ঢাকা, ৮ মার্চ ২০২৫:

আজ ৮ই মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস, যা বিশ্বব্যাপী নারীদের অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়। এই বিশেষ দিনটি নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাদের অধিকারের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। ২০২৫ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: “For ALL women and girls: Rights. Equality. Empowerment.” অর্থাৎ, অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন এবং নারী ও কন্যার উন্নয়ন। এই স্লোগানটি সমাজে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীদের প্রতি ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।

নারীর অবদান এবং চ্যালেঞ্জ

সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের অবদান অপরিসীম, তবে এখনও অনেক ক্ষেত্রে তারা বৈষম্য এবং নানা ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। কর্মক্ষেত্র, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনপরিসরে নারীরা প্রায়ই বৈষম্য ও নির্যাতনের সম্মুখীন হন। বিশেষ করে, নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা এবং পারিবারিক নির্যাতন এখনও বাংলাদেশের সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত।

২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার নারীদের পরিসংখ্যান:

বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)-এর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ৫ বছরে অন্তত ১১,৭৫৮ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৬,৩০৫ জন, যাদের মধ্যে ৩,৪৭১ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। উদ্বেগের বিষয় হলো, ১০৮৯ জন নারী ও শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষণের পর ২০৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশু ১১৮ জন। এছাড়া, ৫০ জন ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশু আত্মহত্যা করেছেন এবং ২,৬২৪ জন নারী ও শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় ২৯০ জন নারী নিহত হয়েছেন, ৩৫৫ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং ২৬ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে ১,২৬২ জন নারী নিহত হয়েছেন, ৩৮৬ জন আহত হয়েছেন এবং ৪১৬ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অ্যাসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৯৪ জন নারী ও কন্যা শিশু, যার মধ্যে ৯ জন নিহত হয়েছেন।

২০২৫ সালের প্রথম ২ মাসে নারী নির্যাতন:

২০২৫ সালের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তত ২২৪ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৭ জন, যাদের মধ্যে ৬৬ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। উদ্বেগের বিষয় হলো, ২৭ জন নারী ও কন্যা শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ৫ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় ৬ জন নিহত এবং ২ জন আহত হয়েছেন। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে ৫৮ জন নারী নিহত এবং ২০ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। এসিড সহিংসতার শিকার হয়ে ১ জন নারী নিহত হয়েছেন।

নারী নির্যাতনের কারণ ও সমাধান:

বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি বৈষম্য ও নারী বিদ্বেষমূলক ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো:

  1. কুসংস্কার ও ধর্মীয় অপব্যাখ্যা: নারীদের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ব্যাপারে অনেক জায়গায় ভ্রান্ত ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, যা নারীদের সমাজে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে।
  2. আইনের বাস্তবায়ন: আইনের সঠিক বাস্তবায়নের অভাব, পুলিশের অসচেতনতা এবং বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অপরাধীরা শাস্তি এড়িয়ে যায়।
  3. সামাজিক বাধা: নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে আইনি সহায়তা গ্রহণের অনেক জটিলতা এবং সামাজিক বাধা রয়েছে, যার ফলে নির্যাতিত নারীরা যথাযথ আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা গ্রহণ করতে পারে না।
  4. নারীর সম্মান ও নিরাপত্তা: প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ব্যবস্থায় নারীদের অবহেলা এবং তাদের জন্য সম্মানজনক ও নিরাপদ পরিবেশ গঠন না হওয়া।

এইচআরএসএস-এর আহ্বান:

এমতাবস্থায়, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যে, সকল জায়গায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নারীদের সাংখ্যিক দিক নয় বরং কার্যকর ও গুণগত দিক বিবেচনায় নিতে হবে। যে কোনো রাষ্ট্রীয় আয়োজনে নারীদের অংশগ্রহণ এবং অর্থবহ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, সমাজের সকল পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ঘরে ও বাহিরে নারীর প্রতি সহিংসতার সকল বিচার ও আইনী প্রক্রিয়া সহজতর ও দ্রুত করতে হবে।

বর্তমান সময়ে অনলাইনে নারীরা ব্যাপকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নারীদের সাইবার বুলিং থেকে মুক্ত করতে, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় স্তর থেকে ব্যাপক সচেতনা ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে নারীরা তাদের ডিজিটাল অধিকার পরিপূর্ণভাবে ভোগ করতে পারেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে