সামাজিক বনায়নে অনিয়ম : ব্যবস্থা নিতে মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম’র উদ্যোগে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করছেন নেতৃবৃন্দ।

নাজমুল ইসলাম মকবুল: সামাজিক বনায়নের নামে বছরের পর বছর ধরে সর্বত্র ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি চলছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ৭১এর বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম এর উদ্যোগে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।


বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের হাতে ১৫ জানুয়ারী রবিবার এ স্মারকলিপি তুলে দেন নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম সভাপতি সাংবাদিক কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল এর সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন পরিবেশ ও নদী রক্ষা পরিষদের সভাপতি ও বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রোটারিয়ান মোহাম্মদ মোসাদ্দিক হোসেন সাজুল।


এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বনাথ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আজিজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মন্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইনতাজ আলী, দলিল লেখক আলহাজ্ব ফয়জুর রহমান, শিক্ষাবিদ আবুল বশর মোঃ ফারুক, মোঃ জাকারিয়া, মোঃ নাজিম উদ্দিন, তুহিন আকবর, ইহসান হোসাইন তানিম, মোঃ গিয়াস উদ্দিনসহ বিশিষ্টজনরা।


স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত সরকারী সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের সাথে লিখিত চুক্তিপত্রের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সিলেটসহ বিশ^নাথ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় সরকারী রাস্তা লিজ নিয়ে বিভিন্ন সমিতি বা সংস্থা বৃক্ষরোপন করে যাচ্ছে। রোডের উভয় পার্শ্বে বৃক্ষরোপনের জন্য লিখিত চুক্তিপত্রে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছ রোপনের জন্য আনুপাতিক একটি হার নির্ধারন করে দেয়া হয়। কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে এসব নীতিমালা কোন সমিতি বা সংস্থা অতীতেও মানেনি বর্তমানেও মানছেনা। বরং কম সময়ে বেশি লাভের আশায় বনজ গাছই রোপন করা হচ্ছে। এসব বনজ গাছের মধ্যে আবার বেশিরভাগ গাছই বিদেশী জাতের এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিক্ষর।

অনেক গাছ এতই বিষাক্ত যে এসব গাছে পাখি পর্যন্ত বসেনা। আবার অনেক বিদেশী জাতের বনজ গাছ খুব বেশি পানি শোষন করে মাটির উর্বরাশক্তি ও পরিবেশ নষ্ট করছে। এছাড়া অনেক বিদেশী জাতের বনজ গাছের ডালপালা রোডের পার্শ্ববর্তী ক্ষেতের জমির ফসলও নষ্ট করছে। লিজ গ্রহীতা বিভিন্ন সমিতি বা সংস্থার সদস্যরা সংঘবদ্ধ ও প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে নীরিহ কৃষকেরা বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসলেও প্রতিবাদ করতে বা মুখ খুলতে সাহস পায়না। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির গাছ গাছালি। এসব বিদেশী বিষাক্ত গাছের প্রভাবে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই। পরিবর্তন হচ্ছে আবহাওয়া ও জলবায়ূর। ঋতু পরিবর্তনের সাথে আবহাওয়ার মিল চোখে পড়ছেনা। গত ক’বছরে বজ্রপাত বেড়ে গেছে আশংকাজনকহারে। বজ্রপাত ও আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে প্রাণহানি ঘটছে অগণিত মানুষের। স্মারকলিপিতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।


স্মারকলিপি গ্রহণ করে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছ রোপনের জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক হারের বিষয়টি আমারও জানা আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে ও শিগগিরই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সিলেট লেখক ফোরামের উদ্যোগে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয় ৬ এপ্রিল ২০১৯ বুধবার। সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেন সিলেট লেখক ফোরামের উপদেষ্টা প্রবীণ সাংবাদিক কলামিষ্ট আফতাব চৌধুরী, সিলেট লেখক ফোরাম সভাপতি সাংবাদিক কবি নাজমুল ইসলাম মকবুল, এডভোকেট জামাল আহমদসহ বিশিষ্টজনরা।


এদিকে সামাজিক বনায়নের নামে বছরের পর বছর ধরে ব্যাপক অনিয়ম রোধে ব্যবস্থা নিতে ৭১এর বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম এর উদ্যোগে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া এবং বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বর্ণালী পাল এর হাতে ১৪ অক্টোবর ২০২০ বুধবার পৃথক পৃথক স্মারকলিপি তুলে দেন নেতৃবৃন্দ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে