বাড়ি মতামত বিএনপি- জামায়াত সম্পর্কঃ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং জনগণের প্রত্যাশা

বিএনপি- জামায়াত সম্পর্কঃ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং জনগণের প্রত্যাশা

25
1

ডাঃ সায়েফ আহমদ

ঢাকার রমনা বটমূলে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)’ গঠিত হয়। ১ জানুয়ারি ১৯৭৯ সালে বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালের ২৫ থেকে ২৭ মে, ঢাকার ইডেন হোটেলে একটি সম্মেলর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী একটি ইসলামিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তারও দুই বছর আগে, ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরু হয়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর দীর্ঘ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলামিক দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৭৭ সালে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন, জাতি হিসাবে তার কাছে সকলেই কৃতজ্ঞ। স্বাধীনতা উত্তর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালনে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়। ফলশ্রুতিতে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে বিএনপি জনগণের সমর্থন লাভে সফল হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চরম আদর্শিক শূন্যতার কারণে ইসলামী ছাত্রশিবির আবির্ভূত হয় ছাত্র সমাজকে আলোর পথ দেখাতে। দুই তিন বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবির তার দাওয়াতী কার্যক্রম চালাতে সমর্থ হয়। একদিকে জাতীয়তাবাদী শক্তির উত্তান, অন্যদিকে ইসলামের আলোকে গঠিত ছাত্র সংগঠনের ব্যাপক দাওয়াতে ছাত্রদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ছাত্র জনতা দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসে। দেশ বিরোধী বামপন্থী শক্তি দেশের এই নবজাগরণকে মেনে নিতে পারেনি। চতুর্মুখী চক্রান্ত এই দুই শক্তিকে দুর্বল করার মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত হয়। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ডানপন্থী শক্তিশালী পক্ষ হিসাবে ছাত্রদল এবং ছাত্র শিবিরকে ছাত্র সমাজ গ্রহণ করে নেয়।

ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন দক্ষ নেতৃবৃন্দ তাদের যোগ্যতা বলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলেও ছাত্রদল অনেক দেরিতে সেই অবস্থান করতে অনেকটা সক্ষম হয়েছিল। ১৯৭৭ সাল থেকে তীব্র গতিতে এগিয়ে যাওয়া শিবির বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের কাছে তার উপস্থিতি জানান দিতে ১৯৭৯ সালে ঢাকার রমনা গ্রিনে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সম্মেলনের আয়োজন করে। এত কম সময়ের ব্যবধানে একটি ছাত্র সংগঠনের উত্তান দেশ এবং ইসলামের দুশমনদের সহ্য হয়নি। সর্বগ্রাসী চক্রান্তের কবলে ফেলার জন্য তৎকালীন বহুল প্রচলিত বিচিত্রা পত্রিকায় ছাত্রশিবির ও জামায়াত ইসলামী সম্পর্কে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন ছাপা হয়। তৎকালীন প্রেক্ষাপটে এর জবাব দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। ফলশ্রুতিতে সারা দেশের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন একত্রে শিবিরের উপর আক্রমণ চালায়। প্রতিষ্ঠার শুরুতে ঢাকায় এত বড় সম্মেলন একদিকে যেমন ছাত্র শিবিরের মর্যাদাকে বহু গুণে বৃদ্ধি করে, ছাত্র সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছে অন্যদিকে বিরোধীদের চরম রুশানলে পতিত হয় শিবির।

১৯৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানে দেশের আপামর ছাত্র জনতার অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামপন্থী শক্তির যৌথ অংশগ্রহণে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বিএনপি এবং জিয়াউর রহমানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল বলা চলে। ১৯৮০ সালে বিচিত্রা পত্রিকার ভয়াবহ অপপ্রচার এবং দেশের অভ্যন্তরে ইসলামবিরোধী শক্তির তীব্র প্রতিরোধের ফলশ্রুতিতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জামায়াতে ইসলামীর প্রতি কিছুটা বিরাগভাজন হন। দেশের সর্বত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে শিবির চরম বিরোধিতার মুখোমুখি হয়। সদ্য প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী তখনও রাজপথের সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। জিয়াউর রহমানের মত রাষ্ট্রনায়কের তৎকালীন সময়ে পরিস্থিতি সামাল না দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক ছিল। সেই সময়ে জাতি তা আশা করেনি।

২৯ মে, ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে চট্টগ্রামে হত্যা করা হয়।২৪ মার্চ, ১৯৮২ জেনারেল এরশাদ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মাত্র ৩ মাস আগে নির্বাচিত সরকারকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখল করেন। একটি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় এবং দলীয় স্বার্থে প্রয়োজন হয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের। এককভাবে আন্দোলন করে স্বৈরশাসকদের অপসারণ করা যায় না বিধায় বিএনপি, জামায়াত এবং আওয়ামীলীগ দীর্ঘ ৯ বছর যুগপৎ আন্দোলন করে। বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক তখন তুলনামূলক ভালোই ছিল, আওয়ামী লীগের সাথেও তখন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের কারণেই এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। জাতীয় স্বার্থে জন প্রত্যাশাও তাই ছিল।

২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ দীর্ঘ ৯ বছর পর মুক্ত পরিবেশে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামীলীগ ৮৬টি, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩৫টি, জামায়াতে ইসলামী ১৮টি, অন্যান্যরা ১৯টি আসনে বিজয়ী হয়। জামায়াতে ইসলামীর কদর বেড়ে যায় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগে। উভয়েই সমর্থন লাভের সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। আদর্শগতভাবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী অনেকটা কাছাকাছি হওয়ায় বিএনপিকে নিঃশর্ত সমর্থন করে জামায়াতে ইসলামী, যার ফলশ্রুতিতে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করেন। জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন ছাড়া সেই সময়ে সরকার গঠন করা বিএনপি’র পক্ষে সম্ভব ছিল না। দেশ ও জাতির স্বার্থে উভয়ের সমর্থন ছিল ঐতিহাসিক বাস্তবতা। এর অন্যথা হলে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে লিখা হতো। আজকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে উভয় দলের নেতাকর্মীদের এই বাস্তবতা মেনে না নিলে ইতিহাসকে অস্বীকার করা হবে।
নিঃশর্ত সমর্থন অনেকেই সেদিন মেনে নিতে পারেননি। সরকার গঠনের শর্ত হিসাবে তখনই যদি কেয়ার টেকার সরকার ব্যবস্থা, দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, শিক্ষাঙ্গনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং ইসলামবিরোধী তৎপরতা প্রতিরোধের শর্ত আরোপ করা হতো তাহলে ৯৬ এর বিপর্যয় জাতিকে বরণ করতে হতো না। ইতিহাসের এটাই বাস্তবতা। বিএনপি-জামায়াতের তৎকালীন মুখোমুখি অবস্থানের খেসারত জাতিকে দিতে হয়েছে পরবর্তী প্রায় দুই যুগ। আজও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি জাতিকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। মানুষের আবেগ এবং ক্ষমতার মোহ, অনেক সময় সঠিক বক্তব্য এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পাহাড়সম অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। যার খেসারত তিলে তিলে দিতে হয় কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষদেরকে।

৯১ থেকে ৯৬ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থিত বিএনপি সরকার, দলীয় দাবি এবং জনদাবি বুঝতে পারার ব্যর্থতার কারণে জামায়াত এবং আওয়ামী লীগ পরস্পরের সহযোগী হয়ে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামে। রাজনীতির ময়দানে আওয়ামীলীগ যে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, জামায়াত নেতৃবৃন্দ সেটা অনুধাবন করতে পারেননি। ৩০০ আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাস্তবতার নিরিখে ভোট বিভক্তির কারণে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত করে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের পরাজয় পরবর্তী স্বৈরশাসনের পথ প্রশস্ত করে।

মাত্র তিন বছর পর দেশ, জাতি এবং দলীয় স্বার্থে আবারও বিএনপির সাথে জামায়াতে ইসলামী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সূচনা হয় এবং চার দলীয় জোট গঠিত হয়। বাস্তবতা এবং প্রয়োজনের তাগিদেই আদর্শিক দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও অস্তিত্বের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সময়ের দাবি ছিল। পাঁচ বছর ক্ষমতার ভাগাভাগিতে একে অন্যর দেনা পাওনার যথেষ্ট ফারাগ থাকা সত্ত্বেও, লগি-বৈঠার তান্ডবের দিনে বিএনপি জামায়াতের সম্পর্কের ব্যবধান জাতির জন্য অন্ধকার অমানিশা নিয়ে আসে। পাঁচ বছরের জোট সরকারের শাসন আমলে জামায়াত ক্ষমতার অংশীদার হয়েও জাতীয় জীবনে তেমন ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়নি। নিজ মন্ত্রণালয় ছাড়া দুর্নীতির ব্যাপারে অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করতে হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের মধ্যে ন্যূনতম সম্পর্ক সৃষ্টি করতে না পারা, জোট সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘাত সংঘর্ষ বন্ধে খালেদা জিয়া এবং জামায়াতের সাথে সমন্বয়হীনতার অভাবে জাতি হিসেবে ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে আসীন হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, যে প্রত্যাশা নিয়ে জোট সরকার গঠিত হয়েছিল, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেভাবে দেশ পরিচালনা সম্ভব হয়নি। জামায়াতের পক্ষ থেকে ন্যূনতম একটি টেলিভিশন চ্যানেল পাঁচ বছরেও চালু করা সম্ভব হয়নি।

২০০৯ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে জামায়াত এবং বিএনপির মধ্যে মতানৈক্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজয়ের মাধ্যমে দীর্ঘ স্বৈরশাসনের জন্ম হয়। পরবর্তীতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এবং বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষে জামায়াতের নির্বাচন করা এবং পরাজয় বরণ করলে, দেশ ও জাতির কপালে নেমে আসে চরম দুর্গতি।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন মহান আল্লাহর এক অবারিত রহমত এবং বরকতের ফসল। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক হাজারো চক্রান্ত এই স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে দিতে তৎপর রয়েছে। আবেগ এবং উচ্ছ্বাস পরিহার করে এই চক্রান্ত অনুধাবন করতে পারা দায়িত্বশীলতার পরিচয়। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে দেশপ্রেমিক দল সমূহ এবং জনগণের ত্রিমুখী বিভাজন জাতির কপালে আবার অমাবস্যার কালো রাত্রের মত অন্ধকার ধেয়ে আসতে পারে, এই বিভক্ত রাজনীতি অদূরদর্শিতাই প্রমাণ করে।

বাংলাদেশের ইসলামপন্থী দলসমূহ এবং জাতীয়তাবাদী শক্তি বিগত দিনগুলোতে যে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই দিনের কথা স্মরণ করে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং চরম ধৈর্যের পরাকাষ্ঠার মাধ্যমে আগামী দিনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই। একে অন্যকে হেয় করার মত বক্তব্য অবশ্যই পরিহার করা উচিত। সকল রাজনৈতিক শক্তি এক টেবিলে বসে কিভাবে অনাগত দিনের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যায়, সে ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ রূপরেখা প্রণয়ন প্রয়োজন। বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় আনা খুবই জরুরী। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে যার যার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করা যেতে পারে কিন্তু বিজ্ঞজনের পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি, একে অন্যকে তির্যক ভাষায় কথা বলা, বিবেকবান মানুষরা পছন্দ করে না। এবিষয়ে দেশে-বিদেশে শুভাকাঙ্ক্ষীরা চরম হতাশা ব্যক্ত করছেন।

বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অতীতে যেমন রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হয়েছে। এ কথা মনে রাখা উচিত, ভবিষ্যতেও যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনায় আবার দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির সাথেই ঐক্য করতে হবে, এক্ষেত্রে সম্পর্কের অবনতি সাধারণ জনগণের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর ভিন্ন আঙ্গিকে আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে ভিন্ন পথে স্বৈরাচারের উন্মেষ ঘটতে পারে। দেশে দেশে এই উদাহরণ আমাদের অন্তরাত্তাকে কাঁপিয়ে তুলে।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে ইসলামিক সালভেশন ফ্রন্ট বিজয়ী হওয়ার পর মুসলিম প্রধান দেশ আলজেরিয়ায় একদশক ধরে গৃহযুদ্ধে দুই লাখ মানুষ নিহত হয়। মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড বিজয়ী হওয়ার দুই বছরের মাথায় গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটে। আরব বসন্তের সূতিকাগার তিউনিসিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ বিপ্লব উত্তর ইসলামী সরকারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন, আজ তিনি নিজেই স্বৈরশাসক হয়ে তিউনিশিয়ায় একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করেছেন। গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়ার আসাদ সরকার এখনো ক্ষমতা আটকে ধরে আছেন। গণতন্ত্র সেই সমস্ত দেশে নিরুদ্দেশ।

সেই বিবেচনায় ইসলাম এবং জাতীয়তাবাদী শক্তি- দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাবেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক ভুল বুঝাবুঝি দূর করবেন। তা না হলে, ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে একে অন্যের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ, দোষারোপ এবং বিভক্তির রাজনীতির করুন পরিণতির দায়ভার কে নিবে? হাজারো শহীদের অন্তরাত্মা, হাজার হাজার পঙ্গু ছাত্র জনতার করুণ আর্তনাদ, শহীদ আনাসের মায়ের কান্নার মত হাজারো মা-বাবার কান্না, দেশ প্রেমিক রাজনীতিবিদের বিবেককে জাগ্রত করবে- অধিকাংশ মানুষের এই প্রত্যাশা।

  • লেখক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগর শাখার সাবেক নায়েবে আমীর।

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে