– এডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বলেছেন, কুরআনের শিক্ষা লাভে প্রতিদিন কুরআন অধ্যয়ন জরুরি। আর কুরআন অধ্যয়নের ও তেলাওয়াতের সময় এর আদব ও গুরুত্ব রক্ষায়ও কুরআনের বাণী মেনে চলা আবশ্যক। যেখানে কুরআনের আলোচনা হয় কিংবা কুরআন তেলাওয়াত হয় সেখানে ভদ্রভাবে অবস্থান করা এবং আলোচনা শোনা জরুরি। আল্লাহ তায়া’লার আদেশ পালন করা আমাদের প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ। কুরআন বুঝে পড়া বা অধ্যয়ন করা আমাদের জন্য এক অসীম নেয়ামত। কুরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে এ নিয়ামতের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সিলেটের সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা ‘পাণ্ডুলিপি প্রকাশন’-এর আয়োজনে গতকাল (১৭ মার্চ ২০২৫, সোমবার) বেলা ২টায় সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি, ৫নং বার ২য় তলায় যুক্তরাজ্যে প্রবাসী শায়খ এইচ এম শফিকুর রহমান আল-মাদানী অনূদিত আল কুরআনুল করিম-এর সহজ তরজমা পবিত্র মাহে রমজানে সিলেটের সম্মানিত বিজ্ঞ আইনজীবীদের মাঝে ফ্রি কুরআনুল করিম বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সিলেট বারের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন দিলু’র সভাপতিত্বে ও এডভোকেট কবির আহমদ (বাবর)-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু, এডভোকেট এ কে এম সামিউল আলম, এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, সিলেট বারের সিনিয়র আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের বখত জুবায়ের, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব, সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মোঃ আব্দুল মুনিম এনাম, এডভোকেট খন্দকার মুজিবুর রহমান রানা, এডভোকেট ইমরান আহমদ, এডভোকেট জোৎস্না ইসলাম, এডিশনাল পিপি এডভোকেট মামুন আহমদ রিপন, এডভোকেট মোহাম্মদ মিছবাউর রহমান আলম, এডভোকেট মাহবুব আহমদ চৌধুরী, সিলেট আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক-২ এডভোকেট মোঃ রব নেওয়াজ রানা ও লেখক, প্রকাশক ও সংগঠক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল।
এডভোকেট রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু বলেন, সুন্দর পরিচ্ছন্ন ও উন্নত জীবনের পথ দেখায় কুরআন। মানুষের কথা বলা থেকে শুরু করে চলাফেরা, দেখাশোনা, খাওয়া-দাওয়া কোনো কিছুই বাদ যায়নি। সবই আলোচিত হয়েছে কুরআনে। প্রয়োজন শুধু তা পড়ে দেখার এবং বুঝে আমল করার। তবেই উন্নততর হবে মানুষের জীবনমান। কুরআনের এ সুন্দর গুণগুলো মানুষের জীবনে বাস্তবায়িত হলে হিংসা ও ঘৃণামুক্ত সুন্দর সমাজ তৈরি হতো। প্রতিটি পরিবার কুরআনের সৌন্দর্য রঙ ছিটিয়ে জীবন ও জগৎকে সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে দিতো। বিশেষ করে মানুষের সাথে তাঁর রবের সম্পর্ক তৈরি করতে আল কুরআনের চেয়ে বিকল্প কোনো জীবনব্যবস্থা নেই। এ কুরআনই মানবজাতির দুজাহানের শান্তি ও মুক্তির একমাত্র পথনির্দেশিকা।
এডভোকেট এ কে এম সামিউল আলম বলেন, আল্লাহ তায়া’লার বড়ই মেহেরবানী যে, তিনি আমাদের উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। কুরআন এমন একটি কিতাব যার মাধ্যমে আরবের সেই জাহেলী জাতি সৌভাগ্যবান জাতিতে পরিণত হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) কুরআন দিয়েই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ তৈরি করেছিলেন। এতো গুরুত্বপূর্ণ কিতাব আল কুরআন শিক্ষা আজ অবহেলিত। দিন দিন আমরা কুরআন শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। একজন মুসলিম হিসাবে কুরআন শিক্ষার গুরুত্বও যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারছি না। সেজন্য আমাদেরকে কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত, মানবজাতির সৃষ্টির উদ্দেশ্য যথাযথ বাস্তবায়নে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সবদিক থেকে পবিত্রতা অর্জনপূর্বক প্রতিদিন আসমানি মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের অনুশীলন, অধ্যয়ন, তেলাওয়াত হৃদয়ে ধারণ করে নিজেদের জীবনে প্রতিফলন করা।
এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, আল কুরআন মানবজাতিকে প্রতিটি দিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট জীবনবিধান বলে দেয়। অর্থাৎ, এ কিতাব মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনের যাবতীয় দিক-বিভাগের সকল কর্ম সম্পাদনে অত্যন্ত নির্ভুল এবং কার্যকরী পথনির্দেশনা দান করে। মানুষের সর্বপ্রকার চিন্তাচেতনা, আক্বিদা-বিশ্বাস, ইবাদত, মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্পর্ক, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি-অর্থনীতি, লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, যুদ্ধ-সন্ধি, বিয়ে-তালাক, সম্পদ বণ্টন, উত্তরাধিকার নির্ধারণ, বন্ধুত্ব-শত্রুতা, গবেষণা, আবিষ্কার-উদ্ভাবনসহ মানবজীবনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার সব দিক সম্পর্কেই আল কুরআন সঠিক এবং কল্যাণকর পন্থা নির্দেশ করে দেয়। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ঘটনাবলি এবং এর চলমান প্রবাহকে আল্লাহ তায়া’লা বলে দিয়েছেন।
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের বখত জুবায়ের বলেন, আল-কুরআন মানবজাতির জন্য একটি সংবিধান এবং তাদের মুক্তির দিশারী, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই আল-কুরআন আজ বহু মুসলিমের নিকট একটি ধর্মীয়গ্রন্থ মাত্র, অথচ বাস্তবতা হলো, এ মহাগ্রন্থকে আমলে এনে ইতিহাস স্বীকৃত জাহেলিয়াতের লোকেরা নবী (সা.)-এর স্বীকৃত সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিল, অথচ বর্তমানে মুসলিম সমাজ এ আল-কুরআনের যথাযথ আমলে না আনার কারণে তারা যথাযথ সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
লেখক, প্রকাশক ও সংগঠক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল বলেন, বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষী মানুষের কাছে এই কুরআনের শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং এর বাস্তবায়নে উৎসাহিত করার জন্য দাওয়াহ ভিত্তিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও গবেষক শায়খ শফিকুর রহমান আল মাদানী হাফিজাহুল্লাহ অনূদিত আল কুরআনুল করিমের সহজ তরজমা গ্রন্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সিলেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের হাতে আল কুরআনুল করিমের সহজ তরজমা গ্রন্থের এ পর্যন্ত বারো হাজার কপি তুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনেও আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে–ইনশাআল্লাহ।