বিদায়ী নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ
লন্ডন, ২১ নভেম্বর: বাংলাদেশ সেন্টারের বিদায়ী কমিটির দায়িত্ববানদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন ভোটাধিকার বঞ্চিত সদস্যরা। ২১ নভেম্বর লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলরনের আয়োজন করে তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায় ও অসাংবিধানিকভাবে তাদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এজন্য বিদায়ী কমিটির কতিপয় দায়িত্ববানকে তাঁরা দায়ী করেন। আগামী ২৬ নভেম্বর রোববার বাংলাদেশ সেন্টারের নির্বাচন।
বাংলাদেশ সেন্টারের ভোটাধিকার বঞ্চিত সদস্যরা। ‘বাংলাদেশ সেন্টারের নির্বাচনে ভোটাধিকার বঞ্চিত করার প্রতিবাদ’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদ্যমান নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে কতিপয় দায়িত্ববান নিজেদের মনগড়া নিয়মে মেম্বারশিপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিজেদের পছন্দের মানুষকে সদস্য বানানোর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ সেন্টারকে নিজেদের দখলে রাখার পায়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। তালিকায় সাধারণ সদস্য, লাইফ মেম্বার ও পার্মানেন্ট মেম্বার মিলিয়ে নবাগত মোট ৪৪ জনের নাম নেই বলে অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন – শামসুল হক ইয়াহিয়া। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মোহাম্মদ ইফতেখার আহমেদ (শিপন), আনোয়ার আহমেদ ও আশিকুর রহমান প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘বিগত মেয়াদে যারা পরিচালনা কমিটিতে ছিলেন তারা আবারও প্রার্থী হয়েছেন। ‘রেড অ্যালায়েন্স’-এর ব্যানারে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। মূলত নির্বাচনে নিজেদের হারের ঝুঁকি কমাতে বিদায়ী কিমিটির কিছু সদস্য কমিটিতে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে আমাদের নাম অন্যায়ভাবে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে।’
তাঁরা বলেন, ‘আমরা নবাগত সদস্য। আমরা কারো পক্ষে বা বিপক্ষে নই। আমরা বাংলাদেশ সেন্টারের কল্যাণের পক্ষে। আমরা চাই সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন- যে নির্বাচনে বাংলাদেশ সেন্টারের সদস্যরা নিজেদের পছন্দমত যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন।’
নিজেদের বাংলাদেশ সেন্টারের মেম্বার দাবি করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তারা বলেন, ২০২০ সালের জুন ও জুলাই মাসে তাঁরা নির্ধারিত আবেদন ফি পরিশোধসহ আনুসঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশ সেন্টারের সদস্য হওয়ার আবেদন করেন। যথযাথ প্রক্রিয়া মেনে আবেদন গ্রহণ করে সেন্টার কর্তৃপক্ষ। আবেদন প্রত্যাখাত হলে তা সংশ্লিষ্টদের জানানোর কথা এবং আবেদন ফি ফেরত দেয়ার কথা। কিন্তু বিগত প্রায় সাড়ে তিন বছরেও তাদের কিছু জানানো হয়নি এবং ফি-ও ফেরত দেয়া হয়নি। ফলে তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন যে আবেদন সফল হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় তাদের নাম নেই। এটি বাংলাদেশ সেন্টারের সম্পূর্ণ সংবিধান বহির্ভূত এবং গুরুতর অন্যায় বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশ সেন্টারের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখিত সদস্যপদের নিয়ম অনুযায়ী, আমাদের আবেদন প্রত্যাখাত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের ৪৪ জনের আবেদন ফি বাবদ পরিশোধিত ৭ হাজার পাউন্ডের বেশি সেন্টারের একাউন্টেই জমা আছে।”
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, “গত ১৯ নভেম্বর রোববার ‘রেড এলায়েন্স’র এক সভায় বাংলাদেশ সেন্টারের বিদায়ী কমিটির জেনারেল সেক্রেটারিসহ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বাংলাদেশ সেন্টারের কিছু সদস্য ও শুভাকাঙ্খী আমাদের মেম্বারশিপের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে বিদায়ী কমিটির ওইসব নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আমরা নাকি ফটোকপি ফরমে আবেদন করেছি। তাই নির্বাহী কমিটির (ইসি) সভায় আমাদের আবেদনগুলো বাতিল করা হয়েছে। এরপর কাউন্সিল মিটিংয়েও নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। তারা আরও দাবি করেছেন, মেম্বারশিপ ফি জমা দেয়ার নিয়ম নেই। আমরা কেন মেম্বরশিপ ফি জমা দিলাম? আমাদের আবেদন ফরমগুলো কোথায় আছে সেটা তারা জানেন না। যেহেতু ফরম তাদের কাছে নেই, তাই তারা বাতিল হওয়া আবেদনের ফি-ও ফেরত দিতে পারছেন না।”
বিদায়ী কমিটির উপরুক্ত ব্যাখ্যার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁরা বলেন, “প্রথমমত, আমরা ফটোকপি ফরমে আবেদন করিনি। বাংলাদেশ সেন্টারের মেম্বারশিপ সেক্রেটারির মাধ্যমে মূল ফরম সংগ্রহ করে আবেদন করেছি। ওইসব আবেদনপত্র মেম্বারশিপ সেক্রেটারির কাছেই আমরা জমা দিয়েছি। আবেদন যদি ঠিকঠাক না হয় তাহলে অফিস কর্তৃপক্ষ কীভাবে ওইসব আবেদন গ্রহণ করেছিলেন? তারা বলেছ্নে, আবেদনপত্রের সঙ্গে আবেদন ফি জমা দেয়ার নিয়ম নেই। অথচ আবেদনপত্রেই ফি জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা উল্লেখ রয়েছে। তাদের দাবি মত আমাদের আবেদন যদি বাতিল হয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি আমাদের জানানোর কথা। সাড়ে তিন বছরেও কেন সেটি তারা জানাতে ব্যর্থ হলেন?”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাতিল হওয়া মেম্বারশিপ আবেদন ফরমগুলো কোথায় সেটি না জানার কারণে ফি ফেরত দিতে না পারার ঘটনা যদি সত্যি হয়, সেটি আবেদনকারী এবং বাংলাদেশ সেন্টারের জন্য চরম উদ্বেগের। কারণ এসব ফরমে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্যের গুরুত্ব বিবেচনায় যুক্তরাজ্যে ডাটা প্রোটেকশন আইন আছে। ফলে আবেদনকারী ও সদস্যদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেন্টার আইনগতভাবে বাধ্য। ফরমগুলোর হদিস না পাওয়ার ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে বাংলাদেশ সেন্টারের বিদায়ী কমিটির দায়িত্ববানরা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন এবং ডাটা প্রোটেকশন আইনের লঙ্ঘন করেছেন। যার দায়ভার তাদের নিতে হবে।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনের খবর জানাজানি হওয়ার পর বিদায়ী কমিটির অনুগত কয়েকজন সদস্য অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাছে দুটি ভিন্ন তালিকা পাঠিয়েছেন দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এর একটি তালিকায় আছে যাদের মেম্বারশিপ আবেদন বাতিল হয়েছে তাদের নাম। অপর তালিকায় আছে যাদের আবেদন গৃহীত হয়েছে এবং অপেক্ষমান রয়েছেন তাদের নাম।
এসব তালিকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “এসব তালিকায় দেখা যাচ্ছে যারা মেম্বারশিপ ফি পরিশোধ করে আবেদন করেছেন তাদের আবেদন বাতিল করা হযেছে। আর যারা ফি জমা দেননি তাদের আবেদন গ্রহণ করে অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে। অথচ মেম্বারশিপ ফরমেই আবেদন ফি জমা দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে এবং যে কোনো সংগঠনের জন্য এটাই প্রচলিত নিয়ম।” কমিটি সংবিধান ও ফরমে উল্লেখিত নিয়মের তোয়াক্কা না করে কীভাবে মনগড়া এমন সিদ্ধান্ত নিলো- সেই প্রশ্ন তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ওই দুটি তালিকায় দেখা যাচ্ছে- তারা ২০২০ সালের জুন/জুলাই মাসে আবেদন করলেও তাদের অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়নি। অথচ তাদের পরে যারা আবেদন করেছেন; এমনকি ২০২১ সালেও যারা আবেদন করেছেন তাদেরকে অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ২২ জন রয়েছেন যাদের মেম্বারশিপ ইতিমধ্যে অনুমোদন হয়ে গেছে। অথচ বিদায়ী কমিটির কতিপয় দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ বলছেন, যারা আগে আবেদন করবে তাদের আগে মেম্বার হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। এটা বাংলাদেশ সেন্টারের ওইসব বিদায়ী নেতৃবৃন্দের স্বেচ্ছাচারিতা ও মনগড়া আচরণের নির্লজ্জ উদাহরণ।
“বিদায়ী কমিটির কেউ কেউ দাবি করছেন, যেহেতু ৫শ জন মেম্বারের বেশি নেয়ার সুযোগ নেই, তাই অতিরিক্ত আবেদনকারীদের অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে। বিদ্যমান ৫শ মেম্বার থেকে কেউ মৃত্যুবরণ করলে সংশ্লিষ্ট স্থানে অপেক্ষমান তালিকা থেকে সদস্য অন্তর্ভূক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে যারা আগে আবেদন করেছেন তারা আগে মেম্বার হওয়ার সুযোগ পাবেন।” এমন নিয়মকে ‘নিষ্ঠুর এবং জঘণ্য’ মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “আমরা বাংলাদেশ সেন্টারের মেম্বার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হতে হলে আরেকজন মেম্বারের মৃত্যুর অপেক্ষা হবে? কতটা অমানবিক হলে মানুষ এমন নিয়ম জারি রাখতে পারে?”
ভোটাধিকারের বিষয়ে আবেদন জানিয়ে তারা গত ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সেন্টারের সভাপতি যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনকে ইমেইল করেছিলেন। বাংলাদেশ সেন্টারের মেম্বারশিপ সেক্রেটারিকেও হাইকমিশনারের কাছে প্রেরিত ইমেইলের অনুলিপি পাঠানো হয় জানিয়ে তারা বলেন, দীর্ঘ প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও তাদের কাছ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমাদের পূর্ব-পুরুষ ও মুরব্বিরা নিজেদের শ্রমে-ঘামে এই বাংলাদেশ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের কল্যাণের জন্য। এটি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের অন্যতম প্রধান নিদর্শন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে এই সেন্টারের ইতিহাস যুক্ত রয়েছে। অথচ পদলোভী কতিপয় ব্যক্তির কারণে বাংলাদেশ সেন্টার আজ এর মূল লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। কতিপয় ব্যক্তি কমিউনিটিতে নিজেদের পরিচয় দাঁড় করানোর সিঁড়ি হিসেবে এই সেন্টারকে ইচ্ছামাফিক ব্যবহার করছেন। এর মাধ্যমে তারা কেবল বাংলাদেশ সেন্টারকে ধংস করছেন না; তারা আমাদের পূর্ব-পুরুষ ও মুরব্বিদের প্রতি চরম অশ্রদ্ধার পরিচয় দিচ্ছেন। এদের কর্মকাণ্ড থেকেই স্পষ্ট যে, এরা অযোগ্য এবং বাংলাদেশ সেন্টারের নেতৃত্ব দিতে চরমভাবে ব্যর্থ। তাদের স্মরণ রাখা উচিত বাংলাদেশ সেন্টার যুক্তরাজ্যে সকল বাংলাদেশিদের অহংকারের প্রতীক। বাংলাদেশ সেন্টার নিয়ে কতিপয় এসব ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। এরা নিজেদের পছন্দের মানুষকে সদস্য বানানোর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ সেন্টারকে নিজেদের দখলে রাখার পায়তারা করছেন।”
বাংলাদেশ সেন্টারের সভাপতি যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের প্রতি বিণীত অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন- “আপনি বাংলাদেশ সেন্টারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। বাংলাদেশ সেন্টারের সভাপতি হিসেবে আমাদের সদস্যপদের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।”
তারা বলেন, “আমরা নির্বাচনের বিপক্ষে নই। আমরা কোনো ব্যক্তি বা প্রার্থীর বিপক্ষেও নই। আমরা চাই সুষ্ঠু ও সুন্দুর নির্বাচন। এই সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনে কোনো ব্যাঘাত ঘটুক কিংবা দিনক্ষণ পরিবর্তন হোক সেটাও আমরা চাই না।
—