পাণ্ডুলিপি প্রকাশন এর আয়োজনে যুক্তরাজ্য প্রবাসী, বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হেনা বেগম-এর সাথে লেখক-পাঠক ও সুহৃদ আড্ডায় বক্তারা বলেন—মানুষের চিন্তা, ভাব, আবেগ, অনুভূতি, কল্পনা- এ সবই সাহিত্যের উপজীব্য। এগুলোকে সামনে রেখে মানুষ এগিয়ে যায় প্রগতির পথে। সমাজ পরিবর্তনশীল। সমাজের সর্বত্র প্রতিনিয়ত রদবদল হচ্ছে।ফলে মানুষের জীবনাচরণেও সেই ধরনের পাল্টা হাওয়া লক্ষণীয়। সাহিত্যের ভূমিকা শুধু অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভবিষ্যৎ পৃথিবী কেমন চাই তারও একটি ইশারা দেয় সাহিত্য।সাহিত্যচর্চার ফলে মানুষের জৈবিক ও আত্মিক- এ দুই সত্তারই উৎকর্ষ সাধন হয়। সাহিত্য ব্যক্তিকে মার্জিত করে তোলে এবং আবেগ, অনুভূতি ও মূল্যবোধকে জীবনের সামগ্রী করে নেয়ার প্রেরণা জোগায়। সুন্দর মনের সুন্দর মানুষ ছাড়া সাহিত্যচর্চা কোনোদিনই সফল হতে পারে না।
গত ৩ জানুয়ারি ২০২৪খ্রি., বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় পাণ্ডুলিপি প্রকাশন-এর প্রকাশক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সলের সভাপতিত্বে জমজমাট আড্ডায় সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রিন্সিপাল কবি কালাম আজাদ,কবি,শিক্ষাবিদ ও সংগঠক
কর্নেল (অব.)সৈয়দ আলী আহমদ,বর্ষীয়ান সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক মুহাম্মদ ফয়জুর রহমান,যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক মোঃ আব্দুল মুনিম জাহেদী (ক্যারল),কবি, কবি ও সংগঠক রাহনামা শাব্বীর চৌধুরী (মনি),কবি ও গল্পকার শাহেদা রশীদ পপি।
বক্তারা আরো বলেন : মনকে সুন্দর ও সজীব করে তোলে সাহিত্য। সাহিত্য মানে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা, জীবনে জীবন যোগ করা। এই চেতনাই সমাজের উন্নয়নের মূল বিষয়। কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, বিচারহীনতা- এসব সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরম শত্রু এবং সমাজ-প্রগতির প্রবল বাধা।মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ, কথা ও কাজের মিল, পোশাক-পরিচ্ছদ, ব্যবহার, বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা- এগুলোও সাহিত্যের অংশ। বাহ্যিক অবয়ব কখনও মানুষের যথার্থ পরিচয় বহন করে না। মানুষের মনুষ্যত্বই প্রধান।সাহিত্য সত্য, সুন্দর, আনন্দময় অনুভূতিতে পাঠক হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিও পেতে পারে মহৎ জীবনের আভাস। পাষাণবৎ মানুষও নতুন করে খুঁজে পায় মনুষ্যত্ব। কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে সাহিত্যপাঠ হতে পারে একটি কৌশল।
বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হেনা বেগম-এর সাথে একটা জমজমাট আড্ডায় এখানে বিভিন্ন বয়সী স্বজন সুজন এবং প্রিয়জনদের আন্তরিক উপস্থিতি দেখা যায়।আসলে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার আনন্দে বাঙালির কোনো ক্লান্তি নেই। নেই একঘেয়েমিতা।জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা থেকে শুরু করে ভ্রমণ বর্ণনা, রোমাঞ্চ, প্রেম, দেশ, ভাষা, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, চলচ্চিত্র, সমসাময়িক প্রসঙ্গ, সমাজ, শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত এর যেকোনো কিছুই হতে পারে আড্ডার উপাদান।আড্ডা মানুষের জীবনে কিছুটা প্রশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। বুধবার সন্ধ্যার পর প্রিয়ভাজনদের সাথে সিলেট নগরীর হোটেল ডালাসের কনফারেন্স হলে জমে উঠে এক মনোমুগ্ধকর আড্ডা।সেখানে খোশ-গল্প, অ্যাডভেঞ্চার, রোমান্স, সমসাময়িক প্রসঙ্গের পাশাপাশি নিজেদের ভালোলাগাবিষয়ক আলোচনা হয় এবং আড্ডা, গল্প, কথা ও হাসিতে সময় পার…
আজকের এই কর্পোরেট ভুবনে আবেগের কোন মূল্য নেই। শুধু অর্থ, যশ আর প্রতিপত্তির পিছে লাগামহীনভাবে ছুটছে সবাই।অনেক ক্ষেত্রে আজ আবেগশূন্য এই পারস্পরিক সম্পর্ক। নতুন করে কি ঘরোয়া আড্ডা আমরা আবার কিছুটা ফিরে পেতে পারি না! কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই’। না, ইচ্ছা করলেই কিন্তু আমরা সেই পুরনো আড্ডা, সেই পুরনো সংস্কৃতি নতুন করে প্রবর্তিত করতে পারি।আড্ডা কখনও একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে হয় না। আড্ডায় রয়েছে বহুলতা। রয়েছে সৃষ্টির তৎপরতা। এই বহুলতা বিষয়ে আড্ডা দিতে গিয়ে বহু বিষয়ের অজানা তথ্য জানা হয়। আড্ডা মানববন্ধন অটুট রাখে। পাওয়া যায় মত প্রকাশের সুযোগ। মতের পক্ষান্তরে মতামতও পাওয়া যায়। যা আমাদের ভাবতে শিখায়, সৃজনশীল হতে সাহায্য করে। আড্ডা স্থান বা কালের উর্ধে। মানসিক প্রশান্তি ছাড়াও আড্ডা যান্ত্রিকতা দূর করে একঘেয়ামি ভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।এছাড়াও আড্ডা মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে, আত্মোন্নতির বিকাশ ঘটায়। এই আড্ডা মানুষকে বাস্তববাদী হতে সাহায্য করে।
উল্লেখ্য : সিলেটের সাহিত্যপাড়ায় একসময় আড্ডা জমে উঠতো।দেশ-বিদেশের কবি-সাহিত্যিকেরা এই আড্ডায় শরিক হতেন।বাংলা সাহিত্যে আড্ডা নিয়ে অনেক স্মৃতিচারণ অনেকে লিখেছেন।সম্প্রতি পাণ্ডুলিপি প্রকাশন, সিলেট-এর আয়োজনে বেশ কয়েকটা লেখক-পাঠক ও সুহৃদ আড্ডা জমে উঠে।