ব্রিটেনের উচ্চ আদালতে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেড বনাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মামলায় কেয়ার হোমের লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স বিশাল সাফল্য লাভ করেছে। হাই কোর্টের তাৎপর্যপূর্ণ এই রায় কেয়ার কোম্পানি এবং কেয়ার কর্মীদের মনে ব্যাপক স্বস্তি এনে দিয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স ফার্মের পক্ষ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইনী বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স লিমিটেডের সিনিয়র পার্টনার ব্যারিষ্টার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেছেন, হোম কেয়ার ইন্ডাস্ট্রি এই দেশে মোস্ট ভালনারেবল মানুষের পরিসেবা প্রদানে বিশেষ অবদান রাখছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, অতি সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ঢালাও ভাবে অনেক কেয়ার কোম্পানির স্পন্সরশিপ লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে এই বিশাল বিজনেস ও সেবা সেক্টর তথা কেয়ার কোম্পানিগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই সাথে কেয়ার কোম্পানি সমূহে যুক্ত বা বিদেশ থেকে আগত কর্মীরা তাদের বৈধতা হারাচ্ছেন। এতে ব্রিটেনে বেশ উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। এমন কঠিন সময়ে কমিউনিটির আইনী সেবায় সক্রিয় ও যথার্থ ভূমিকা পালনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এরই মাঝে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স একটি অনন্য সফলতা অর্জন করেছে। যা বহু অসহায় মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে। কেয়ার হোমের লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্সের তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য শুধু নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের আনন্দের বিষয় নয়, এটা বহু মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে।
নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ল’ম্যাটিক সলিসিটর্সের (Lawmatic Solicitors) অন্যতম পার্টনার খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যরিস্টার ফখরুল ইসলাম। এই মামলায় কেয়ার হোমের পক্ষে আইনজীবী হিসাবে নিযূক্ত ছিলেন প্রখ্যাত ব্যারিষ্টার যেইন মালিক কেসি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (SSHD) পক্ষে ছিলেন ব্যরিস্টার উইলিয়াম আরউইন। প্রায় এক বছর ধরে চলমান এই মামলার রায় অতি সম্প্রতি রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিসের কিংস বেঞ্চ ডিভিশন থেকে প্রদান করা হয়, যা ন্যাশনাল আর্কাইভেও প্রকাশিত হয়েছে। এই রায়টি এখন থেকে হাইকোর্ট-সহ সকল নিম্ন আদালাতের জন্য দৃষ্টান্ত হিসাবে গণ্য করা হবে।

যথাযথ জবাবের সুযোগ না দিয়ে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের লাইসেন্স বাতিল করা বেআইনী ঘোষণা করেছেন হাই কোর্টের জজ ডেভিড পিয়েভস্কি কেসি। মামলার রায়ে বলা হয়, এটি সরকারের প্রকাশিত নীতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ, বৈধ প্রত্যাশার বিপরীত এবং সাধারণ আইনে পদ্ধতিগত ভাবে অন্যায্য। মাননীয় আদালত নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপুরণ দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, নিউ হোপ কেয়ার একটি বড় কেয়ার কোম্পানি। এটি যেসব ভালনারেবল ব্যক্তিদের যত্ন পরিষেবা প্রয়োজন, তাদের সেবাদান করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটেনে সেটেল্ড নয় এমন কর্মীদের স্পনসর করার অনুমতি দেওয়া হয় এই কোম্পানিকে। হোম আফিসের নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানে অনুমোদনকারী কর্মকর্তাকে (Authorising Officer- AO) ব্রিটেনে থাকা প্রয়োজন, যিনি মন্ত্রণালয়ের (SSHD) নির্দেশনায় নিয়োজিত থাকেন। (শ্রমিক এবং অস্থায়ী কর্মী: স্পনসরদের জন্য নির্দেশিকা- সংস্করণ আগস্ট ২০২২) । নিউ হোপ কেয়ারের অনুমোদনকারী কর্মকর্তা (AO) ছিলেন কোম্পানির পরিচালক প্যাট্রিক চেজা।

২০২৩ সালের ৭ আগস্ট হোম অফিসের একটি কমপ্লায়েন্স দল স্পনসর হিসাবে উপযুক্ততা মূল্যায়ন করার লক্ষ্যে নিউ হোপ কেয়ার পরিদর্শন করেন। তখন কোম্পানির পরিচালক প্যাট্রিক চেজা ব্রিটেনে উপস্থিত ছিলেন না। এক সপ্তাহ পরে ১৪ আগস্ট নিউ হোপ কেয়ারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয় কমপ্লায়েন্স পুরণে ব্যর্থতার অভিযোগে। তখন হোম অফিস কর্তৃক স্থগিতাদেশের চিঠিতে বিস্তারিত কারণ জানাতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে হোম অফিস জানায়, অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডকে জবাব দেয়ার যথাপোযুক্ত সুযোগ প্রদান করা হবে। কিন্তু পরে যথার্থ জবাব দেয়ার সুযোগ না দিয়েই নিউ হোপ কেয়ারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

হাইকোর্টের বিচারক অযৌক্তিক আচরণ, ভুল নির্দেশনা, পদ্ধতিগত অন্যায় এবং সার্বিক মূল্যায়নের মূল বিষয়গুলি পরীক্ষা করে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের লাইসেন্স ফিরিয়ে দেবার আদেশ দেন। এব্যাপারে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্সেন পার্টনার ও প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যরিস্টার ফখরুল ইসলাম বেশ যত্ন নিয়ে কাজ করেছেন। তার মতে, এই মামলাটি কেয়ার কোম্পানি এবং কেয়ার ওয়ার্কারদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তরিক আইনী লড়াইয়ে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের লাইসেন্স ফিরে পাবার ফলে সবাই উপকৃত হবে। আদালতের এই রায়ের ফলে শুধু এই কোম্পানিতে শতাধিক কেয়ার কর্মীর ব্রিটেনে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি বহাল থাকবে।

তবে, উদ্বেগের বিষয় হল, হোম অফিস কর্তৃক যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ব্যতিত লাইসেন্স বাতিল করার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান-সহ বিপুল সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বেশ কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যে আইনি সহায়তার জন্য ল’ম্যাটিকের সাথে যোগাযোগ করছেন। যারাই এভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কোন না কোনো অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নিয়ে তাদের প্রতিকার চাওয়া উচিত। এছাড়া অনেক কষ্ট, সাধনা ও পরিশ্রমে অর্জিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঝুকিমুক্ত রাখার জন্য প্রতিটি স্পন্সর কোম্পানি হোম অফিসের কমপ্লায়েন্স দল আসার আগেই হোম আফিসের প্রযোজ্য নীতিমালা যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য অভিজ্ঞ আইনজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
মতবিনিময় সভায় বলা হয়, ল’ম্যাটিকের প্রফেশনাল ও ডেডিকেটেড টিম আইনের সর্বোত্তম অনুশীলনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন, যাতে প্রতিটি বিষয়ে গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা যায়। ল’ম্যাটিক সলিসিটর্সের পার্টনার ও লিগ্যাল কনসালটেন্ট সাঈদ হাসানের ইমিগ্রেশন, অ্যাসাইলাম, পরিবার এবং সম্পত্তি আইনে বিস্তর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ল’ম্যাটিকের অন্যতম পার্টনার ও সলিসিটর ব্যারিষ্টার সালাহ উদ্দিন (সুমন) ইমিগ্রেশন, ফ্যামিলি, প্রোপার্টি, কমার্শিয়াল লিটিগেশন ইত্যাদি বিষয়ে কোয়ালিটি সার্ভিস প্রদানের জন্য অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

এখানে সংযুক্ত আইনজীবীদের নিয়মিত সিপিডি প্রশিক্ষণ হয়। এর মধ্য দিয়ে ক্লায়েন্টের চাহিদা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ সম্ভব হয়। তারা আইনী রিসোর্স সমূহ নিয়িমিত ব্যবহার করেন। ফলে আইনী বিষয়ে আপডেট থাকেন। মানুষের আস্থা সৃষ্টির মত মান সম্পন্ন সার্ভিস প্রদানের মাধ্যমে ল’ম্যাটিক এখন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। এই টিমের এক ঝাঁক মেধাবী সলিসিটর ও কন্সালটেন্টদের বিরল দক্ষতা রয়েছে। আইনী পরিষেবা প্রদানে প্রায় ২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আছেন বেশ কয়েকজন। লন্ডনে বাংলাদেশী কমিউনিটির আইনসংক্রান্ত প্রয়োজনে এই আইনজীবীরা আশার আলো হিসাবে জ্বলে ওঠেন। তাদের দিকনির্দেশনা ও মামলা পরিচালনা সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ নিয়ে বিশেষায়িত কার্যক্রম পরিচালনা করছে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স। এতে অভিবাসন (Immigration), পরিবার (Family), ইজারা এবং সম্পত্তি (Lease & Property), বাণিজ্যিক মামলা (Commercial Litigation), ফৌজদারি মামলা (Criminal Litigation), ব্যবসা এবং কর্পোরেট (Business and Corporate), উইল এবং প্রবেট (Wills & Probate), দাতব্য প্রতিষ্ঠানে আইনি সেবা (Legal Service to Charity)-সহ নানাবিধ আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স ফার্মের পার্টনার ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অপর তিন পার্টনার ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার সাঈদ হাসান ও ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন সুমন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে