লেখকঃ কামাল সিকদার
১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান বিভাজন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও গূরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি যা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক মানচিত্রে একটি গভীর প্রভাব ফেলেছিল। দেশভাগের ফলে হিন্দু-মুসলিম জনগণের ব্যাপক মাইগ্রেশন শুরু হয়, যা সামগ্রিকভাবে দুই নতুন রাষ্ট্রের জনসংখ্যার কাঠামো পরিবর্তন করেছিল। এই প্রক্রিয়া কেবলমাত্র একটি ভূখণ্ডের পরিবর্তন নয়, বরং লাখ লাখ মানুষের জীবন এবং তাদের সাংস্কৃতিক পরিচিতিতে পরিবর্তন এনেছে।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, ভারত এবং পাকিস্তান দুটি পৃথক দেশ হিসেবে জন্ম নেয়। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভাজনের লক্ষ্য ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলিকে ভারত এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলিকে পাকিস্তানে বিভক্ত করা। যদিও এসময় বাংলা এবং আসামকে নিয়ে আরেকটি পৃথক দেশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন বসু এবং শরত বসুর এই পরকল্পনা বাংলার মুসলিম লীগ সমর্থন করলেও নেহরুর বিরোধিতার কারনে তা বাতিল হয়ে যায়। এই বিশাল পরিবর্তনটি পুরো উপমহাদেশে তীব্র স্নায়ু ও কাঁপন সৃষ্টি করেছিল।
ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সম্প্রদায়গত উত্তেজনা ও হিংসা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে, দেশভাগের পর পাকিস্তানে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান) লাখ লাখ মুসলমান ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে চলে আসেন। পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) ১৯৪৭ সালে বৃহত্তর Punjab, Sindh, Balochistan, এবং NWFP (North-West Frontier Province) নিয়ে গঠিত হয়।
পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলি থেকে মুসলিমরা চলে আসে। পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) উভয়েই হিন্দুদের বিপুল সংখ্যা ভারতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
ভারতীয় পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, ও বিহারসহ অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী মুসলিমরা পাকিস্তানে চলে যান। পশ্চিমবঙ্গ, বাঙালি হিন্দুদের জন্য উন্মুক্ত হয়, যদিও এখানে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়।
দেশভাগের সময় একদিকে জনগণের বিশাল স্থানান্তর ছিল, অন্যদিকে সংলগ্ন অঞ্চলে হিংসা ও দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানে মুসলিম অভিবাসীদের আগমন এবং ভারতের হিন্দুদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে চলে আসা—এ দুটি ঘটনাই সমাজে ব্যাপক উত্তেজনা ও সহিংসতার জন্ম দেয়।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে জনগণের স্থানান্তরের ফলে দুই দেশের জনসংখ্যার কাঠামো পরিবর্তিত হয়। ভারত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পরিণত হয় এবং পাকিস্তান মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পরিণত হয়।
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে দেশভাগের পর থেকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কখনোই পূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়নি। এই জনগণের স্থানান্তর বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্ম দেয়, যা বর্তমানে তিন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখনও প্রভাবিত করে।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর হিন্দু-মুসলিম জনগণের এই বিশাল স্থানান্তরের ঘটনা ভারত এবং পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি অমিট প্রভাব ফেলেছে। এই প্রক্রিয়া কেবলমাত্র একটি ভূখণ্ডের পরিবর্তন নয়, বরং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে গভীর পরিবর্তন এনেছে। ভারত, পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও এই স্থানান্তর নানা সময়ে ব্যপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যার বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশী পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলোর ২০১১ সালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয় গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, কিন্তু হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ কমে গেছে। তবে বর্তমানে হিন্দুদের সংখ্যা কিছুতা বাড়লেও শতাংশের হিসাবে তা ২০১১ সালের ছেয়ে কমে গেছে। ১৯৭৪ সালের প্রথম আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৩.৫ শতাংশ ছিল হিন্দু, যা ২০২২ সালের আদমশুমারিতে কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৫ শতাংশে। এই সময়ে বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জনসংখ্যার হার মোটামুটি একই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যার হ্রাসের পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। একটি প্রধান কারণ হলো দেশত্যাগের প্রবণতা, যেখানে অনেক হিন্দু ভারতে চলে যাচ্ছে। ভারত হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় সেখানে গিয়ে বসবাস করলে তারা একটি পরিচিত পরিবেশে থাকার অনুভূতি পায়। এছাড়াও, অনেক হিন্দুর আত্মীয়-স্বজন পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে বসবাস করে, যা বিবাহসূত্রে স্থানান্তরের একটি স্বাভাবিক পথ তৈরি করেছে। ফলে, এসব সামাজিক সম্পর্ক ও বিয়ের কারণেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু ভারতে চলে যায়।
হিন্দু জনসংখ্যা কমার আরেকটি কারণ হল মুসলিমদের তুলনায় হিন্দুদের জন্মহার কম হওয়া। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালের আদমশুমারি এবং গৃহগণনা প্রতিবেদনে হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাসের পেছনে দুটি প্রধান কারণ তুলে ধরা হয়েছে: প্রথমত, দেশত্যাগ বা আউট মাইগ্রেশন এবং দ্বিতীয়ত, হিন্দু জনগোষ্ঠীর মোট প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট তুলনামূলকভাবে কম হওয়া। অর্থাৎ, হিন্দু দম্পতিরা গড়ে মুসলিম দম্পতিদের চেয়ে কম সন্তান জন্ম দেন।
এছাড়াও, ঐতিহাসিক জনসংখ্যা স্থানচ্যুতি বা মাইগ্রেশনের ঘটনাগুলোও এই হ্রাসে বড় ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর, বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যা স্থানান্তর হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে অনেক বাঙালি হিন্দু পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে চলে গিয়েছিল, একইভাবে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে মুসলমানরা পূর্ব পাকিস্তানে চলে এসেছিল। এটি ছিল এমন একটি সময় যখন ভারত এবং পাকিস্তান, দুটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল, এবং ধর্মীয় ভিত্তিতে জনগণ উভয় দিকেই স্থানান্তরিত হয়েছিল।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। মুক্তিযুদ্ধের পর সব শরণার্থী দেশে ফিরে আসেননি; যারা ফিরে এসেছিলেন, তাদের অনেকেই পরে আবার ভারতে চলে যান। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ও মুসলমানদের পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) আগমন এবং হিন্দুদের ভারতে চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।
বিবিএস বা অন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে ধর্মীয় জনগোষ্ঠীভিত্তিক প্রজনন হারের নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশসহ (আইসিডিডিআরবি) তিনটি প্রতিষ্ঠানের একদল গবেষক দেশের একটি ছোট এলাকার (চাদপুর জেলা) জনমিতি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, দেশত্যাগ ও কম প্রজনন হারের পাশাপাশি হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে নবজাতক মৃত্যুহারও তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি।
রাজনৈতিক নেতা, সমাজবিজ্ঞানী, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা এবং গবেষকরা একমত যে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে দেশত্যাগ। এর পিছনে ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত, যিনি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ নিয়ে গবেষণা করছেন, উল্লেখ করেছেন যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণগুলোও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, অনেক হিন্দু অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেশত্যাগ করছেন, এবং শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইনের কারণে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে বাধ্যতামূলকভাবে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, যা বিশেষ করে গ্রামের দুর্বল হিন্দুদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও (২০১১-২০২৪) একই ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, সর্বশেষ দুর্গাপূজার সময় পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও মন্দির ভাঙচুর, হিন্দুদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রাণহানিও ঘটেছে।
অনেক সময় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারনেও হিন্দুদের ওপর আক্রমনের ঘটনা ঘটে। সাধারণভাবে দেশের হিন্দু জন-গোষ্ঠী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে সমর্থন করে। ফলে যখনি রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয় সহিংসতার একটি অংশের শিকার হয় হিন্দুরা।
শত্রু সম্পত্তি আইন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কমার অন্যতম কারন
অনেক সাধারণ হিন্দু মনে করেন, তাদের দেশত্যাগের অন্যতম কারণ অর্পিত সম্পত্তি আইন। পাকিস্তান সরকার ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এই আইনটি প্রণয়ন করে, যা এখনও বলবৎ রয়েছে এবং এর ফলে হাজার হাজার হিন্দু পরিবার জমি হারিয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, শত্রু সম্পত্তি আইন, যা স্বাধীনতার পর “অর্পিত সম্পত্তি আইন” নামে পরিচিত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আইন ও এর কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক অনেক পুরনো। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার স্বাধীনতার পরও এই আইন বাতিল করেনি, যার ফলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীন সময়ে বিশেষ করে দলটির নেতা-কর্মীরা এই আইনটির সুযোগ নিয়ে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করেছে।
শত্রু সম্পত্তি কী?
শত্রু সম্পত্তি বা “Enemy Property” এমন সম্পত্তি বোঝায় যা এমন ব্যক্তিদের ছিল যারা ভারতের স্বাধীনতার পর পাকিস্তান বা চীনে চলে গিয়েছিলেন এবং সেই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর, ভারত সরকার Enemy Property Act, 1968 প্রণয়ন করে, যার মাধ্যমে এসব সম্পত্তি সরকারের তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়। এ আইন অনুযায়ী, এসব সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য হয় এবং ব্যক্তিগত মালিকানা বাতিল হয়, এমনকি যদি তারা ভারতে বসবাস করত বা তাদের উত্তরাধিকারীরা ভারতীয় নাগরিক হতো।
শত্রু সম্পত্তির ইতিহাস:
ভারত:
ভারতে শত্রু সম্পত্তির ধারণাটি মূলত ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান বিভাজন এবং ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় শুরু হয়েছিল। দেশভাগের সময়, অনেক মুসলিম পরিবার পাকিস্তানে চলে যায় এবং তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। পরবর্তীতে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর, এই সম্পত্তির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য শত্রু সম্পত্তি আইন প্রণয়ন করা হয়।
বাংলাদেশ:
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, শত্রু সম্পত্তির ইতিহাস পাকিস্তান আমলে ফিরে যায়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় অনেক হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যায়, এবং তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি পাকিস্তান সরকার শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, এই সম্পত্তিগুলোকে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ হিসেবে পরিচিত করা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে অর্পিত সম্পত্তি আইন:
স্বাধীনতার পর, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল না করায় এটি বিতর্কিত হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়, বিশেষ করে দলটির নেতা-কর্মীরা এই আইন ব্যবহার করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করেছে।
প্রভাব ও বাস্তবতা:
শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে পাকিস্তানিদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ছাড়াও অনেক হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি দখল করা হয়। এ সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক সদস্যকে তাদের জমি কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়। তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দ্বারা এই প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হয়, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
এর ফলে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বরং শত্রু সম্পত্তি আইন ও সংশোধিত অর্পিত সম্পত্তি আইন সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করার একটি হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়।
বিদ্যমান আইন:
ভারত:
১. ১৯৬৮ সালের শত্রু সম্পত্তি আইন: পাকিস্তানে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে এই আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইন অনুসারে, শত্রু সম্পত্তি আইনত রাষ্ট্রের অধীনে আসে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২. ২০১৬ সালের সংশোধনী: এই সংশোধনী শত্রু সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনকে আরও কঠোর করে। এই আইনের অধীনে, শত্রু সম্পত্তি কোনোভাবেই উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরে আসতে পারবে না। আইনটি দেওয়ানি আদালতকে এসব সম্পত্তি নিয়ে মামলার বিচার করতে নিষেধ করে।
বাংলাদেশ:
১. ১৯৬৫ সালের শত্রু সম্পত্তি (অধিগ্রহণ) আইন: পাকিস্তান সরকার এই আইনের মাধ্যমে শত্রু সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে। এই আইনের মাধ্যমে সরকার এই সম্পত্তির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
২. ১৯৭৪ সালের অর্পিত সম্পত্তি আইন: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, শত্রু সম্পত্তি ‘অর্পিত সম্পত্তি’ নামে পুনঃনামকরণ করা হয় এবং সরকার এই সম্পত্তি রাষ্ট্রের অধীনে নিয়ে আসে।
৩. ২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন: পূর্বের মালিক বা তাদের উত্তরাধিকারীদের অর্পিত সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য এই আইন প্রণয়ন করা হয়।
প্রাসঙ্গিক তথ্য:
১. শত্রু সম্পত্তির পরিমাণ: দুই দেশেই শত্রু সম্পত্তির পরিমাণ বিশাল। ভারতে লক্ষ লক্ষ একর জমি এবং হাজার হাজার বাড়ি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে রয়ে গেছে।
২. আইনি বিতর্ক: শত্রু সম্পত্তি নিয়ে দুই দেশেই অসংখ্য মামলা হয়েছে এবং অনেক সময় এই সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী আইনি লড়াই হয়েছে, যা এখনও চলমান।
পুনর্বাসন প্রক্রিয়া:
ভারত:
ভারতে শত্রু সম্পত্তি পুনর্বাসনের জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে এসব সম্পত্তির নিলাম করেছে এবং এর বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ সরকারি তহবিলে জমা হয়েছে। শত্রু সম্পত্তি পুনর্বাসনের জন্য একটি বিশেষ কমিশনও গঠন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন নীতি ও নির্দেশনা প্রণয়ন করে।
বাংলাদেশ:
বাংলাদেশে অর্পিত সম্পত্তির পুনর্বাসনের জন্য ২০০১ সালে “অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন” প্রণয়ন করা হয়। এর মাধ্যমে পূর্বের মালিক বা তাদের উত্তরাধিকারীরা সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে পারেন। তবে, এই প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ এবং প্রায়ই আইনি জটিলতায় আবদ্ধ থাকে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট:
ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশেই শত্রু সম্পত্তি নিয়ে এখনও বিতর্ক ও আইনি জটিলতা বিদ্যমান। ভারতে ২০১৬ সালের শত্রু সম্পত্তি আইনের সংশোধনী নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং অনেকেই এর বিরোধিতা করেছেন। বাংলাদেশে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে এবং অনেক সম্পত্তি এখনও পুনর্বাসনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ভারত:
১. সম্পত্তির নিলাম: ভারত সরকার শত্রু সম্পত্তির নিলামের মাধ্যমে এসব সম্পত্তির বিক্রয় করছে, এবং এই প্রক্রিয়া চলমান।
২. আইনি চ্যালেঞ্জ: শত্রু সম্পত্তি আইন নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জ এখনও বিদ্যমান এবং অনেক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ:
১. প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া: বাংলাদেশে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে এবং অনেক সম্পত্তি এখনও পুনর্বাসনের অপেক্ষায় রয়েছে।
২. আইনি লড়াই: অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে অনেক আইনি লড়াই এখনও চলমান এবং এর সমাধান খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
শত্রু সম্পত্তি আইন ও সংশোধিত অর্পিত সম্পত্তি আইন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি জটিল ও বিতর্কিত বিষয়। স্বাধীনতার পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বরং, এই আইন সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করার একটি হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের উচিত হবে এই সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করা। সরকারের এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির যৌথ প্রচেষ্টায় এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হতে পারে এবং শত্রু সম্পত্তি পুনর্বাসনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে।
হিন্দু জনসংখ্যা কমার প্রবণতা নতুন কিছু নয়
হিন্দু জনসংখ্যা কমার প্রবণতা নতুন কিছু নয়। এটি একটি ঐতিহাসিক প্রবণতা। ১৯০১ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩৩ শতাংশ, যা পরবর্তী প্রতিটি আদমশুমারিতে ক্রমাগত কমেছে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, এই তিনটি বড় ঘটনা হিন্দু জনসংখ্যা কমার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
১৯৭৭ সালে পঞ্চম সংশোধনী অনুমোদনের মাধ্যমে সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়, এবং ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়। যদিও এ দুটি ঘটনা সামরিক সরকারের আমলে ঘটেছিল, পরবর্তীতে কোনো গণতান্ত্রিক সরকারও রাষ্ট্রীয় আদর্শকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়নি।এই বিষয়টিও সংখ্যালঘু বিশেষকরে হিন্দুদের মনে একধরণের
বাংলাদেশের তিনজন গবেষক, মো. মঈনুদ্দীন হায়দার, মিজানুর রহমান এবং নাহিদ কামাল, ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৮৯ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে হিন্দুদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মুসলমানদের তুলনায় কম ছিল, যার প্রধান কারণ ছিল দেশত্যাগ, কম প্রজনন হার এবং তুলনামূলক বেশি মৃত্যুহার।
এই প্রবণতা বোঝাতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন যে, জনসংখ্যার হার বাড়ে বা কমে তিনটি প্রধান জনমিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে: জন্মহার, মৃত্যুহার এবং স্থানান্তর। হিন্দু জনসংখ্যার হ্রাসের পেছনে এই তিনটি কারণই কাজ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে হিন্দু জনসংখ্যা কমার হার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাংলাদেশে একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বিশেষ করে হিন্দু জনসংখ্যার হ্রাসের বিষয়টি সুস্পষ্ট, যা আদমশুমারির তথ্য থেকেই প্রমাণিত হয়। যদিও কতটা কমেছে তা নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকতে পারে, তবে তাদের সংখ্যা কেন কমেছে, সেটাই এখানে মূল প্রশ্ন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে, যখন মোট জনসংখ্যার ১৩.৫ শতাংশ ছিল হিন্দু। এরপরে ১৯৮১ সালে এটি ১২.১ শতাংশে, ১৯৯১ সালে ১০.৫ শতাংশে, ২০০১ সালে ৯.৩ শতাংশে এবং সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে ৮.৫ শতাংশে নেমে আসে। এই তথ্যগুলো স্পষ্ট করে যে, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমাগত কমেছে। অন্যদিকে, এই সময়ের মধ্যে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে। ১৯৭৪ সালে যেখানে মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার ৮৫.৪ শতাংশ ছিল, ২০২২ সালে তা বেড়ে ৯১.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার, যার মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ১০ লাখ ৩৯ হাজার এবং হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার। ২০১১ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৪ হাজার, যার মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ২৩ লাখে। যদিও মুসলিম জনগোষ্ঠী এই সময়ে আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, হিন্দু জনগোষ্ঠী কমেছে প্রায় পাঁচ শতাংশ।
সর্বশেষ আদমশুমারি হয়েছে ২০১১ সালে, এবং প্রতি ১০ বছর পর পর আদমশুমারি পরিচালিত হয়। সেই হিসেবে, ২০২১ সালে ষষ্ঠ আদমশুমারি হওয়ার কথা ছিল। তবে, আদমশুমারি ছাড়াও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিবিএস প্রতি বছর বাংলাদেশের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০২২ সালের শুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৯১.০৪ শতাংশ, এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মিলে ৮.৯৬ শতাংশ। এখানে হিন্দুদের আলাদা করে কোনো শতাংশ উল্লেখ করা হয়নি, তবে এই হিসাব থেকে ধারণা করা যায় যে হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ২০১১ সালের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।
বিবিএসের ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোট জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ হিন্দু, যেখানে আগের বছর ছিল ৯.৯ শতাংশ। আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ১৯১১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মুসলিম এবং হিন্দু জনসংখ্যার অনুপাত ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯১১ সালে মুসলিমরা মোট জনসংখ্যার ৬৭.২ শতাংশ এবং হিন্দুরা ৩১ শতাংশ ছিল। এরপর প্রতি দশকেই মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং হিন্দু জনসংখ্যার অনুপাত কমেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষক ড. আবুল বারকাত তার গবেষণায় উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আনুমানিক ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলাদেশ থেকে নিরুদ্দিষ্ট হয়েছেন। তার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ১৯৪১ সালের আদমশুমারিতে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ২৯.৭ শতাংশ, যা বর্তমানে প্রায় ২৯.৭ শতাংশ হওয়া উচিত ছিল। বর্তমান হিন্দু জনসংখ্যা আনুমানিক ১ কোটি ৪০-৫০ লাখ হলে, তা এখন প্রায় ৫ কোটির কাছাকাছি হওয়া উচিত ছিল। এই ঘাটতি প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ, যা প্রিয়া সাহা উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি বলেন, এই সরল হিসাব সঠিক নয় কারণ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজন এবং পরবর্তী পলিটিক্যাল মাইগ্রেশনের কারণে জনসংখ্যার এই পরিবর্তন হয়েছে।
আদমশুমারিতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ
জনগোষ্ঠী | ১৯৫১ | ১৯৬১ | ১৯৭৪ | ১৯৮১ | ১৯৯১ | ২০০১ | ২০১১ | ২০২২ |
মুসলিম | ৭৬.৯ | ৮০.৪ | ৮৫.৪ | ৮৬.৭ | ৮৮.৩ | ৮৯.৭ | ৯০.৪ | ৯১.০৪ |
হিন্দু | ২২ | ১৮.৫ | ১৩.৫ | ১২.১ | ১০.৫ | ৯.২ | ৮.৫ | ৭.৯৫ |
বৌদ্ধ | ০.৭ | ০.৭ | ০.৬ | ০.৬ | ০.৬ | ০.৭ | ০.৬ | ০.৬১ |
খ্রিস্টান | ০.৩ | ০.৩ | ০.৩ | ০.৩ | ০.৩ | ০.৩ | ০.৩ | ০.৩ |
অন্যান্য | ০.১ | ০.১ | ০.২ | ০.৩ | ০.৩ | ০.২ | ০.১ | ০.১২ |
অধ্যাপক বারকাত আরও উল্লেখ করেন, দেশত্যাগী হিন্দুরা সাধারণত ভারতে গেছেন, কারণ তারা আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে জার্মানি বা আমেরিকার মতো দেশগুলোতে যেতে পারেননি। তিনি হিন্দুদের দেশত্যাগের ছয়টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন:
1. এই অঞ্চলে মুসলমানদের উচ্চ প্রজনন হার,
2. ১৯৬৪ সালের দাঙ্গা,
3. ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ,
4. এনিমি প্রোপার্টি অ্যাক্ট,
5. ভেস্টেড প্রোপার্টি অ্যাক্ট,
6. নিরাপত্তাহীনতা।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ আরও বলেন, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও হিন্দুদের দেশত্যাগের একটি কারণ। তার মতে, হিন্দুদের ওপর আক্রমণের মূল লক্ষ্য হচ্ছে তাদের জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা, যা সাধারণত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা করে, তবে এ কাজে সাধারণ মুসলমানরাও জড়িত থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, সিলেট বিভাগে হিন্দু জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং রাজশাহীতে সবচেয়ে কম। মুসলমানদের ক্ষেত্রে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি এবং সিলেটে সবচেয়ে কম জনসংখ্যা রয়েছে।
এই সমস্ত তথ্য ও বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমার পেছনে বহুমুখী কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং ধর্মীয় প্রভাবসহ জনসংখ্যাগত পরিবর্তন।
-কামাল সিকদার একজন ডেটা সাইন্টিস্ট, সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক।