শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব আয়োজিত বিবিসি বাংলার প্রয়াত পাঁচজন বিশিষ্ট সাংবাদিকদের নিয়ে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াত সাংবাদিকরা হলেন– ঊর্মি রহমান (বিবিসি বাংলার সাবেক সাংবাদিক, লেখক, এলবিপিসি সদস্য এবং লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রথম নির্বাচনের অন্যতম নির্বাচন কমিশনার)
গোলাম কাদের (বিবিসি বাংলার প্রবীণ সাংবাদিক এবং নুতন দিনের সাবেক প্রধান সম্পাদক) কাদের মাহমুদ (জনমতের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক এবং বিবিসি বাংলার সাবেক সাংবাদিক) গোলাম মুর্শিদ ( বিবিসি বাংলার সাবেক সাংবাদিক এবং অর্ধশত বইয়ের প্রখ্যাত লেখক) শাহীন জামান (সাংবাদিক, জনমত ও বিবিসি বাংলা, নাট্য শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী)।
এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের ও সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ।
প্রয়াত সাংবাদিকদের কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের স্মৃতি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট মুহিব চৌধুরী, বিবিসি বাংলার সাবেক সাংবাদিক কামাল আহমেদ, প্রবীণ সাংবাদিক দানেশ আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যাংকার খুররম মতিন, সাপ্তাহিক জনমতের সাবেক সম্পাদক নবাব উদ্দিন, বিশিষ্ট টিভি নিউজ রিডার জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোস্তফা কামাল মিলন, সাপ্তাহিক সুরমা’র সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, সাপ্তাহিক বাংলা পোস্ট এর সম্পাদক ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী ও এল বি ২৪ এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল প্রমুখ।

প্রয়াত এ পাঁচজন বিশিষ্ট সাংবাদিককে নিয়ে স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, তারা প্রত্যেকেই ছিলেন বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক। বিবিসি বাংলা বিভাগে কাজ করে সুনাম অর্জন করেন তারা। একইসঙ্গে লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জনমত ও নতুন দিনের প্রকাশনায়ও তাদের অনেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সহকর্মীদের স্মৃতিকথায় উঠে আসে বিলেতে বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশে এবং বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে তাদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার কথা। এ পাঁচজন স্বনামধন্য সাংবাদিক সম্প্রতি অল্প সময়ের ব্যবধানে মৃত্যুবরণ করেন।
তাদের বক্তব্যে উঠে আসে প্রয়াত পাঁচ সাংবাদিকের কর্মনিষ্ঠা, বন্ধুত্ব, সহকর্মীদের প্রতি গভীর আন্তরিকতা, শ্রদ্ধাবোধ এবং বাংলা ভাষার প্রতি তাদের মমতার কথা। এসময় ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
বিবিসি বাংলার সাবেক সাংবাদিক কামাল আহমেদ বলেন, মূলত পাঁচজন নয়, সৈয়দ আফসার উদ্দিনসহ বিবিসি বাংলার ছয়জন প্রয়াত সাংবাদিকের মধ্যে একটি বিষয়ে অভিন্ন মিল ছিল, আর তা হলো— ব্রিটেনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চা ও প্রসারে তারা প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। গোলাম মুরশিদ তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। শাহীন জামান শিল্পচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সাপ্তাহিক জনমতের সাবেক সম্পাদক নবাব উদ্দিন বলেন, গোলাম মুরশিদ বাংলার পণ্ডিত ছিলেন। মালবারি স্কুলের বাংলা বিভাগের প্রধান থাকাকালে তিনি মালবারি গুচ্ছ প্রকাশ করেন, যা বাংলা শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাপ্তাহিক জনমত এ মালবারি গুচ্ছ প্রকাশের দায়িত্ব পালন করে। বইগুলো বাঙালির জীবন কাহিনী নিয়ে সরল ভাষায় রচিত। একইসঙ্গে তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে অভিধান রচনা করেন। তিনি কালাপানির হাতছানি নামে একটি বই লেখেন, যা বিতর্কের সৃষ্টি করে।
ঊর্মি রহমান সম্পর্কে নবাব উদ্দিন বলেন, তার সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক ছিল। কাদের মাহমুদ সম্পর্কে তিনি বলেন, জনমতে থাকাকালে কাদের মাহমুদ সাহিত্য পাতা চালু করে লন্ডনে বাংলা সাহিত্য চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি পঞ্চাশটির মতো বই রচনা করেন। এছাড়াও তার রচিত গানের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক।
সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী প্রয়াত সাংবাদিক গোলাম কাদের সম্পর্কে বলেন, তার প্রতি বিলেতের বাংলা গণমাধ্যমকর্মীদের অনেক ঋণ রয়েছে। বাংলা কাগজগুলোতে বাংলা ফন্ট ব্যবহারের কাজটি তিনি খুব সহজ করে দেন। তিনি আমাদেরকে শিখিয়ে দেন কীভাবে সহজে বাংলা ফন্ট ব্যবহার করা যায়। ঊর্মি রহমান সম্পর্কে মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ খুব নিবিড় ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত আন্তরিক ও সদালাপী মানুষ ছিলেন তিনি। পনের বছর আগে প্রেস ক্লাবের একটি নির্বাচনে তিনি নির্বাচন কমিশনার হয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। প্রেস ক্লাবের যে ক’জন সদস্য নির্বাচন কমিশনার হয়েছিলেন তিনি তাঁদের মধ্যে একজন।

সাংবাদিক মো: আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল বলেন শাহীন জামান বিলেতে বাঙালি কমিউনিটির সুপরিচিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, একাধারে একজন সাংবাদিক, কণ্ঠশিল্পী, নাট্য শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী। বিবিসি বাংলা, সাপ্তাহিক জনমত ও ইউরোপের ১ম স্যাটেলাইট চ্যানেল বাংলা টিভিসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি একজন নেতৃস্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে ৮০ ও ৯০ দশকের শেষের দিকে ইউকে জুড়ে অসংখ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন ও  উপস্থাপনা করেন।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি রহমত আলী, সাংবাদিক ময়েজ আহমেদ, আহাদ চৌধুরী বাবু, মোঃ আব্দুল হান্নান, মুনীরা পারভেন, আকবর হুসাইন, কয়েস আলী, পলি রহমান, ফয়সাল মাহমুদ, খালেদ মাহমুদ রনি , আব্দুল কাইয়ুম, মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, আজীবন সদস্য বাবলু হক প্রমুখ।

সভায় কবিতা পাঠ করেন ঊর্মি মাযহার ও সারওয়ার-ই আলম। শেষে পাঁচজন সাংবাদিকের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে