বাড়ি মতামত জনগণ চায় মুক্তি; কিন্তু আমাদের রাজনীতি কোন দিকে?

জনগণ চায় মুক্তি; কিন্তু আমাদের রাজনীতি কোন দিকে?

115
0

সিরাজুল ইসলাম শাহীন

জনগণ চায় মুক্তি। ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসনের অবসান। খুনী শেখ হাসিনার আওয়ামী অপশাসনের পতন। সুযোগ পেলেই মুক্তিকামী জনতা বেরিয়ে পড়ছে। বিরোধী দলগুলো মাঠে নামার চেষ্টা করছে। যুগপৎ কর্মসূচী চলছে। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মানুষের আস্থা এখনও বিএনপিতে। দলটির প্রতিটি সমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতি এর জানান দিচ্ছে। গণআকাঙ্খা সফল করার মূল দায়িত্ব তাই এর নেতৃত্বের। গ্লোবাল রাজনীতির গতিপ্রকৃতি অনুধাবন, জাতীয় সমস্যার গভীর বিশ্লেষণ, ত্রুটি সংশোধনে কঠোরতা এবং লক্ষ্য অর্জনে আপোষহীনতা আনতে পারে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। স্পর্শকাতর এ সময়ে মুহূর্তের ভুল সবকিছু ওলটপালট করে দিতে পারে। মুক্তির পরিবর্তে জাতির কপালে নেমে আসতে পারে গভীর অমানিশার অন্ধকারময় গহ্বরে নিমজ্জমান অপ্রত্যাশিত জীবন। সাফল্যে পুরস্কারের হাতছানি যেমন আছে তেমনি যে কোন ব্যর্থতার শতভাগ দায়ভার এই নেতৃত্বকেই নিতে হবে।

নিকট সময়ে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে পরাশক্তি চক্রের ভয়ানক খেলা স্পষ্টত দৃশ্যমান। এ খেলার নির্মম শিকার হয়ে হাজার বছরের ঐতিহ্যময় বেলাভূমি সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া ও ইয়েমেন আজ ধ্বংসস্তূপ প্রায়। এ সব দেশে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনগনের লড়াইটা ছিল যৌক্তিক। কিন্তু বিরোধী দলীয় কর্মসূচী সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর মিথ্যা আশ্বাস ও হিংস্র কূটকৌশলের শিকারে পরিণত হয়েছে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বিদেশী শক্তি সরাসরি জড়িয়ে পড়ে সমৃদ্ধ দেশগুলোকে নরকে পরিণত করেছে। নিজেদের পোষা সাদ্দাম, গাদ্দাফীকে হত্যা করেছে। প্রেসিডেন্ট হাদি পালিয়ে সৌদিতে আশ্রিত হয়েছেন। ইরানের মদদে আসাদ এখনো ঠিকে আছেন। প্রতিটি রাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ অব্যাহত আছে। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ও কোটি মানুষের মানবিক বিপর্যয় যেন সেখানে আজ ভাগ্যলিপি। অস্ত্র ব্যবসা কার হচ্ছে? তেল সহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লোট হয়ে কোথায় যাচ্ছে?

এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ বিদেশী ষড়যন্ত্র ঠেকিয়েছেন। মালয়েশিয়ায় অনেক রাস্তা মাড়িয়ে ড আনোয়ার ইব্রাহিম স্থিতিশীলতার প্রচেষ্টারত। তিউনিসিয়ায় ষড়যন্ত্রকারীরা এখন ড্রাইভিংয়ে। পাকিস্তানে ইমরান খান ক্ষমতা হারিয়ে বাঁচা মরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। মিশরে ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড মুরসী জেলখানায় জীবন দিয়েছেন। আফগানিস্তানে অর্ধশতবছর ধরে অব্যাহত ধ্বংসলীলার শুরুটা হয়েছিল কমিউনিস্ট নজিবুল্লাহদের ডেকে আনা সোভিয়েত রাশিয়ার হস্তক্ষেপের মধ্যদিয়ে। আমাদের দেশে ২০০৮ সালের ভোজবাজির নির্বাচন, ২০১৪ সালের ভোটহীন নির্বাচন আর ২০১৮ সালের নিশি রাতের নির্বাচন সবই বিদেশী ক্রীড়নকদের মদদে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের পল্টন হত্যাকাণ্ড, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির পিলখানা ট্র্যাজেডি ও পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল কেলেঙ্কারিতে জাতীয় নেতৃবৃন্দের ধারাবাহিক ফাঁসী সব একই সূত্রে গাঁথা। দাবার গোটি সবখানে অবশ্যই দেশীয় লোভী, ইসলাম বিদ্বেষী, হিংসুটে, মেরুদণ্ডহীন আর গাদ্দার চরিত্র। এককথায় বিদেশী হস্তক্ষেপ বিপদ ডেকে এনেছে আর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মোকাবেলা সমাধানের রাস্তা দেখিয়েছে।

শত বছরের ঐতিহ্য পল্টন কেন্দ্রিক রাজধানীর রাজনৈতিক সমাবেশ। সেখানে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে বিএনপি সমাবেশ করতে পারবে না; সরকারের এমন মামা বাড়ির আবদারে চাপের মুখে মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠ দেখতে যাওয়া, গোলাপবাগ মাঠে কর্মসূচি স্থানান্তর দুর্বলতার পরিচায়ক। একমাত্র ছেলের গ্রেফতার-রিমান্ড সহ সকল চাপ সত্বেও আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান ১০ই ডিসেম্বর সাহসিকতার সাথে সংবাদ সম্মেলনে ১০ দফার যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাঁকে গ্রেফতার করে কাল্পনিক জঙ্গি কানেকশনের মিথ্যা মামলায় একাধিকবার রিমান্ড নিয়ে কারাগারের নিঃসঙ্গ সেলে রেখেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন অমানবিক অন্যায়ের প্রতিবাদ-নিন্দা এমনকি মুক্তির দাবি জানাতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর যুগপৎ গণমিছিলের দিনে জামায়াতের মিছিলে পুলিশের গায়ে পড়ে হামলা, শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার, থানায় নির্মম নির্যাতন, পুলিশ হাসপাতালে পুলিশ কমিশনারের বেআইনী হুমকি সহ দুর্বল স্ক্রিপ্টের নাটকীয়তা, হাজার হাজার নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে বহু মামলা দায়ের দেশবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে। একই কর্মসূচী অন্য সকলে করতে পারলেও ডিএমপি কর্মকর্তার ভাষায় জামায়াতের অনুমতি নেই। অথচ অনলাইন আবেদনের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহকারী সেক্রেটারির নেতৃত্বে জামায়াত প্রতিনিধি দল সরাসরি দেখা করে সহযোগিতা কামনা করেছেন। এতসবের পরেও এ বিষয়ে বিএনপির নীরবতা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

আন্দোলনের মূল শক্তি তারুণ্য। ছাত্র – যুবকদের ভূমিকা থাকে অগ্রগণ্য। ‘৪৭, ৫২, ৬৬, ৭১ এবং ৯০; সকল সাফল্যে রয়েছে মূলত তরুণদের জয়গান। প্রায় সকল ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য বজায় রেখে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন আশা করা যায় না। প্রধান দুটি ছাত্র সংগঠন ছাত্র দল-ছাত্র শিবির বিরোধী দলের হাতে। দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম এ বর্বর শাসনামলে একটিবারের জন্য তাদের একসাথে চলতে দেখা যায়নি। এজন্য নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করা যাবে না। অথচ এরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে শুরু করলে রাজনীতির দৃশ্যপট বদলে যেতে বাধ্য। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এতটুকু নিজেদের কাজ করতে না পারাটা গ্রহণযোগ্য নয়। এমন ব্যর্থতা দেশবাসী ভালোচোখে নিতে পারে না।

বিএনপি নিশ্চয় সরকার পতন চায়। কিন্তু কিভাবে? জনতার ঐক্যবদ্ধ গণজোয়ারে না বিদেশী এসাইনমেন্টে? জাতির পরীক্ষিত সৎ, যোগ্য, ত্যাগী, সুসংগঠিত একটি অংশকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে তা কি আদৌ সম্ভব?

বিদেশী এসাইনমেন্ট নির্ভরতা হবে আত্মঘাতী। এটি জাতীয় রাজনীতিতে পরকীয়া স্বরূপ। মনে রাখতে হবে আওয়ামীলীগের সাথে ওদের সুখময় পরকীয়া সংসার চলছে। একবারে দিলখোলা। চাওয়ার আগেই সব বেশি বেশি পাওয়া যাচ্ছে। কোন দুঃখে বিশ্বস্ত দক্ষ সঙ্গী বদলিয়ে অবিশ্বস্ত অদক্ষ পার্টনার নিতে হবে। আর নিলেও তা শহীদ জিয়ার বিএনপি হতে পারে না। হলেও হতে পারে আওয়ামী নবসংস্করন। এর সাথে মুক্তিকামী দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ইসলামী জনতার কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। এতে দেশবাসীর দূরতম কোন কল্যাণের সম্ভাবনা নেই।

মুক্তিকামী জনগনের ইস্পাত কঠিন ঐক্য একমাত্র সমাধান। সকল দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে উদারতা ও দৃঢ়তা নিয়ে দুর্বার গন আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। এ পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো জাতির সাথে চরম গাদ্দারী ছাড়া আর কিছুই নয়। ঐক্য বিনষ্টের ফাঁদ ও এর হোতাদের ষড়যন্ত্রের গভীরতা অনুধাবনে ব্যর্থতা মোটেই কাম্য হতে পারে না ।

sirajulislamshaheen@yahoo.com; ১১/০১/২০২৩; লন্ডন; রাত ০২ টা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে