’ প্রক্রিয়ার এক ধাপ কাছাকাছি নিয়ে গেছে।
তাদের তৈরী মডেলে দেখা গেছে টিজিএফ-বিটা উচ্চ ঘনত্ব চুলের গোড়ার মৃত্যু ঘটায়। লোমকূপগুলিতে এত বেশি রাসায়নিক তৈরির কারণে টাক পড়া শুরু হতে পারে ।
অ্যালোপেসিয়া এবং বয়স-জনিত চুল পড়ার মধ্যে পার্থক্য কী?
অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিভিন্ন লোমকূপ আক্রমণ করে। মাথায় চুল ধড়ে রাখে এর গোড়া। যখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একে আক্রমন করে তখন স্বভাবিক ভাবেই চুলের গোড়ার মৃত্যু হয়। এটি সাধারণত বৃত্ত বা ডিম্বাকৃতির টাক সৃষ্টি করে এবং কেউ সম্পূর্ণ চুলহীন হয়ে যেতে পারে।
এই রোগটি জীবনের যেকোন সময় ঘটতে পারে এবং এটি অপ্রত্যাশিত। বিশেষজ্ঞরা এখনও অনিশ্চিত যে কোন জেনেটিক মেকআপের কারণে এটি ঘটে। অন্যদিকে, বয়সজনিত চুলের ক্ষতি বংশগত কারণে হয়।
পুরুষদের ক্ষেত্রে এটিকে পুরুষ প্যাটার্ন চুল পড়া বলা হয় এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে এটিকে মহিলা প্যাটার্ন চুল পড়া বলা হয়।
পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জিনগুলি সময়ের সাথে সাথে ফলিকলগুলি সঙ্কুচিত করে এবং শেষ পর্যন্ত চুল বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়। এটি কিশোর বয়সে শুরু হতে পারে তবে পরবর্তী জীবনে এটি বেশি ঘটে।
এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট নয় এবং তাই শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দমন করার লক্ষ্যে নেয়া ওষুধ দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
প্রোটিনের ‘ঠিক ঠিক’ মাত্রায যখন follicles কোষে পৌঁছানো হয় তখন নতুন চুল তৈরি হয়। চুলের ফলিকলের কোষগুলি পর্যায়ক্রমে মারা যায়, যার ফলে চুল পড়ে যায়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা দিনে প্রায় ১০০ বার ঘটে।
তবে প্রতিটিতে স্টেম সেলও রয়েছে, যা নতুন চুল তৈরির কোষ তৈরি করতে পারে যাতে হারানো স্ট্র্যান্ড পুনরায় গজায়। তবে টাক পড়ায় এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়, ওয়াং এবং সহ-লেখক ডাঃ ক্যাথরিন ডিন এর জন্য টিজিএফ-বি দায়ী বলে করেন।
ওয়াং বলেন, এমনকি যখন একটি চুলের ফলিকল মারাযায়, তখনও এটি তার স্টেম সেল জলাধারকে হত্যা করে না। বেঁচে থাকা কোষগুলি যখন পুনরুত্থানের সংকেত পায়, তখন তারা বিভক্ত হতে শুরু করে, একটি নতুন কোষ তৈরি করে এবং একটি নতুন ফলিকলে বিকশিত হয়, ।
‘টিজিএফ-বিটা এর দুটি বিপরীত ভূমিকা রয়েছে। এটি কিছু লোমকূপ কোষকে সক্রিয় করে নতুন জীবন তৈরি করতে সাহায্য করে। পরবর্তীতে এটি কোষের আত্মহননকে সাহায্য করে।’
তিনি যোগ করেন, “আমাদের নতুন গবেষণা আমাদের স্টেম সেলের আচরণকে বোঝার কাছাকাছি নিয়ে গেছে। ফলে আমরা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো এবং হয়ে যাওয়া ক্ষতি নিরাময়ের চেষ্টা করতে পারি” ।
গবেষণাটি পর্যালোচনা করে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড হেলথ কেয়ারের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অ্যান্টনি ওরো বলেছেন যে এটির উপর ভিত্তি করে টিজিএফ-বিটা ভূমিকা সম্পর্কে যে কোনও সিদ্ধান্তে আসা ‘এখোনো সমভব নয়’।
‘টিজিএফ-বিটা চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে একটি জটিল ভূমিকা পালন করে, তাই এর মনোনয়ন বিস্ময়কর নয়।
‘বেশ কিছু বিষয় গবেষণার প্রভাবকে সীমিত করে। প্রথমত, অধ্যয়নটি বেশিরভাগ ইদুরের চুলের বৃদ্ধিতে বিদ্যমান ডেটা ব্যবহার করে করা হয়েছে এবং আমরা জানি যে ইদুর এবং মানুষের চুলের বৃদ্ধি প্রক্রিয়া বেশ আলাদা।
দ্বিতীয়ত, গবেষণায় স্বাভাবিক চুলের সাইক্লিং ব্যবহার করা হয়েছে। পুরুষ টাক নয়। উভয়ই খুব আলাদা। তাই একটির সিদ্ধান্ত অগত্যা অন্যেটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা।
পরিশেষে এই গবেষনাটি তাক পড়া লোকদের নিয়ে কয়া হয়নি। তাই টাক রোধে টিজিএফ-বিটা এর ভূমিকা সম্পর্কে সিদ্ধান্তগুলি অকালপক্ক।