ব্যাংকক, ৪ এপ্রিল ২০২৫: থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক (বঙ্গোপসাগরীয় বহুজাতিক কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা) সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে, যিনি গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

বৈঠকটি শুক্রবার ব্যাংককের সাংরিলা হোটেলে প্রায় আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, “এটি একটি অত্যন্ত গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা ছিল। আমরা শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি তুলে ধরেছি, যিনি ভারতে থাকাকালীন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। এছাড়া সীমান্তে হত্যাকাণ্ড, তিস্তা নদীর পানি বণ্টনসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”

বৈঠকের পটভূমি

অধ্যাপক ইউনূস গত ৮ আগস্ট ২০২৪-এ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি ছিল তাঁর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। গত বছর শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাংলাদেশের অভিযোগ, শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও দমন-পীড়নের অভিযোগের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ দাবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে একাধিক মামলা রয়েছে, যার মধ্যে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন দমনে শত শত মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় গণহত্যার অভিযোগ উল্লেখযোগ্য। অন্তর্বর্তী সরকার বারবার দাবি করে আসছে যে, তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করতে ভারতের কাছে ফেরত পাঠানো উচিত। প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “আমরা আশা করি ভারত এই বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেবে। এটি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

ভারতের অবস্থান

বৈঠকের পর ভারতের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে ভারত সহজে রাজি হবে না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর আগে বলেছিল, “প্রত্যর্পণের অনুরোধ পেয়েছি, তবে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই।” শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে ভারত তাঁকে আশ্রয় দিয়ে আসছে, যা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি করেছে।

অন্যান্য আলোচনা

বৈঠকে সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যার ঘটনা এবং তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) অহেতুক গুলি চালিয়ে বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। ইউনূস এই ঘটনা বন্ধে মোদির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কে ইতিবাচক মোড় আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে এই আলোচনা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। তবে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারত কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্কের দিক নির্ধারণ করবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে