২০২৫ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও হতাশাজনক। পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) কর্তৃক প্রকাশিত মাসিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রাজনৈতিক সহিংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতন, সাংবাদিক নির্যাতন, গণপিটুনি, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড, এবং কারাগারে মৃত্যুর মতো ঘটনা মারাত্মক হারে বেড়েছে।

মার্চ মাসে অন্তত ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ৭৩৩ জন আহত হয়েছেন। বিশেষ করে বিএনপির অন্তর্কোন্দল ও অন্যান্য দলের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাগুলো সহিংসতার প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বিএনপির ১৮ জন, আওয়ামী লীগের ৩ জন এবং ইউপিডিএফের ২ জন।

সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা ছিল এ মাসে আরও এক আলোচিত ইস্যু। ২৯টি ঘটনায় ৪১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন নারী সাংবাদিক রাজধানীতে সংবাদ সংগ্রহের সময় দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন – যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা।

নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মার্চ মাসে কমপক্ষে ১৩৩ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যাদের ৮৩ জনই শিশু। ২০৭টি শিশু নির্যাতনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৮ শিশু।

সীমান্ত এলাকাগুলোতেও নিরাপত্তাহীনতা বিদ্যমান। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন। মিয়ানমার সীমান্তেও গোলাগুলিতে এবং স্থলমাইন বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

এ মাসে গণপিটুনির ৪০টি ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং ৪৪ জন আহত হয়েছেন। পাবনায় এক নারীকে লোহার খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন ও জুতার মালা পরানোর মতো মধ্যযুগীয় কায়দায় নিপীড়নের ঘটনা জনসাধারণকে আতঙ্কিত করেছে।

শ্রমিকদের অবস্থা ছিল সমান উদ্বেগজনক। ২১টি ঘটনায় ৭ জন শ্রমিক নিহত এবং কমপক্ষে ১২০ জন আহত হয়েছেন। অধিকাংশ বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে।

রাজনৈতিক মামলার সংখ্যাও বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। এ মাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে ২২টি মামলায় মোট ২১১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং ১৬৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কারাগারে ৪ জন বন্দীর মৃত্যু এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় আরও উদ্বেগ বেড়েছে। ধর্মীয় প্রতিমা ভাঙচুর ও মাজারে হামলার ঘটনাগুলো সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

এইচআরএসএস মনে করে, আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের মধ্যে সচেতনতা ও আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা জরুরি।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে—মানবাধিকার রক্ষায় কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে দেশের সকল সচেতন মহলের সোচ্চার অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে