– অধ্যাপক মফিজুর রহমান
মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন সাউথ ইস্ট ইংল্যান্ড রিজোনের কেন্ট ব্রাঞ্চের উদ্যোগে আসফোর্ড শহরে হজরত ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ)কে নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় শনিবার (১৪ নভেম্বর)। ব্রাঞ্চ সভাপতি কাজী কবিরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ অধ্যাপক মফিজুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রিজোনাল সভাপতি হাফিজ মাওলানা কামাল উদ্দিন। শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন সাউথ ইস্ট ইংল্যান্ড রিজোনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল। আরো উপস্থিত ছিলেন রিজোনাল বায়তুলমাল সেক্রেটারি শাহাব উদ্দিন দুলাল, সাজ্জাদ হোসেন, কাজী আকিব উদ্দিন, তাবির আলী, ফারুক মিয়া, মিসবা কয়েস, মাসুদ চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন
বাবুল মিয়া, মাওলানা শাব্বির আহমেদ, নুরুল ইসলাম ও দেলোয়ার হোসেন সুফিয়ান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর মফিজুর রহমান বলেন, ঈসা (আঃ) পুনার্গমনের মাধ্যমে পৃথিবীতে সত্য দ্বীনের বিজয় প্রতিষ্ঠিত হবে। ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামের অবতরণের বিষয়টি যেমন কুরআন দ্বারা প্রমাণিত, তেমনি সত্যবাদী ও সত্যবাদী হিসাবে সমর্থিত আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তার আগমন সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন। তিনি তো নিজের পক্ষ হতে বানিয়ে কিছুই বলেন না। এ ব্যাপারে মুতাওয়াতের সূত্রে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। এ বিষয়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের সমস্ত আলেমের ইজমা সংঘটিত হয়েছে। ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণের প্রতি ঈমান আনয়ন করাকে ওয়াজিব হিসাবে গণ্য করেছেন।
ঈসা (আঃ)কে আল্লাহ তা’আলা জীবিত অবস্থায় আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। ইহুদীরা তাকে হত্যা করতে পারেনি। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে তিনি আমাদের নবীর উম্মাত হয়ে আবার দুনিয়াতে আগমণ করবেন। দাজ্জালকে হত্যা করবেন, খৃষ্টান ধর্মের পতন ঘটাবেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন, আমাদের নবীর শরীয়ত দ্বারা বিচার-ফয়সালা করবেন এবং ইসলামের বিলুপ্ত হওয়া আদর্শগুলো পুনর্জীবিত করবেন। পৃথিবীতে নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করার পর তিনি মৃত্যু বরণ করবেন। মুসলমানগণ তার জানাযা নামায পড়ে তাকে দাফন করবেন। তাঁর আগমণের পক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদীছে অনেক দলীল রয়েছে।
‘‘মুসলমানদের ইমাম যখন তাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়ার জন্য সামনে চলে যাবেন তখন ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। ইমাম যখন ঈসা (আঃ)এর আগমণ অনুভব করবেন তখন তিনি পিছিয়ে আসতে চেষ্টা করবেন যাতে ঈসা (আঃ) সামনে গিয়ে মানুষের ইমামতি করেন। ঈসা (আঃ) ইমামের কাঁধে হাত রেখে বলবেনঃ তুমিই সামনে যাও এবং তাদের নামায পড়াও। কারণ তোমার জন্যই এ নামাযের ইকামত দেয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি ইমামতি করবেন। নামায শেষে তিনি দরজা খুলতে বলবেন। তারা দরজা খুলে দিবে। পিছনে তিনি দাজ্জালকে দেখতে পাবেন। তার সাথে থাকবে অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত সত্তুর হাজার ইহুদী। দাজ্জাল ঈসা (আঃ)কে দেখেই পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে থাকবে এবং পালাতে চেষ্টা করবে। ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনো রেহাই পাবেনা। ঈসা (আঃ) লুদ্দ শহরের পূর্ব গেইটে তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করবেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ)এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে পরাজিত করবেন। আল্লাহর কোন সৃষ্টির অন্তরালে ইহুদীরা পালাতে চাইলে আল্লাহ সেই সৃষ্টিকে কথা বলার শক্তি দিবেন। পাথর, গাছ, দেয়াল কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর আড়ালে পলায়ন করলে সকলেই বলবেঃ হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে গারকাদ নামক গাছের পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ বলে পরিচিত।
ঈসা আলাইহিস সালাম পৃথিবীতে কতদিন থাকবেন, এ বিষয়ে ইমাম তাবারানী এবং ইবনে আসাকির আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিনি মানুষের মাঝে চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। ইমাম আহমাদ, ইবনে আবী শায়বা, আবু দাউদ, ইবনে জারীর এবং ইবনে হিববান প্রমুখ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। অতঃপর মৃত্যুবরণ করবেন। মুসলিমগণ তার জানাযা সালাত পড়বে। আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশেই তাকে দাফন করা হবে।