নিজস্ব প্রতিবেদক
জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার পর গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদি সরকার ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের গুম করতে আয়নাঘর নামক অঘোষিত বিশেষ কারাগার তৈরি করেছে। বিভিন্ন কালো আইনোর মাধ্যমে ভিন্নমতের লোক ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিপীড়নের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তুলে নিয়ে গুম করছে। এসব গুমের ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘ থেকে আহ্বান জানানো হলেও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদি সরকার সেটা অগ্রাহ্য করে গুম-খুন অব্যাহত রেখেছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, প্রতিটি গুমের ঘটনা ভবিষ্যতে একদিন তদন্ত হবে এবং জড়িত প্রতিটি ব্যক্তিকে আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
সাউথ এশিয়ান পলিসি ইনিশিয়েটিভ ও গ্লোবাল ভয়েস ফর হিউমিনিটির উদ্যোগে এবং ইকুয়াল রাইটস ইন্টারন্যাশনাল বা ইআরআই সহ যুক্তরাজ্যে কর্মরত ২০টি মানবাধিকার সংগঠনের আয়োজনে বৃটিশ পার্লামেন্ট স্কয়ারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভে বক্তারা একথা বলেন।
আমার দেশ পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক অলিউল্লাম নোমানের সভাপতিত্বে এবং সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদক শামসুল আলম লিটনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি ও সিটিজেন রাইট্্স মুভমেন্টের আহ্বায়ক এম এ মলিক, প্রবীন শিক্ষাবিদ সৈয়দ মামনুন মোর্শেদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর প্রফেসর আবদুল কাদির সালেহ, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মুফতি শাহ মুহাম্মদ সদরউদ্দিন, মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব: জাকির হোসেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ব্যারিষ্টার তারিক বিন আজিজ, সোসাইটি ফর ডেমোক্রেটিক রাইট্্স-এর সভাপতি ব্যারিষ্টার ইকবাল হোসাইন, সেক্রেটারি ব্যারিষ্টার আলিমুল হক লিটন, মেজর অব সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।
ই আর আইয়ের সেক্রেটারি নওশীন মোস্তারী মিয়া সাহেব বলেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাশীল আওয়ামী সরকার কর্তৃক বর্তমানে যে গুমের সংস্কৃতি চালু রয়েছে তার অবসানের জন্যে এবং যারা গুমের শিকার তাদেরকে তাদের পরিবারের কাছে যাতে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় তার জন্যে আমরা জাতি সংঘ সহ আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করি জাতি সংঘ সহ আন্তর্জাতিক মহল বর্তমান বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে গুম কৃত ব্যাক্তিদের অতিসত্বর ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবে।
ই আর আইয়ের সহ সভাপতি মোঃ রোকতা হাসান বলেন, বাংলদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যাতে বর্তমান এই আওয়ামী সরকার কর্তৃক নতুন করে কেউ গুমের শিকার না হয় তার জন্যে জাতি সংঘ, যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্ববাসীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ই আর আইয়ের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদুল হাসান বলেন, স্বৈর শাসকদের অনেকগুলো বৈশিষ্টের মধ্যে একটা ভয়ংকর বৈশিষ্ট্য হলো জুজুর ভয়। তাই গুম খুনের মাধ্যমে জনগণের মাঝে সেই ভীতি সৃষ্টি করে তারা তাদের ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করে। তাই আমি বাংলাদেশের এই স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন চাই। তবেই এই গুম খুন বন্ধ হবে।
ই আর আইয়ের সংগঠনটির যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বলেন আজকের এই গুম দিবসে একজন মানকবাধিকার কর্মী হিসাবে আমার একটাই দাবী, এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বাসা থেকে তুলে নিয়ে আয়না ঘর নামক গোপন বন্ধিশালায় গুম করে রাখা ব্রিগ্রেডিয়ার আজমী এবং ব্যারিস্টার আরমান সহ সবাইকে যাতে অতিসত্বর মুক্ত করে দেয়া হয়।
ই আর আইয়ের সহ সভাপতি মোঃ ওসমান গনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতা আসার পর থেকে আজ অবধি ৬০০ ও বেশি লোক গুমের শিকার হয় যাদের অনেককে খুন করা হয় এবং এখনো প্রায় ১০০ মতো লোক নিখোঁজ। যাদের অধিকাংশ লোক সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুমের শিকার হয়। আমরা চাই এই নিখোঁজ বাক্তিদেরকে সরকার যাতে অতিসত্তর তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে।
ই আর আইয়ের সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি মাহমুদ হোসাইন তার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমি নিজেই এই ফ্যাসিস্ট হাসিনার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুমের শিকার হয়েছিলাম। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে আমাকে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে হলো। যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই যে আজকে এমন একটা মুক্ত আকাশের নিচে আমাকে আশ্রয় দেয়ার জন্যে।
ই আর আইয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ ফাহিদুল আলম বলেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বিরোধী দলের নেতা চৌধুরী আলম, এম ইলিয়াস আলীসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে গুম করেছে। বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে, তাদের স্বজনরা জানেন না কোথায় কিভাবে রয়েছেন তারা।
উক্ত মানব বন্ধন ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন
আনোয়ারুল আমিন,তাহমিনা আক্তার, তানভির উর রশিদ, কয়ছর রশিদ, সালেহ হোসাইন, আবু ছালেহ, হৃদয় ঘোষ, মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, নাইমুল ইসলাম রিফাত, আজিজুল রহমান, তানভীর শিপন, আবদুল্লাহ আল জাবির, মো শাহাদাৎ হোসেন, সানজিয়া চৌধুরী, মোঃ আশিক নূর পাপ্পু, মোহাম্মদ ইমরান আহমদ, মোহাম্মদ বদরুল ইসলাম প্রমুখ।