আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির কর্মীদের মধ্যে যাদেরকে বিভিন্ন সময়ে গুম করার কয়েকদিন পর গুলি করে পঙ্গু করার ঘটনায় এ অভিযোগ করা হয়।

মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) দুপুরে ছাত্রশিবিরের সাবেক চার কর্মী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে উপস্থিত হয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন।

তাদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান ও অ্যাডভোকেট আমানুল্লাহ আল জিহাদী (আদীব)। তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র জমা দেন।

ভুক্তভোগীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমানুল্লাহ আল জিহাদী (আদীব) জানান, ছাত্রশিবিরের যাদেরকে বিভিন্ন সময়ে গুম করার কয়েকদিন পর গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছিল এমন কয়েকজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করতে এসেছেন।

অভিযোগকারীরা হলেন- জয়পুরহাট জেলার ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আবুজর গিফারি, জয়পুরহাটের সাবেক জেলা সেক্রেটারি ওমর আলি, যশোর জেলা পশ্চিম শাখার চৌগাছা থানার সাবেক সেক্রেটারি ইসরাফিল এবং যশোর জেলা পশ্চিমের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক রুহুল আমিন।

মামালা দায়ের শেষে আয়োজিত প্রেসব্রিফিং এ অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, ২০১৫ সালে আবুজর গিফারি ও ওমর আলি সাংগাঠনিক কাজে ঢাকাতে এসেছিলেন। হানিফ পরিবহনের বাসে করে যখন আব্দুল্লাহ নামেন পরদিন ৯ ডিসেম্বর তখন সাদা পোষাকে একদল লোক র‍্যাব পরিচয় দিয়ে তাদেরকে একটি মাইক্রোতে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং র‍্যাবের উত্তরা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের নামে একসপ্তাহ তাদের ওপ্র চরম অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরে তাদেরকে রাজশাহী র‍্যাব ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয় এবং সেখনেও তাদের ওপর চরম নির্যাতন চালানো হয়। ১৬ তারিখ রাতে তাদের আবার নিয়ে যাওয়া হয় জয়পুরহাট র‍্যাব ক্যাম্পে। এরপর পাঁচবিবি থানায় নিয়ে গিয়ে তাদেরকে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এখানে থেমে থাকলে কিছুটা সান্তনা হয়তো পাওয়া যেতো। কিন্তু এখান থেকে রাত ৩টার দিকে একটি অরণ্যে নিয়ে গিয়ে পয়েন্ট ব্লাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাদের পায়ের অপর গুলি চালিয়ে তা ঝাঁজরা করে দেয়া হয়। আহত অবস্থায় তাদেরকে স্থানীয় উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদেরকে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়। হাসপাতালের ডাক্তাররা সেখান থেকে তাদের ঢাকায় স্থানান্তর করতে বলেন। এরপর পঙ্গু হাসপাতালে তাদের পায়ে অস্ত্রপোচার করার পর অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়। ইতমধ্যেই তাদের পা গ্যাংগ্রিন আক্রান্ত হলে তা কেটে বাদ দেয়া হয়।

অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান আরো জানান, ইসরাফিল ও রুহুল আমিন যশোর জেলার চৌগাছা থানার শিবিরের নেতা ছিলেন। ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট সাংগাঠনিক কাজ শেষে বাড়ী ফেরার পথে তাদেরকে কয়েকজন পুলিশ গ্রেফতার করে চৌগাছা থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে একই কায়দায় পায়ে গুলি করে তা ঝাঁজরা করে দেয়া হয়। এসময় তাদের চোখ বাঁধা ছিলো। তাদেরকে প্রথমে উপজেলা হাসপাতালে পাঠানো হলেও পরে যশোর জেলা হাসপাতাল এবং সবশেষে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিতসাধীন থাকারপর তাদের পা কেটে ফেলা হয়। কিছুটা সুস্থ হবার পর তাদেরকে যশোর কারাগারের পাঠানো হয়।

শিবির এই নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার ইসলামী ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতা কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন ও হত্যা করেছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, শিবিরের যেসব নেতা ও কর্মী গুম হয়েছেন এবং এরপর হত্যার শিকার হয়েছেন তার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে ট্রাইবুনালে। যেহেতু এই চারজন বেঁচে আছেন এবং তাদের অপর হয়ে যাওয়া নির্যাতনের জন্য যারা দায়ী তাদেরকে চিহ্নিত করা গেছে তাই এই মাম্লে করা হয়েছে। কাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছ এরকম এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমারা কারো নাম প্রকাশ করবোনা। তবে, জয়পুর হাটের ঘটনায় ১২ জন এবং চৌগাছার ঘটনায় ৯জনকে চিহ্নিত করা এজহারভুক্ত করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করতে তিনি অস্বীকার করে বলেন, প্রাথমিকভাবে এই নামগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, ভবিষ্যতে আরো নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে দায়ীদের চিহ্নিত করার পর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে