মাধ্যমিক স্তরে আবারও ফিরে আসছে বিজ্ঞান, মানবিক, ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ, এবং অর্ধবার্ষিকীর বাকি মূল্যায়ন সম্পন্ন হবে না। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, এ বছর নবম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে, অন্তর্বর্তী সরকার নতুন শিক্ষাক্রমের এই অংশসহ আরও কিছু পরিবর্তন করে মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের অনেক বিষয় পুনরায় চালু করা হচ্ছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যারা আগামী বছর নবম শ্রেণিতে উঠবে, তারা পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বিজ্ঞান, মানবিক, ও ব্যবসায় শিক্ষা সহ বিভাগভিত্তিক পাঠ্যবই (২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত) পাবে। তাঁরা পূর্বের মতো নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যসূচি শেষ করে ২০২৭ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় আজ রোববার এক পরিপত্র জারি করে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের নতুন সিদ্ধান্তগুলি জানিয়ে দিয়েছে। পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে নানা সমস্যা থাকায় এটি কার্যকর করা সম্ভব নয়। শিক্ষকদের প্রস্তুতির অভাব, পাঠ্যবিষয়বস্তু ও মূল্যায়ন পদ্ধতির অস্পষ্টতা, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের গুরুত্বহীনতা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা, অংশীজনদের মতামত, গবেষণা এবং জরিপের ভিত্তিতে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাব, পাঠ্যবিষয়বস্তু ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা এবং নেতিবাচক ধারণা, পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব। এসব বাস্তব সমস্যা থাকার কারণে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মনে করা হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

গত বছর শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় প্রথম, ষষ্ঠ, এবং সপ্তম শ্রেণিতে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ২০২৪ সালে নতুন শিক্ষাক্রম আরও চারটি শ্রেণিতে চালু হয়: দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম, এবং নবম শ্রেণি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম, ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার কথা ছিল, এবং ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখন ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বিভাগভিত্তিক শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং এসএসসি পরীক্ষা দেবে। অর্ধবার্ষিকীর বাকি মূল্যায়ন সম্পন্ন হবে না; ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন করে পুনর্মুদ্রণ করা হবে। পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে, যা জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর মতো হবে।

পরিপত্র অনুযায়ী, শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সহযোগিতায় ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হবে, যা ২০২৬ সাল থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে