ঢাকা কলেজের দক্ষিণায়ন হলে ছাত্রদলের এক সদস্যের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ৭ অক্টোবর রাতে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ রেজাকে রাতভর নির্যাতন করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মারুফ দাবি করেছেন, ওই রাতে তাকে রাত ১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অভিযুক্তরা হলেন কলেজ ছাত্রদলের সহ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক হাবিব হাওলাদার শিহাব ও তার সহযোগী আল রাহাত, সালাউদ্দিন, এবং মাহমুদুল হাসান অর্নব।
মঙ্গলবার ভুক্তভোগী মারুফ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “আমি মারুফ রেজা, ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত রাতে আমার জীবনের সবচেয়ে জঘন্য অধ্যায়ের সূচনা হয়।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, দক্ষিণায়ন হলে ৩০১ নাম্বার রুমে তাকে রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়।
মারুফ আরও লেখেন, “ঘটনার শুরু হয় যখন সালাউদ্দিন ভাই রুমে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিলেন। আমি তাকে বলি, ‘ভাইয়া, গালাগালি করবেন না, ছোট ভাই পড়ছে পাশে।’ এ কথায় সালাউদ্দিন ভাই ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসে। এর পর আমার রুমমেট রামিম এবং ৪ তলার রাহাত ভাই আমাকে রক্ষা করতে আসে, কিন্তু তারাও গালিগালাজের শিকার হয়। এরপর রাহাত ভাই নর্থ হল থেকে সিয়াব ভাইকে ডেকে এনে রুম আটকে দেয় এবং আমাকে রাতভর নির্যাতন করা হয়।”
মারুফ জানান, তিনি যখন কলেজের শিক্ষককে ফোন করতে চেয়েছিলেন, তখন তাকে হুমকি দেওয়া হয় এবং মেরে ফেলার ভয় দেখানো হয়। ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় তিনি তার বিভাগের বন্ধু সিআর ইমরানকে ফোন করে সাহায্য চান। ইমরান ভোর সাড়ে ৪টায় হলে এসে তাকে নিয়ে বের হন এবং কলেজ গেট পর্যন্ত পৌঁছে দেন। সেখান থেকে মারুফ ঢাবির হলে আশ্রয় নেন এবং পরে বাড়ি ফিরে যান।
ঘটনার ২৪ মিনিটের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে, যেখানে মারুফকে নির্যাতন ও গালিগালাজ করা শোনা যায়। এক পর্যায়ে তাকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয় এবং তাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এই পুরো সময় জুড়েই গালিগালাজ এবং শারীরিক আঘাতের শব্দ শোনা যায়।
ঘটনার অভিযুক্ত আল রাহাত তার বক্তব্যে দাবি করেন, এটি নির্যাতন নয় বরং কথাবার্তা। তিনি বলেন, “একটি ছেলে বেয়াদবি করে সরি বলেনি, বরং সিনিয়র আনবে বলে হুমকি দেয়। তাই তাকে কিছু কথা বলা হয়েছে, মারধর করা হয়নি, শুধু গালাগালি করা হয়েছে।”
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীন বলেন, “ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমাদেরই কর্মী। ঘটনাটি নিজেদের ভেতরেই ঘটেছে এবং আমরা এটি নিজেরাই দেখছি।” তিনি আরও বলেন, “ওকে টর্চার করা হয়নি, বরং বিষয়টি অন্য কোনো সংগঠনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এগুলো প্রকাশ করেছে। এরপরও যদি তদন্তে অভিযুক্তদের দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দক্ষিণায়ন হলের প্রভোস্ট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমি শক্ত পদক্ষেপ নেব যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়। আমি অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেছি এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের যেকোনো বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবো।”
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কে এম ইলিয়াস বলেন, “হল প্রভোস্টরা বিষয়টি তদন্ত করছেন এবং তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাই না এমন কোনো ঘটনাও আমাদের প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করুক।”