– ফিরোজ মাহবুব কামাল
বিফল শিক্ষাব্যবস্থা
সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণ এবং শান্তি, সমৃদ্ধি ও গৌরব নিয়ে বাঁচার কাজটি কখনোই স্রেফ গৃহনির্মাণ, রাস্তাঘাট, কৃষি, শিল্প বা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড দিয়ে শুরু হয় না। বহু অসভ্য ও দুর্বৃত্ত জনগোষ্ঠিরও সেগুলি থাকে। সভ্য মানব রূপে বেড়ে উঠার শুরুটি সব সময়ই হয় শিক্ষাঙ্গণ থেকে। সভ্য ও অসভ্য এবং ভদ্র ও অভদ্র মানুষের মাঝে যে বিশাল গুণগত পার্থক্য -সেটির কারণ মূলত শিক্ষা। এজন্যই সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবকে ফেরেশতাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর রূপে গড়ে তোলার কাজটি নামাজ,রোজা, হজ্জ ও যাকাত ফরজ করার মধ্য দিয়ে শুরু করেননি; শুরু করেছেন জ্ঞানার্জনকে ফরজ করে। ইকরা তাই পবিত্র কুর’আনের প্রথম শব্দ। ইকরা’র অর্থ পড়ো তথা জ্ঞানবান হও। নির্দেশ এখানে নিজেকে সুশিক্ষিত করার। মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত জ্ঞানের বরকতেই হযরত আদম (আ:) ফেরেশতাদের সেজদা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়েছিলেন। অপরদিকে জ্ঞানহীন মানুষ যে হিংস্রতায় ও বর্বরতায় বন্য পশুর চেয়েও অধিক নৃশংস ও বর্বর হয় -সে প্রমাণ তো ইতিহাসে প্রচুর।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশীগণ কতটা সফল হয়েছে নিজেদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে? যে শিক্ষা স্রেফ ডিগ্রি দেয়, কিন্তু দুর্নীতিমুক্ত করে না এবং সভ্য ও ভদ্র হতে শেখায় না -সেটি কি আদৌ শিক্ষা? যে জাতি দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বরেকর্ড গড়ে, ব্যর্থ হয় সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণে, এমন কি ব্যর্থ হয় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বুঝতে হবে সে জাতির সভ্য ও ভদ্র হওয়ার কাজটি দারুন ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থতাটি এখানে দেশের ভূমি, জলবায়ু, কৃষি ও শিল্পে নয়, বরং শিক্ষাব্যবস্থায়। দেশে গুম, খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতির ন্যায় দুর্বৃত্তির জোয়ারই বলে দেয় সভ্য মানব গড়ার কাজটি বাংলাদেশে হয়নি।
শিক্ষাব্যবস্থার সাফল্যের মূল্যায়নে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি ছাত্র, শিক্ষক বা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নয়। কত বছর এবং বছরে কত ঘন্টা ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে শিক্ষা দেওয়া হয় -সেটিও নয়। পিএইচডি বা সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে কতজন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলো সেটিও মাপকাঠি নয়। বরং সেটির মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ হলো, জাতির নৈতিক মেরুদন্ড কতটা মজবুত হলো, অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে দেশ কতটা শক্তিশালী হলো, কতজন মানুষ দুর্বৃত্তি থেকে মুক্তি পেয়ে সৎ চরিত্র পেল, কত জন বুদ্ধিবৃত্তিতে মেধার সামর্থ্য দেখালো এবং কতজন আবিস্কারক রূপে গড়ে উঠলো -সেগুলি। এক্ষেত্রে ব্যর্থতা বাড়লে নিছক ছাত্র, শিক্ষক ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি পাওয়াতে দেশের কল্যাণ বাড়ে না।
শিক্ষালয়েই নির্মিত হয় দেশবাসীর চরিত্র ও জাতির মেরুদন্ড। গড়ে তোলে তাদের যারা রাষ্ট্রের চালকের আসনে বসে।এজন্যই শিক্ষার ব্যর্থতার অর্থ রাষ্ট্রের বা সমগ্র জাতির ব্যর্থতা। শিক্ষা থেকেই জাতি পায় সৎ ভাবে বেঁচে থাকার ও সামনে এগুনোর দর্শন ও শক্তি। নির্মিত হয় জনগণের মন, মনন ও সংস্কৃতি। তাই নিছক ক্ষেত-খামারে ও কল-কারখানায় উৎপাদন বাড়ালে জাতি বাঁচে না, এজন্য জ্ঞানচর্চাকে গভীরতর করতে হয়। বিবেক বা আত্মার পুষ্টির জন্য সুশিক্ষার সুব্যবস্থা করতে হয়। নইলে দেহ নিয়ে বেঁচে থাকাটি সম্ভব হলেও অসম্ভব হয় মানবিক গুণে বেড়ে বেড়ে উঠা ও বাঁচা। মুসলিম রূপে বেড়ে উঠা তো নয়ই। এজন্যই সভ্য জাতিগুলির সর্বাধিক প্রায়োরিটি ও বিনিয়োগের খাত হলো শিক্ষাখাত। আর যারা ব্যর্থ ও অসভ্য তাদের পরিচয় মেলে তাদের অবহেলিত ও অনুন্নত শিক্ষাব্যবস্থা দেখে।
বাংলাদেশে শিক্ষাখাতই যে সবচেয়ে ব্যর্থ খাত -তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? দেশের ভোটচোর রাজনীতিবিদ, ঘুষখোর কর্মচারি, দুর্বৃ্ত্ত পুলিশ, অবিবেচক বিচারক এবং গুম-খুন-ধর্ষণের নায়কগণ তো গড়ে উঠেছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকেই। বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিপুল সংখ্যায় বেড়েছে। প্রায় প্রতিগ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু থানা পর্যায়ে নয়, বহু ইউনিয়নেও ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বহু জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ। শিক্ষাই সরকারি ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত। অথচ আজ থেকে শত বছর আগে সমগ্র পূর্ববাংলায় –যা আজকের বাংলাদেশ, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল না। ছিল না কোন মেডিকেল ও ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ। বিপুল হারে বেড়েছে ছাত্র-শিক্ষকের সংখ্যা। কিন্তু বেড়েছে কি ছাত্র-ছাত্রীদের চরিত্র, মানবপ্রেম ও দেশপ্রেম? বেড়েছে নেক কর্মে আগ্রহ? মজবুত হয়েছে কি জাতির মেরুদন্ড? বেড়েছে কি সততা, স্বনির্ভরতা, নৈতিকতা ও আবিস্কারের সামর্থ্য? বেড়েছে কি আত্মমর্যাদা? অথচ শিক্ষা-বিস্তারের সাথে সাথে সেগুলিও তো বেড়ে উঠা উচিত ছিল। দেশটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ২০টি দেশের একটি। এসব দুর্বৃত্তদের ক’জন নিরক্ষর? তাদের অধিকাংশই যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী -তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে? এ ব্যর্থতা দেশের কৃষি, শিল্প ও ব্যবসায়ীক খাতের নয়। বরং দেশের শিক্ষাখাতের।
সংকট দর্শনে এবং শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সমস্যা অনেক। তবে বড় সমস্যা অর্থাভাব নয়। বিদ্যালয় বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোর কমতিও নয়। বরং মূল সমস্যা শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, দর্শ নের ক্ষেত্রে। যা শেখানো হয় ও যে লক্ষ্যে শেখানো -সমস্যা সেখানে। কেন শিখবে ও শেখাবে এবং জ্ঞানার্জন কেন এতো অপরিহার্য -সে মৌলিক বিষয়গুলিই ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিক ভাবে শেখানো হয়নি। সে জ্ঞানটুকু থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি লাভের পর লেখাপড়ার পর্বটি শেষ হতো না। বরং আরো তীব্রতা পেত। তখন মানুষ আমৃত্যু ছাত্রে পরিণত হয়। তখন প্রতিটি গৃহ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। জ্ঞানের সন্ধানে শিক্ষার্থী তখন পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র-মহাসমুদ্র অতিক্রম করে। জ্ঞানার্জন তখন ফরজ ইবাদত গণ্য হয় এবং অজ্ঞ থাকা কঠিন পাপ গণ্য হয়। নকল করে পরীক্ষায় পাশের তাড়না যেদেশে প্রকট, বুঝতে হবে সেদেশে বিদ্যালাভের গুরুত্ব বুঝে উঠার কাজটি আদৌও হয়নি। তবে সে শিক্ষার সে গুরুত্ব বুঝতে হলে প্রথমে জীবনের মূল লক্ষ্য এবং ভিশন ও মিশন বুঝতে হয়। সেকাজটিও হয়নি। এমন অজ্ঞ মানুষেরাই বড় বড় ডিগ্রি পায়, কিন্তু শিক্ষিত হয়না। সভ্যও হয়না। এরাই বরং দুর্বৃত্ত হয়। বাংলাদেশের দুর্বৃত্তরা বিপুল সংখ্যায় বেড়ে উঠেছে তো এই ডিগ্রিধারীদের মধ্য থেকেই; নিরক্ষরদের মধ্য থেকে নয়। দেশটির শাসন তো এরূপ ডিগ্রিধারী দুর্বৃত্তদের হাতেই। বাংলাদেশের মূল সমস্যা তো এখানেই।
সাড়ে ১৪ শত বছর আগে মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতাটির নির্মাণ কাজের যখন শুরু হয়েছিল তখন বাংলাদেশের আজ একটি জেলায় যত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা আছে তার সিকি ভাগও ছিল না। যত বই-পুস্তক ও শিক্ষাসামগ্রী নিয়ে আজ বিদ্যাবিতরণের আয়োজন -সেটিও ছিল না। সেদিন দারিদ্র্য ও অপ্রতুল অবকাঠামো নিয়ে মানবতায়-সমৃদ্ধ মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মাণ সম্ভব হলেও বাংলাদেশে আজ কেন তা হচ্ছে না -সেটি এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। চিন্তাশীল মানুষের উচিত তা নিয়ে ভাবা এবং সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা। আমাদের জাতীয় জীবনের এটি এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এর সাথে জড়িত আমাদের বাঁচামরা।
ট্রেনের গতি, আসন বা সেবার মান বড় কথা নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো সেটি কোন দিকে যাচ্ছে সেটি। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে একটি অসৎ উদ্দেশ্যে চালু করেছিল ঔপনিবেশিক বৃটিশ। প্রণীত হয়েছিল, ঔপনিবেশিক শাসনের একনিষ্ঠ সেবাদাস তৈরীর কাজে। সেটি তারা গোপনও রাখেনি। এ শিক্ষায় শিক্ষিতরা রক্তমাংশে ভারতীয় হলেও বৃটিশের বিশ্বস্ত দাস হওয়াকে যে সম্মানজনক ভাববে -সেটিই ছিল এ শিক্ষার মূল লক্ষ্য। চরিত্রবান মানুষ সৃষ্টি হোক -সেটি উপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকেরা শুরু থেকেই চায়নি। কারণ তারা জানতো, সুশিক্ষিত চরিত্রবান মানুষদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের গোলাম বানানো যায়না। বরং এরূপ মানুষেরা বিদেশী শাসনের দুশমনে পরিণত হয়। তাতে উপনিবেশিক শাসন বাঁচে না। তাই ব্রিটিশেরা শিক্ষাকে বিবেক হত্যার হাতিয়ারে পরিনত করে।
বৃটিশ শিক্ষামন্ত্রী লর্ড মেকলে বৃটিশ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ভারতে শিক্ষানীতি কীরূপ হওয়া উচিত তা নিয়ে সগর্বে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এ শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষিতরা রক্তেমাংসে ভারতীয় হলেও তারা ইংরেজ স্বার্থের বিশ্বস্থ পাহারাদার হবে। সে লক্ষ্য অর্জনে ইংরেজ শাসকগণ সফলও হয়েছিল। এরা নিজেদেরকে বৃটিশ শাসনের ‘মোস্ট-অবিডিয়েন্ট সার্ভেন্ট’ রূপে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেনি। সাম্রাজ্যবাদী শাসনের পক্ষে তারা যে শুধু কলম ধরেছে এবং অফিস আদালতে কাজ করেছে -তাই নয়; দেশে-বিদেশে তাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করেছে, অস্ত্র ধরেছে এবং যুদ্ধে প্রাণও দিয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় আড়াই লাখ ভারতীয় মুসলিম সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের সাম্রাজ্য বাঁচাতে যুদ্ধ করেছে। এমন কি নিজ দেশে বিদেশী ডাকাতদের শাসন বাঁচাতে বহু হাজার স্বদেশীকে হত্যা করেছে। এরা নিরপরাধ মানব হত্যায় এমনকি ইরাক, ফিলিস্তিন, আফ্রিকা, ইন্দোচীনসহ নানা দেশে গেছে। সাম্রাজ্যবাদীদের দেওয়া মজুরি, পদবী ও উপঢৌকনকে এরা জীবনের বড় অর্জন ভেবেছে। অথচ একজন সভ্য মানুষ নিজ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং সে স্বাধীনতার সুরক্ষায় শুধু শ্রম, অর্থ, মেধা দেয় না, এমনকি প্রাণও দেয়। শিক্ষাব্যবস্থার মূল লক্ষ্য তো এমন দেশপ্রেমিক মানবের সৃষ্টি। সে শিক্ষাব্যবস্থা তখন আত্মত্যাগে জনগণের সামর্থ্য বাড়ায়। কিন্তু বৃটিশগণ সে লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করিনি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গ্লাডস্টোন পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কুর’আন হাতে নিয়ে বলেছিলেন, “এই কুর’আন থেকে মুসলিমদের দূরে সরানো না গেলে মুসলিমদের উপর ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা দেয়া সম্ভব হবে না।” এবং কুর’আন থেকে মুসলিমদের দূরে সরানোর কাজে শিক্ষাব্যবস্থাকে তারা হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে। ইংরেজগণ তাই শুধু স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কুর’আন শিক্ষা অসম্ভব করেনি, অসম্ভব করেছে মাদ্রাসাগুলিতেও। সে লক্ষ্যে তারা সেক্যুলার স্কুল-কলেজের পাশাপাশি মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করেছিল। কলিকাতায় প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের প্রথম আলিয়া মাদ্রাসাটি তাই আলেমদের প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং ইংরেজদের। এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল মাদ্রাসা শিক্ষার নামে মুসলিমদের কুর’আন থেকে দূরে সরানো। ইংরেজদের সে কুর’আন বিরোধী প্রকল্প এতোটা সফল হয়েছে যে, কুর’আন শিক্ষা বলতে এমন কি আলেমগণও স্রেফ কুর’আনের তেলাওয়াত শেখা বুঝায়। এবং কুর’আন বুঝার সামর্থ্য সৃষ্টি নয়। ফলে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কুর’আন তেলাওয়াত হলেও কুর’আন বুঝার কাজটি হয়না।
১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান হলেও বেঁচে আছে তাদের প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা। ফলে অব্যাহত রয়েছে কুর’আন থেকে ছাত্রদের দূরে সরানোর প্রকল্প। অথচ কুর’আন থেকে যারা দূরে সরে তারা আর ইসলামের পক্ষের থাকে না, পরিণত হয় কঠোর শত্রুতে। পাকিস্তান বা পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানুষ নিজ দেশে ও নিজ ধর্মে অঙ্গীকারহীন এসব বৃটিশ-সেবাদাসদের শাসন থেকে মুক্তি পায়নি। বাংলাদেশে এরা ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেয়াটিও সাংবিধানিক ভাবে অসম্ভব করেছে। ইসলামপন্থীদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ইসলামকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার লক্ষ্যে কোন রাজনৈতিক দল গড়লে সে দলের নিবন্ধন দেয়া হয় না। ফলে কিছু রাস্তাঘাট, স্বুল-কলেজ ও শিল্প-করখানা নির্মিত হলেও শিক্ষার মূল লক্ষ্যে পরিবর্তন বা সংস্কার আসেনি। কারণ, এ জন্য তো রাজনৈতিক অঙ্গিকার চাই। সেটি না থাকাতেই শিক্ষাব্যস্থায় সংস্কার আসছে না। ফল বার বার ভূগোল বা সরকার পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন আসেনি শিক্ষিতদের বাঁচবার লক্ষ্যে ও রুচিবোধে। বিদেশী স্বার্থের সেবক তৈরীর যে লক্ষ্যে এটি প্রণীত হয়েছিল -এখনো সে কাজই অব্যাহত রয়েছে। এখন বিদেশী শাসন নাই, আছে বহুজাতিক বিদেশী কোম্পানী। সেগুলির সেবক হতে এরা বিশ্বের যে কোন দেশে যেতে রাজি। বাংলাদেশে এজন্যই দেশপ্রেমিক নাগরিকের প্রচণ্ড অভাব। অথচ অভাব হয় না বিদেশী এনজিও বা সংস্থার চর ও সেবাদাস পেতে।