ডঃ আব্দুর রহীম

গ্রেফতার হওয়া যেন এক ধরনের শিল্প। অনেক রাজনীতিবিদ হাসতে হাসতে জেলে যান, আর এটাই তাদের কাছে এক ধরনের সম্মানসূচক মুকুট।

গান্ধী জেলে যাওয়ার পর সেখানে বিশ্রাম নিতেন, লেখাপড়া করতেন। এমনকি হযরত উমরের জীবনীও তিনি জেলে বসেই পড়েছিলেন।

একবার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামে মামলা হলো। তখনও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলেন, পালাবেন কি না? তিনি উত্তর দিলেন, “পালাবো কেন? আমার এত বড় শরীর, কোথাও তো লুকাতে পারব না। ধরলে ধরে নিয়ে যাবে!”

সম্ভবত সাঈদীসহ অন্যান্য নেতারাও মামলা হওয়ার সময় হজ্জে ছিলেন, দেশের বাইরে। তখন রটে গেল, তারা আর ফেরত আসবেন না। কিন্তু সবাই ফিরে এলেন এবং বললেন, “মামলা হয়েছে, হোক। আমি ফেস করবো।”

ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথা মনে পড়ে। তিনি প্রায়ই গ্রেফতার হন, রিমান্ডে যান, শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেন। তবুও দেশ ছেড়ে যাননি। ফখরুল ইসলাম আলমগীর রবীন্দ্রনাথের ভক্ত। তিনি প্রায়ই একটি কবিতা আবৃত্তি করেন:

“তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি অন্ধ, বন্ধ করো না পাখা…”

মাহমুদুর রহমান ছিলেন একজন বিত্তশালী পরিবারের জামাই। বুয়েট থেকে পাশ করে মুন্নু সিরামিক্সে যোগ দিয়েছিলেন, যেখানে মালিক তার মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। সন্তান-সন্ততি না থাকায় তিনি তার সব সম্পত্তি ফাউন্ডেশনে দান করে দিয়েছেন।

তিনি গ্রেফতার হয়েছেন, রিমান্ডে গেছেন, এমনকি এমন নির্যাতন সহ্য করেছেন যে প্যান্ট পরতে পারেননি। তবুও তিনি কখনো লেখা থামাননি। সত্য বলার নেশা তার মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত।

আন্দালিব রহমান পার্থ, শেখ হাসিনার আপন ভাগ্নে হলেও, খালেদা জিয়াকে সম্মান করে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তারেক রহমানকে মেন্টর হিসেবে দেখেছেন। এর ফলে, তাকে গ্রেফতার হতে হয়েছে, মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনো অভিযোগ করেননি বা পালিয়ে যাননি। বরং সবসময় বলেছেন, “রাজনীতি করলে গ্রেফতার তো হতেই হবে।”

খালেদা জিয়াকে বারবার দেশের বাইরে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি যাননি। তিনি বলেছিলেন, “বাংলাদেশের বাইরে আমার কিছু নেই। আমি যাবো না।” বৃদ্ধ বয়সে তিনি জেলের মতো কবরে ঢুকলেন, পালালেন না। এই আন্দোলন না হলে খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়তো হাসিনার কারাগারেই হতো। তিনি জেনে শুনেই এই কারাগার মাথায় তুলে নিয়েছিলেন।

তাহলে, রাজনীতিবিদদের কাছে গ্রেফতার হওয়া এক ধরনের শিল্প, সম্মান, এবং মর্যাদা। এটি এমন এক মুকুট যা তারা স্বেচ্ছায় পরেন। রাজনীতি হলো রাজার নীতি—এখানে মানুষ মরে যাবে, কিন্তু মাথা নত করবে না।

মানবতাবিরোধী অপরাধের নাম করে যেসব বিচারিক হত্যা হয়েছে, সেখানে একজন নেতাও ক্ষমা চাননি। তারা বলেছেন, “মাফ চাইবো না। মেরে ফেলো।” এমনকি তাহেরও কোর্ট মার্শালে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর ক্ষমা চাননি। তিনি কোর্টের রায় মেনে নিয়েছিলেন, কিন্তু মাথা নোয়াননি।

মুজিবের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতেন সিরাজ শিকদার। মুজিবের পতনের বীজ তিনি বপন করে গিয়েছিলেন। মুজিবের সঙ্গে আপোষ করতে পারতেন, কিন্তু করেননি। মুজিবের লোকজন তাকে হত্যা করেছিল। সংসদে মুজিব অহংকার করে বলেছিলেন, “কোথায় আজ সিরাজ শিকদার?” সিরাজ শিকদার মরে গিয়েও জিতে গেলেন, আর মুজিব বেঁচে থেকেও হেরে গেলেন, কারণ সবাই জানল, মুজিব একজন খুনি।

যুগে যুগে সত্যিকারের রাজনীতিবিদরা মরে গেছেন, কিন্তু মাথা নত করেননি।

আবার আওয়ামী লীগের দিকে তাকালে দেখা যায়, অনেকেই পালিয়ে গেছেন, কেউ কেউ গ্রেফতারের সময় কান্নাকাটি করেছেন। এমনকি ছাত্রলীগের এক নেতা সীমান্ত পার হওয়ার সময় মারা গেছেন।

প্রশ্ন হলো, আপনি রাজনীতিবিদ, গ্রেফতার হতে সমস্যা কী? মুখোমুখি হতে সমস্যা কী?

আজ পত্রিকায় এসেছে, এস আলম যত টাকা আত্মসাৎ করেছে, তার অর্ধেক পেয়েছে রেহানা আর জয়। আওয়ামী লীগ আসলে রাজনীতি করেনি, করেছে চুরি।

তারা আসলে রাজনীতিবিদ নয়, চোর এবং প্রতারক। হাসিনা, রেহানা, জয়, সালমান সবাই প্রতারক। এজন্যই তারা গ্রেফতার হবে না, সাহস নেই। তারা পালাবে। কারণ চোর তো গ্রেফতার হতে পারে না, পালাতে পারে।

একদল চোরকে এতদিন আমাদের রাজনীতিবিদ বলে সম্মান দিতে হয়েছে, এর চেয়ে বড় লজ্জা আমাদের প্রজন্মের জন্য আর কিছু হতে পারে না।

  • ডঃ আব্দুর রহীমের ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে প্রাক্কলিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে