Site icon ইউরোবাংলা

হিন্দুত্ব ‘মিথ্যায় ভরা’ মন্তব্য করায় ভারতীয় অভিনেতার কারাদণ্ড

ইউরোবাংলা রিপোর্টঃ ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের প্রচারিত হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শ ‘মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে’ লেখা একটি টুইটের জন্য এক অভিনেতাকে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরু শহরের পুলিশ।

চেতন কুমারকে মঙ্গলবার কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরু পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং পরে স্থানীয় আদালত তাকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠায়।

সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, এই অভিনেতার বিরুদ্ধে শত্রুতা ছড়ানো এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা সহ বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

ডেকান হেরাল্ড পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, কট্টরপন্থী বজরং দলের এক সদস্যের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ৪০ বছর বয়সী অভিনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বজরং দল হল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) সংগঠনের সাথে যুক্ত একটি গোষ্ঠীর যুব শাখা, যা ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির আদর্শিক অভিভাবক হিসাবে বিবেচিত ।

গত ২০ মার্চ এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘হিন্দুত্ব মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এটি সত্যের দ্বারা পরাজিত হতে পারে এবং সত্যই সমতা।

হিন্দুত্ববাদী চিন্তাবিদ ভিডি সাভারকরের  করা, রাম রাবণকে পরাজিত করে অযোধ্যায় ফিরে আসার পর ভারতীয় ‘জাতি’র সূচনা হয়, বাবরি মসজিদের স্থানটি হিন্দু দেবতা রামের জন্মস্থান এবং উরি গৌড়া ও নানজে গৌড়া টিপু সুলতানকে হত্যা করেছিলেন- এসব বক্তব্যকে মিথ্যা বলে মন্তব্য করেন কুমার।

যদিও ইতিহাসবিদরা বলছেন যে, অষ্টাদশ শতাব্দীর নেতা টিপু সুলতান ১৭৯৯ সালে চতুর্থ অ্যাংলো-মহীশূর যুদ্ধের সময় নিহত হয়েছিলেন। ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির নেতারা সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, শাসকের পরিবর্তে দুই ভোক্কালিগা যোদ্ধা উরি গৌড়া এবং নানজে গৌড়া তাকে হত্যা করেছিলেন।

 ইতিহাসবিদরা আরও দাবি করেছেন যে উরি গৌড়া এবং নাঞ্জে গৌড়া উভয়ই কাল্পনিক চরিত্র, এই দাবির সমর্থনে কোনও সরকারী প্রমাণ পাওয়া যায় না। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট ষোড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিতর্কিত স্থানের নিয়ন্ত্রণ হিন্দু গোষ্ঠীগুলিকে হস্তান্তর করে, যা সেখানে একটি মন্দির নির্মাণের পথ প্রশস্ত করে । এটি দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল।

উত্তর প্রদেশরাজ্যের বিতর্কিত স্থানটি ১.৩ বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশের  সবচেয়ে বিস্ফোরক ইস্যুগুলির মধ্যে একটি। যেখানে মুসলমানরা জনসংখ্যার প্রায় ১৪ শতাংশ।

১৯৯২ সালে, বিজেপি এবং সহযোগী সংগঠনগুলির নেতৃত্বে একটি সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং উগ্র হিন্দু জনতা অযোধ্যা শহরের বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে দেশজুড়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রায় ২,০০০ মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান।

অভিনেতার গ্রেপ্তারের সমালোচনা করেছেন তাঁর সমর্থকরা।

কন্নড় চলচ্চিত্র প্রযোজক ও লেখক অগ্নি শ্রীধর বিবিসিকে বলেন, “একটি টুইটের জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত হয়নি।

আমরা কারো মতামতের সাথে একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাকে গ্রেফতার করতে  হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকেও তিনি সমর্থন পেয়েছেন।

লেখক ও সাংবাদিক আন্না এম ভেত্তিকাড লিখেছেন, “চেতন কুমার মৌলবাদীদের চ্যালেঞ্জ করে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। তার এখন আমাদের সমর্থন দরকার’।

সাংবাদিক পামেলা ফিলিপোস লিখেছেন, ‘কর্ণাটক নির্বাচনের কারণেই কি তারা কন্নড় অভিনেতা চেতন কুমারকে নির্দোষ টুইটের জন্য গ্রেফতার করেছে?

এক টুইটবার্তায় সেন্টার ফর ইনকোয়ারি লিখেছে, ‘ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান করার জন্য একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও কারাদন্ডের মুখোমুখি হতে হবে, এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আঘাতপ্রাপ্ত অনুভূতি রক্ষার জন্য যখন আইন ব্যবহার করা হয় তখন কী ঘটে এই  ঘটনা তাঁর একটি গভীর উদ্বেগজনক উদাহরণ।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কর্ণাটক হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিতকে নিয়ে একটি টুইট করার জন্য অভিনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যিনি রাজ্যের স্কুল ও কলেজে মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে মামলার শুনানি করেছিলেন।

পরে ওই মামলায় তিনি জামিনে মুক্তি পান।

Exit mobile version