• মুহাম্মদ শাহ্ আলম ভূঁইয়া।

৫ আগস্ট ২০২৪ ইং, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের মাধ্যমে বাংলার মজলুম জনতা তাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করেছে। পনেরো বছরের সীমাহীন জুলুম নির্যাতন, গুম-খুন, ত্যাগ-কুরবানী, দেড় হাজারের মতো শহীদ, বিশ হাজারের ওপর পঙ্গুত্ব বরণ এবং অসংখ্য লোকের দেশান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে জাতি দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার এই স্বাদ পেয়েছে। ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে মাত্র দেড় মাসের কম সময়ের মধ্যে এই আন্দোলন সফল পরিণতি লাভ করে। হাসিনা পালানোর দুই ঘণ্টা আগেও হয়তো কেউ ধারণা করতে পারেনি যে, শেখ হাসিনা এভাবে পালিয়ে যাবে। পনেরো বছরের সীমাহীন জুলুম নির্যাতনের কারণে মজলুমের আহাজারি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার আরশকে কাঁপিয়ে তুলেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা স্বয়ং তাঁর কুদরতি হাত দিয়ে এই জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন।

আমি বলছি খুনি হাসিনার ফ্যাসিজমের শিকার এক মজলুম, নির্ভীক, খাঁটি দেশপ্রেমিকের কথা। তিনি হচ্ছেন আধিপত্যবাদবিরোধী, বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, জাতির জাগ্রত বিবেক, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক জনাব মাহমুদুর রহমান।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন:

জন্ম: ৬ জুলাই ১৯৫৩ সাল, বর্তমান কুমিল্লা জেলা, সাবেক ত্রিপুরা। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী লোক। 

শিক্ষা জীবন: সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া, জাপান থেকে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর ডিপ্লোমা করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন।

প্রফেশনাল ক্যারিয়ার:

পেশাগত জীবনে প্রথমে তিনি ব্রিটিশ অক্সিজেন কোম্পানিতে চাকরি করেন। এছাড়াও তিনি মন্নু সিরামিকস, সাইন পুকুর সিরামিকস, ডানকান ব্রাদার্স, বেক্সিমকো গ্রুপ, পদ্মা টেক্সটাইলসহ জাপানে কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি Artisans Ceramics নামে নিজস্ব একটি সিরামিক প্লান্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও ২০১৩ সালে তিনি পতিত স্বৈরাচার সরকারের রোষানলে পড়ে এই ফ্যাক্টরি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন।

রাজনৈতিক জীবন ও দেশপ্রেম:

রাজনৈতিকভাবে যদিও তিনি বিএনপি ঘরানার লোক, তথাপি তিনি একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক। তিনি ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রবল বিরোধী এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে এক ভয়ংকর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। ২০০২ সালে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট বোর্ডের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং পরবর্তীতে জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়ে দেশে রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ আসে, যা প্রায় ৪৬০ মিলিয়ন ইউএসডি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। জনাব মাহমুদুর রহমান এক পর্যায়ে উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন, যা বাংলাদেশের জন্য বিরল নজির স্থাপন করে। কারণ ক্ষমতার স্বাদ যারা একবার পায়, তারা সাধারণত পদত্যাগ করতে জানে না। পরিশেষে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি, বাধ্য হয়েই তিনি তাঁর কন্ট্রাক্ট পূর্ণ করেন।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকারের কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন খুনি হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দেশে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। বিশেষ করে পল্টন মোড়ে জামায়াত-শিবিরের সমাবেশে হামলা চালিয়ে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং লাশের ওপর নৃত্য করে। এই নির্মম ঘটনা সারা বিশ্বের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়।

আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা ও আধিপত্যবাদের সূচনা:

ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনের সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে একটি পরিকল্পিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন চৌদ্দদলীয় জোট টু-থার্ড মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসে। এরপর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর প্রত্যক্ষ মদদে একের পর এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। প্রথমেই দেশের সংবিধানকে পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগীয় দলিলে পরিণত করা হয় এবং যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়।

জনাব মাহমুদুর রহমান সহ দেশপ্রেমিক জনতা বুঝতে পেরেছিলেন যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ভারতের হাতে চলে গিয়েছে। ‘র’ এর গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক পুরো দেশব্যাপী বিস্তৃত করে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সেনা সদর, ডিজিএফআই, পুলিশ বাহিনীসহ সচিবালয়ে অফিস স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা করে।

প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর মাহমুদুর রহমান:

জনাব মাহমুদুর রহমান সাহসিকতার সঙ্গে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ চালিয়ে যান। ২০০৯ সালে তিনি “নয়া দিগন্ত”-এ আধিপত্যবাদবিরোধী গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন, যেখানে ফরহাদ মজহার, রেজওয়ানা হাসানসহ অনেক গুণীজন অংশগ্রহণ করেন। সেই আলোচনায় উঠে আসে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, এবং ২০০ বছর পর আমরা স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। কিন্তু আজ আবার সেই স্বাধীনতা হারাতে বসেছি।

যেখানে পুরো জাতি হতাশ, সেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা কোটার আন্দোলনের মাধ্যমে খুনি হাসিনার পতন নিশ্চিত করেছেন। এটাই আল্লাহর কুদরতের খেলা, এবং আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি।

দেশে ফেরেয়ার পর মাহমুদুর রহমানকে বিমান বন্দরে সম্বর্দনা দেন জনতা।

আমার দেশ পত্রিকার মাধ্যমে প্রতিবাদ:

তিনি তাঁর “আমার দেশ” পত্রিকার মাধ্যমে ভারতীয় দালাল এবং আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন। ২০০৮ সালে তিনি “আমার দেশ” পত্রিকার মালিকানা গ্রহণ করেন এবং পত্রিকাটি দেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকায় রূপান্তরিত করেন। কিন্তু আধিপত্যবাদী শক্তি তা মেনে নিতে পারেনি। আমার দেশ পত্রিকার কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়, প্রিন্টিং মেশিন লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং তাঁর বিরুদ্ধে ১০৭টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়।

কুষ্টিয়া জজকোর্টে ছাত্রলীগ নামক গুন্ডাবাহিনীর হামলায় জনাব মাহমুদুর রহমান আহত হন। তাঁর রক্তাক্ত ছবি সারা দেশের বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

অবশেষে তিনি পাঁচ বছরের বেশি সময় কারাগারে কাটান এবং পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশান্তরিত হন। মালয়েশিয়া গিয়ে তিনি তাঁর “আমার দেশ” পরিবারকে সংগঠিত করেন এবং দীর্ঘ পনেরো বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান।

অগাস্ট বিপ্লব ও ঐক্যের আহ্বান:

দীর্ঘ  ৫ বছর দেশে বাইরে থেকে বীরের বেশে মাহমুদর রহমান দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি বিমান বন্দরে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য আসা অনুরাগী জনতাকে লক্ষ্য করে মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, “দেশে এসে  কথা বলার সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। এই মুহূর্তে, আমি অসংখ্য বীরদের স্মরণ করতে চাই, যারা আমাদের দেশ বাংলাদেশকে মুক্ত করতে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।” 

মাহমুদুর রহমান বিশেষভাবে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের শহীদদের এবং বলেন, “যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, বিশেষ করে শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনের শহীদরা, তারা চিরকাল আমাদের কৃতজ্ঞতার এবং হৃদয় থেকে শ্রদ্ধার দাবিদার। এই বীর শহীদদের আমরা ভুলতে পারব না এবং ভুলবও না, ইনশাআল্লাহ।” 

তার বক্তব্যে আবু সাঈদের আত্মত্যাগের কথাও উঠে আসে, যিনি শেখ হাসিনার পতনের জন্য পরিচালিত গণআন্দোলনে শহীদ হন। মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমরা সর্বদা আমাদের প্রিয় শহীদদের, যেমন আবু সাঈদের আত্মত্যাগের কথা মনে রাখব, যিনি স্বাধীনতার বিনিময়ে তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি বিপ্লবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।” 

তিনি আবু সাঈদের আত্মদানের দৃশ্য স্মরণ করিয়ে বলেন, “আবু সাঈদ, আমাদের বিপ্লবের প্রতীক, নির্ভীকভাবে ফাঁসির মঞ্চের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন এবং পুলিশের রাইফেলের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে শহীদ হন। তার এই আত্মত্যাগ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অনুপ্রাণিত করবে।” 

মাহমুদুর রহমান আরো উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে তিতুমীরের মতো বিপ্লবীরাও আজ প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, “যেমন আমরা প্রায় ২০০ বছর আগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যোদ্ধা শহীদ টিতুমীরকে স্মরণ করি, আমরা তাদের উত্তরাধিকারকেও সম্মান করি যারা ১৮৩১ সালে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছিলেন। আজ ২০০ বছর পরেও আমরা তাদের স্মরণ করি। ভবিষ্যতে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আবু সাঈদের মতো ব্যক্তিত্বদের কাছে অনুপ্রেরণা খুঁজবে এবং তার নাম বিপ্লব ও মানবতার সাথে চিরকাল সংযুক্ত থাকবে।” 

তার আবেগঘন বক্তব্যে তিনি আবু সাঈদের সাহসিকতার বর্ণনা করে বলেন, “যখন আমরা আবু সাঈদের মতো বীরদের কথা ভাবি, আমরা গভীর আবেগ অনুভব করি। তার চেহারা—একজন সুদর্শন যুবক রাস্তার উপর দৌড়াচ্ছেন এবং সাহসিকতার সাথে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন—আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় এবং আবেগকে জাগ্রত করে।”   

তিনি আল্লাহর প্রতি প্রার্থনা করে বলেন, “আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, এবং তিনি যেন কিয়ামতের দিন শহীদদের সর্বোচ্চ সম্মান দান করেন। ইনশাআল্লাহ, আমরা সবাই সেই ময়দানে উজ্জ্বল মুখ নিয়ে মিলিত হব, কোনো অন্ধকার থাকবে না।” 

মাহমুদুর রহমান একটি ছোট শিশুর কথাও স্মরণ করেন, যে তার মায়ের সাথে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। “আমি অবশ্যই সেই ছোট শিশুটির কথাও উল্লেখ করতে চাই, যে তার মায়ের সাথে এই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিল। শিশুটির নিষ্পাপতা এবং দৃঢ় সংকল্প অনেককে কাঁদিয়েছিল। আমরা সেই শিশুটি এবং তার মায়ের প্রতি অনেক সম্মান জানাই এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি যে তারা আমাদের এই সম্মিলিত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে।” 

তার ভাষণে মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ছাত্রদের এই গণআন্দোলন আজ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটেছে এই আন্দোলনের ফলেই। এই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি, এবং আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি আবারও বাংলাদেশের মাটিতে ফিরে এসেছি।” 

মাহমুদুর রহমান তার মায়ের অসুস্থতা এবং ব্যক্তিগত আইনি চ্যালেঞ্জ নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “অনেকেই জানেন, আমি যখন মায়ের গুরুতর অসুস্থতার কথা শুনলাম, তখন দ্রুত চলে আসি। তিনি ছয় বছর ধরে একা ছিলেন এবং বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আছেন, আর আমি তার পাশে রয়েছি। একই সময়ে, আমি বেশ কয়েকটি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে, এবং একটি ভিত্তিহীন মামলায় আমাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমার আইনজীবী শফিকুর রহমান নিশ্চিত করতে পারেন যে এই মামলায় আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না, তবুও আদালত আমাকে শাস্তি দিয়েছে।” 

তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “এইসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, আমি শক্ত আছি। আমি আগে কারাগারে ছিলাম এবং কারাগারে যেতে আমি ভয় পাই না। যদি আবারও কারাগারে যেতে হয়, তা হলে তাই হোক। আমি আইন এবং আল্লাহর ন্যায়বিচারের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখি।” 

তিনি তার রাজনৈতিক লড়াইয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “গত ১৬ বছর ধরে আমি এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে লড়াই করেছি। বিএনপি, জামায়াত কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠন হোক, আমি সর্বদা অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। এই সংগ্রাম ছিল আমার ব্যক্তিগত, এটি আমার দেশ ও জনগণের জন্য।” 

তিনি ভবিষ্যতে দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলার প্রতিশ্রুতি দেন। মাহমুদুর রহমান বলেন, “আজ আমি রাজনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারছি না, তবে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যখন আমি মুক্ত হবো, তখন আবারও ফিরে আসব এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। ভারতীয় আগ্রাসন এবং বাঙালি মুসলমানদের সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে আলোচনা করব।” 

তার বক্তব্যের শেষ অংশে তিনি ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সবাইকে বিভেদ এড়ানোর আহ্বান জানান। “আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশি এবং বিদেশি শক্তি আমাদের বিপ্লবকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। একজন নাগরিক এবং এই সংগ্রামের অংশীদার হিসেবে আমি অনুরোধ করছি, আমাদের মধ্যে কোনো বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। ঐক্যবদ্ধ থাকুন, কারণ ফ্যাসিবাদকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবেন না।” 

তার বক্তৃতার শেষ কথা ছিল দেশের প্রতি অবিচল ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা। মাহমুদুর রহমান বলেন, “আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক, বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক। আজ বাংলাদেশ আমাদের, আজ বাংলাদেশ আমাদের।” 

শেষ কথা

মাহমুদুর রহমান তার বক্তব্যে ঐক্যের কথা বলেছেন। আমি মনে করি এটি বর্তমান সময়ে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কষ্টার্জিত বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য স্বৈরাচারী হাসিনার বশংবদরা এখনো সক্রিয়। তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে আমাদের বড় দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দরকার। বক্তব্য এবং বিভিন্ন স্থানে যে অপ্রীতিমূলক ঘটনা ঘটেছে সেসবের অবসান হওয়া দরকার। আলোচনার দ্বার খোলা রাখা দরকার সব সময়। এখন দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সুতরাং জামায়াতে এবং বিএনপি উভয় দলকেই দলীয় স্বার্থের চাইতে জাতীয় স্বার্থকে আগ্রাধিকার দিতে হবে।

আমরা ভারতীয় দালাল শক্তির প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, মাহমুদ ভাই, আপনি এই যুদ্ধে একা নন। আমরা আপনার সঙ্গে আছি এবং এটি আমাদের ঈমানের দাবি।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আপনাকে, আমাদেরকে এবং এই জাতিকে হেফাজত করুন।

লেখক: সাবেক ছাত্র নেতা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে