– হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এর সংগৃহীত তথ্য
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে পঞ্চগড় সীমান্তে মো. আল আমিন (৩৬) ও সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের হামলায় শাহেদ মিয়া (২৫) হত্যার ঘটনায় ‘এইচআরএসএস’ তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু বিচারের আহ¦ান জানাচ্ছে।বাংলাদেশের বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, পঞ্চগড়ের ভিতরগড় সীমান্তে ভারতের বিএসএফের গুলিতে মো. আল আমিন (৩৬) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। নিহত মো. আল আমিন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের জিন্নাতপাড়া এলাকার সুরুজ আলীর ছেলে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার পর পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় সীমান্তে ৭৪৪ নম্বর মেইন পিলারের ৭ নম্বর সাব-পিলার-সংলগ্ন এলাকার কাঁটাতারের বেড়ার লিংক রোডুসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অপরদিকে সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ভারতের খাসিয়াদের হামলায় শাহেদ মিয়া (২৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত শাহেদ সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামের মোশাহিদ মিয়ার ছেলে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি এই সকল ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক কমপক্ষে ৩০৫ জন বাংলাদেশি নিহত এবং অন্তত ২৮২ জন আহত হয়েছেন। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক শুধু ২০২৪ সালে ৫৭ টি হামলার ঘটনায় ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত, ২৫ জন আহত, ৪৭ জন গুলিবিদ্ধ এবং ১৫৮ জন গ্রেফতার হয়েছেন। একইসময়ে সীমান্তে ৯ জন বাংলাদেশির লাশ পাওয়া গেছে যারা ভারতীয় নাগরিক ও খাসিয়াদের হামলায় নিহত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৮ই মার্চ পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক ১৫ টি হামলার ঘটনায় ৪ জন বাংলাদেশি নিহত, ১০ জন আহত, ৫ জন গুলিবিদ্ধ ও ১৫ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এসময় সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক ও খাসিয়াদের হামলায় ৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এসকল ঘটনা সীমান্তের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি নাজুক পরিস্থিতি নির্দেশ করে। ভারতের বারবার প্রতিশ্রুতি এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই দুঃখজনক ঘটনাগুলি উদ্বেগজনক হারে বছরের পর বছর ধরে ঘটছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এর সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ বছরের চিত্র নিচে উল্লেখ করা হলো :
২০২৪ | ২০২৩ | ২০২২ | ২০২১ | ২০২০ | ২০১৯ | ২০১৮ | ২০১৭ | ২০১৬ | ২০১৫ | মোট | |
আহত | ২৫ | ৩১ | ৩১ | ১৪ | ২৫ | ২৫ | ১২ | ৩৭ | ২৮ | ৫৪ | ২৮২ |
নিহত | ২৬ | ৩০ | ২৩ | ১৭ | ৫১ | ৪২ | ১৫ | ৩০ | ২৮ | ৪৩ | ৩০৫ |
সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অন্যতম স্পর্শকাতর ইস্যু। দুই দেশের সীমান্তে প্রায়ই বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনা ঘটে, যা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অধিকাংশ সময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল যা সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ভাটা পড়েছে। উভয় সরকারই সীমান্তে বেসামরিক জীবন রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলে আসছে। বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলেও এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। আমরা উভয় দেশের কর্তৃপক্ষকে এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে গঠনমূলক সংলাপ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সীমান্তের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে শূন্যে নিয়ে আসার বিষয়ে আহবান জানাই।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি বাংলাদেশ ও ভারত সরকারকে আল আমিন, শাহেদ মিয়া, কিশোরী স্বর্ণা দাস ও ফেলানীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ পূর্ববর্তী সকল সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদেরকে শাস্তির আওতায় আনার আহ¦ান জানাচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় সমস্ত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনের নীতিগুলিকে মেনে চলতে দুই দেশের সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।