আমরা গভীর উদ্বেগ ও বেদনাভরা হৃদয়ে লক্ষ্য করছি যে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ধারাবাহিক ও পরিকল্পিতভাবে যে বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তা মানবতা-বিরোধী অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন। এই হামলা শুধু ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নয়, এটি মানবতা, ন্যায়বিচার ও বিশ্ব বিবেকের বিরুদ্ধে একটি নির্মম আঘাত। আমরা এই অব্যাহত সহিংসতা, গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানাই এবং ইসরায়েলকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাই।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সামরিক আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত (২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত) ৫,০০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিশু ও উল্লেখযোগ্য অংশ নারী। আহত হয়েছেন প্রায় ১১৫,০০০-এর অধিক মানুষ, এবং কয়েক লক্ষাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া ইসরায়েলের হামলায় সহাস্রাধিক স্বাস্থ্যকর্মী, দুই শতাধিক সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী ও কয়েকশত আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সম্পর্কিত ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মসজিদ, গির্জা, গণমাধ্যম অফিস, আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার অফিস, শরণার্থী শিবির,—কোনো কিছুই রেহাই পায়নি। যুদ্ধ বিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ থেকে পুনরায় বর্বর হামলা চালিয়ে প্রায় ১৫০০ নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন এই যুদ্ধকে প্রলম্বিত করছে।
আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন অবিলম্বে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ ও বর্বর হামলায় হস্তক্ষেপ করে যুদ্ধ বন্ধ নিশ্চিত করে এবং একটি টেকসই ও সম্মানজনক শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমরা একইসাথে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন যুদ্ধাপরাধের নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনে।
মানবিক সহায়তার জন্য অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটি নিরাপদ ও স্থায়ী ‘মানবিক করিডোর’ চালু করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে আহত, অসুস্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছানো যায়। আমরা বিশ্বাস করি, এই সংকটের স্থায়ী সমাধান কেবলমাত্র একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সম্ভব, যেখানে ফিলিস্তিনিরা সম্মানের সাথে, নিরাপদে, স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবে।
গাজায় যুদ্ধ থামাতে হবে এখনই।
মানবতা বাঁচাতে হলে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আমরা ন্যায়ের পাশে, আমরা নিপীড়িতের পাশে।