বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস সোমবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর সহায়তা ও চলমান মানবিক সংকট মোকাবিলায় জাতিসঙ্ঘের তত্বাবধানে একটি “নিরাপদ অঞ্চল” স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

ঢাকায় তার কার্যালয়ে মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদনকারী থমাস অ্যান্ড্রুজের সাথে বৈঠকে ইউনুস এই প্রস্তাব দেন। তিনি প্রস্তাবিত নিরাপদ অঞ্চলকে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে সহায়তা পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে অভিহিত করেন এবং এটি সংকট সমাধানে এবং বাংলাদেশে শরণার্থীদের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে একটি “গুরুত্বপূর্ণ সূচনা” হিসেবে উল্লেখ করেন।

অ্যান্ড্রুজ একমত পোষণ করে বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি একটি “বৃহত্তর সংকটে” রূপ নিয়েছে, যেখানে লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তার অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন যে, মিয়ানমারজুড়ে কমপক্ষে ৩.১ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে কয়েক লক্ষ মানুষ রাখাইন রাজ্যে রয়েছে, যেখানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রায় ৩০,০০০ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে প্রায় ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যারা ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের পর পালিয়ে এসেছিল। তাদের বেশিরভাগ কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে। ২০২০ সাল থেকে প্রায় ৩৫,০০০ জনকে ভাসান চরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

ইউনুস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, বিশেষত আঞ্চলিক আসিয়ান গোষ্ঠীকে, রাখাইন সংকটে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘের সমর্থন কামনা করেন।

বৈঠকে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্ত এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক আন্দোলনের বিষয়েও আলোচনা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে