বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজন শিশু ও কিশোর-কিশোরীর মধ্যে একজনের বেশি হ্রস্য দৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি পরিচালিত বড় একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। এই গবেষণার ফলাফল থেকে স্ক্রিনের সময় কমানোর এবং শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে।

হ্রস্য দৃষ্টি বা মায়োপিয়া হলো চোখের একটি অবস্থা যেখানে দূরের জিনিসগুলি স্পষ্টভাবে দেখা যায় না। এটি সাধারণত চশমা বা কন্টাক্ট লেন্সের মাধ্যমে সংশোধন করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা এখনও নিশ্চিত নয় কেন মায়োপিয়া ঘটে, তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার বা স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারের ফলে শিশুরা দৃষ্টি হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে থাকে। কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন যে মাঠে বা প্রাকৃতিক পরিবেশে বেশি সময় কাটানো এই সমস্যা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে গত ৩০ বছরে মায়োপিয়ার প্রাদুর্ভাব নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে মায়োপিয়ার সংখ্যা ৭৪০ মিলিয়নে ছাড়িয়ে যাবে।

ব্রিটিশ জার্নাল অফ অপথ্যালমোলজিতে প্রকাশিত এই বিশ্লেষণে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মেয়ে এবং শিশু-কিশোরদের এই অবস্থার বিকাশের সম্ভাবনা বেশি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের গুয়াংঝুতে অবস্থিত সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, মায়োপিয়া সাধারণত শৈশব থেকে শুরু হয় এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও খারাপ হতে থাকে। এই অবস্থা বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

গবেষকরা ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রাদুর্ভাবের সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পর্যালোচনা করেন। স্বাস্থ্যসেবা নীতি এবং প্রতিরোধমূলক প্রচেষ্টাকে অবহিত করার জন্য আরও আপডেট তথ্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে, ২০৫০ সাল পর্যন্ত ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মায়োপিয়ার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে অনুমান করা হয়েছে। তারা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকাশিত সকল প্রাসঙ্গিক গবেষণা এবং সরকারি প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছেন, যেখানে ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা এবং ওশেনিয়া থেকে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি শিশু-কিশোর ও প্রায় ২ মিলিয়ন মায়োপিয়া আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ২৭৬টি গবেষণা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এখন, ভৌগলিক এবং অন্যান্য ভেরিয়েবলের জন্য সমস্ত গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে ১৯৯০-২০০০ সালে প্রাদুর্ভাব ২৪ শতাংশ থেকে ২০০১-২০১০ সালে ২৫ শতাংশে বৃদ্ধি পায়, এরপর ২০১১-২০১৯ সালে ৩০ শতাংশ এবং ২০২০-২০২৩ সালে ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে।

২০২৩ সালের পরিসংখ্যান এবং প্রবণতার ভিত্তিতে, বিশ্বব্যাপী মায়োপিয়ার প্রাদুর্ভাব ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা ২০৩০ সালে ৬০০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৭৪০ মিলিয়ন কেসে ছাড়িয়ে যাবে। আশংকা করা হচ্ছে, এটি ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এবং যুবতী মহিলাদের মধ্যে বেশি এবং ৬ থেকে ১২ বছর বয়সীদের তুলনায় ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে অধিক হবে।

গবেষকরা বলছেন, ২০২০ সালের পর কোভিড মহামারী মায়োপিয়ার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। তারা উল্লেখ করেছেন, “পর্যবেক্ষণ করা প্রমাণগুলো মহামারী এবং তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দ্রুত দৃষ্টির অবনতি ঘটানোর মধ্যে সম্ভাব্য সংযোগের ইঙ্গিত দেয়।”

গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে প্রাদুর্ভাবের মধ্যে লিঙ্গ পার্থক্য কারণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় দ্রুত বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে এবং বাইরে কম সময় কাটায়। পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ-পরিসরের কার্যকলাপে বেশি সময় ব্যয় করে। তারা সব শিশু-কিশোরের জন্য আরও বেশি শারীরিক কার্যকলাপ ও কম স্ক্রিন টাইমের আহ্বান জানিয়েছেন। গবেষকরা তাদের তথ্য বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত গবেষণার নকশা এবং পদ্ধতির ভিন্নতা সহ তাদের ফলাফলের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেছেন।

“এই জ্ঞাত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, বড় নমুনার অন্তর্ভুক্তির কারণে, মায়োপিয়ার প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে আমাদের অনুমানগুলি সুনির্দিষ্ট সংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে,” তারা উল্লেখ করেছেন, “এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে ভবিষ্যতে মায়োপিয়া বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সেবার জন্য বোঝা হয়ে উঠতে পারে।”

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে