বিশ্ব বরেণ্য ইসলামিক স্কলার ও মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী স্মরণে লন্ডনে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের দাওয়াতে বিগত অর্ধশতাব্দী আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যে অবদান রেখে গেছেন সেটা ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে। আল্লামা সাঈদী ছিলেন দ্বীনের নির্মূল এক খাদেম ও দ্বায়ী ইলাল্লাহ। কোরআনের তাফসীরে তাঁর দরদী ভাষা ও মাধুর্যতা মানুষকে শুধু আকৃষ্টই করে নাই, দ্বীনের আলো পৌঁছে গেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে। আল্লামা সাঈদী’র জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও কোরআনকে মানুষের অন্তরে প্রাণবন্ত ভাষায় রেখে গেছেন শতশত বছরের জন্য।বক্তারা বলেন, ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা এবং কোরআন মানব জীবনের সংবিধান এই কথাটি আল্লামা সাঈদী’র মতো তাফসীর মাহফিলে মানুষের হৃদয়ে গেঁথে দিতে পারেননি। আল্লামা সাঈদী মানুষকে বুঝিয়েছেন ইসলাম ছাড়া মানুষের জীবন পরিপূর্ণ নয়।ইসলাম সকল অন্ধকারের বিপরীতে তারুণ্যকে আলোর পথ দেখাতে পারে।
কমিউনিটি ও ইসলামিক ব্যক্তিত্ব দিলওয়ার হোসেন খানের পরিচালনায় মুসলিম ভয়েস এর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (৩১) আগস্ট লন্ডন মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুসলিম এসোসিয়েশন এর কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট মুসলেহ ফারাদী, ইস্ট লন্ডন মসজিদের ঈমাম ও খতিব মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম,,বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ও আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক,ইসলামীক ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু নাসের মোহাম্মদ আব্দুজ জাহের, ইউকে বাংলাদেশী উলামা-মাশায়েখ কমিটির প্রেসিডেন্ট শায়খ মওদুদ হাসান, টাওয়ার হ্যামলেট’স কাউন্সিলের স্পীকার কাউন্সিলর জাহেদ চৌধুরী, শ্রীলঙ্কান মুসলিম কমিউনিটি-বৃটিশ মুসলিম সোসাইটির অন্যতম সদস্য আনসার মোহাম্মদ মাহির, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল কাদির সালেহ, টোটেনহ্যাম মসজিদ আয়সা’র ইমাম ও খতিব মাওলানা খিদির হুসাইন, প্লাস্টো মসজিদ ইব্রাহিম এর ইমাম ও খতিব আবু বক্কর সাজ্জাদ, মুসলিম ভয়েস এর কনভেনার নাহিদ মাহফুজ প্রমুখ।
বক্তারা আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসির ও সাবেক সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’র মাধ্যমে বিগত পাঁচ দশকে ইসলামের দাওয়াত ও ইসলামী আন্দোলনকে জনপ্রিয় করতে যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন সেটার উল্লেখ করে বলেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৪ এবং ২০০৪ সালে ইস্ট লন্ডন মসজিদের জন্য তহবিল সংগ্রহে পবিত্র কাবা’র ইমাম ও খতিব শায়খ আবদুল রহমান সুদাইস এর সাথে যোগদান করেন।
মুসলেহ ফারাদী বলেন, আমি বাংলাদেশের বৃহত্তর নোয়াখালীর ফেনীতে মাওলানা সাঈদীর সাথে প্রথম দেখা করি।তিনি বহু মানুষকে নানাভাবে মুগ্ধ করেছেন।তাঁর জানাজার পর শেষ বিদায় জানাতে প্রার্থনা করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক উপস্থিতি প্রমান করেছে তিনি যখন সংসদ সদস্য ছিলেন তখন প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর অবদান প্রমাণিত। ইসলামের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তীব্র প্রতিবাদে তিনি কখনো
পিছপা হননি।তার প্রতি যা করা হয়েছিল তা ছিল অবিচার ও বিচারের নামে মহা অন্যায়।কথিত আদালত যখন তাঁর মৃত্যুদণ্ডের অন্যায় রায় দেয়, তখন সে রায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ জীবন দিয়েছিলো। তাঁর অবদানেই বাংলাদেশে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের এতো জনপ্রিয়তা।
মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম বলেন,আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন উচুমানের ইসলামিক সুবক্তা দার্শনিক ছিলেন। প্রচুর সময় নিয়ে পড়াশোনা করতেন। বাড়িতে তার একটি বিশাল লাইব্রেরি আছে, খুব গভীরভাবে কুরআন অধ্যয়ন করে এবং এটি তাকে এত উচ্চ পদে নিয়ে আসে। তিনিই বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোরানকে সম্প্রদায় ও সামাজিক ব্যবস্থার কেন্দ্র হিসেবে নিয়ে আসেন। ১৯৭৫ সাল থেকে জেলে যাওয়া পর্যন্ত আমরা তার সাথে অনেকবার দেখা করেছি। মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক কাজ আজ্ঞাম দিয়ে গেছেন। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান।
ইমাম খিদির হুসাইন বলেন মাওলানা সাঈদী ছিলেন সমাজের পরিবর্তনের কারিগর, তাঁর আশ্চর্যজনক বক্তব্য, দোকান, ব্যবসা, অফিস, বাড়িতে সর্বত্র তাঁর ক্যাসেট বাজিয়েছেন আপামর জনতা। তিনি হক, সত্য, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সারাজীবন ওয়াজ করেছেন, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপস করেননি। সমাজের অন্যায়, অনৈতিকতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। ভূ-রাজনীতি, স্থানীয় জ্ঞান, সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান রয়েছে, ১৯৮০ সালে তাহার দেওয়া বক্তৃতা শুনলে যেন মনে হয় তিনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে কথা বলছেন।
অধ্যাপক আব্দুজ জাহের বলেন ১৯৭২ সাল থেকে আল্লামা সাঈদীকে চিনি।আমি ১৯৭২ সালে চাঁদপুর কোর্টে একটি তাফসীরুল কুরআনে প্রধান অতিথি হিসাবে তার সাথে দেখা করি। তিনি আমাকে টানলেন, আমি তার আসন্ন স্পর্শ শুনলাম এবং তার সাথে একসাথে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম। তিনি শুধুমাত্র কুরআন প্রচারের জন্য বাংলাদেশের বৃহত্তর সমস্ত জেলা ভ্রমণ করেছিলেন। আমি যখন বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাসে সেক্রেটারি ছিলাম তখন অনেক আরব তাকে খতিব, আল্লামা, শেখ বলে আখ্যায়িত করেছিল। তিনি বদলে দিয়েছেন মানুষের রুচি, কুরআনের বর্ণনায়। সাধারণ শিক্ষার লোকেরা অল্প সময়েই নামাজের অভ্যাস করে, কিন্তু আল্লামা সাঈদীর অবদানের কারণে তারা কোরানকে বুকে নিয়েছিল। ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। তিনি কুরআনের জন্য কাজ করেন, কুরআনের জন্য মৃত্যুবরণ করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কুরআনের সাথে থাকেন।
শেখ মওদুদ হাসান বলেন আল্লামা সাঈদী শুরু করেছিলেন জনপ্রিয় স্লোগান, আল-কুরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বাল। আজ প্রতিটি ঘরে ঘরে সেই আলোয় আলোকিত করেছেন তিনি।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সীরাত সম্মেলনে তার সঙ্গে দেখা হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়।যুক্তরাজ্যে কুরআন প্রচারে তার অবদান অপরিসীম, মসজিদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা। ইসলামের জন্য জীবন দিয়েছেন। আল্লাহ তার অবদানকে কবুল করুন, আমীন।
আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী (রঃ) এর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সিদ্দিকী বলেন ২০১৩ সালের ১৯ জুন আল্লামা সাঈদীর কে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় এবং তারপর তাকে মানবতার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়। আমি তাকে বাংলাদেশ হাইকোর্টে ডিফেন্ড করেছি এবং প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে, যে তিনি নির্দোষ, তার প্রতি মিত্যা অপবাদ ও জুলুম করা হয়েছে। তাকে রক্ষা করার জন্য সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। তিনি প্রতি মুহূর্তেই মর্টার হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। জাতির কাছে প্রমাণ করতে পেরেছি তিনি নির্দোষ।
বক্তারা আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর মাগফিরাত কামনা করে আরও বলেন তিনি জাতীয় সংসদে শিরকী প্রথার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন। সমাজ সেবায়ও তার অসংখ্য ভূমিকা রয়েছে। দেশ বিদেশে তার অগণিত ভক্ত রয়েছে। তিনি কারাবন্দী অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। তার ইন্তিকালে জাতি একজন ইসলামী স্কলার ও কুরআনের খাদেমকে হারিয়েছে । যা পূরণ হবার নয়।
অনুস্টানের মাঝেমাঝে মেসেজ কালচারাল গ্রুপের পক্ষ থেকে ইসলামিক নাশিদ পরিবেশন করা হয়।