ঢাকা, ১ মে ২০২৫
আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমিকদের আত্মত্যাগ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসকে স্মরণ করে এ দিনটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করা হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য—“শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে”—একটি সম্মিলিত প্রত্যয়ের আহ্বান নিয়ে এসেছে।

তবে দিবসটি ঘিরে শ্রমিকদের বাস্তবচিত্র তুলে ধরে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গত তিন বছরে দেশে বিভিন্ন শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় ৪৯১ জন নিহত এবং কমপক্ষে ১৩৩৪ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬১ জন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও তথ্য দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, অস্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ এবং সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ৪২৯ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রেই প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু তাই নয়, গৃহকর্মী নির্যাতনের চিত্রও উদ্বেগজনক—গত তিন বছরে ৩০ জন গৃহকর্মী মালিকের নির্যাতনে নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ২৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। এই সময়ে ৮৬টি ঘটনার মধ্যে নিহত হয়েছেন অন্তত ৪৫ জন এবং আহত হয়েছেন ২৯৪ জন শ্রমিক। মার্চ মাসে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৭৫ জন শ্রমিক আহত হন। একই সময়ে দুর্ঘটনায় মারা যান আরও ১৯ জন শ্রমিক এবং গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত ২ জন শিশু নিহত ও ১ জন গুরুতর আহত হন।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে গার্মেন্টস খাতের নারী শ্রমিক, চা বাগানের শ্রমজীবী জনগোষ্ঠী এবং শিশু শ্রমের শিকার লাখো শিশুর অধিকার নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তাদের মতে, অনেক নারী শ্রমিক এখনও ন্যায্য মজুরি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ থেকে বঞ্চিত।

চা শ্রমিকদের অবস্থা আরও করুণ—প্রজন্মের পর প্রজন্ম অপ্রতুল মজুরি ও অবহেলিত সেবা ব্যবস্থার মধ্যেই বসবাস করছেন তারা। শিশু শ্রম এখনো নির্মাণ, পরিবহন এবং ক্ষুদ্র শিল্প খাতে ব্যাপকভাবে বিদ্যমান।

এইচআরএসএস শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, নারী শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য রোধ, শিশু শ্রম বন্ধ, গৃহকর্মী ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা এবং শ্রম আদালতের কার্যকারিতা বৃদ্ধি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে শিল্প উন্নয়ন টেকসই হবে না। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস তাই কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়—বরং এটি হওয়া উচিত শ্রমজীবী মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালনের নতুন উপলক্ষ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে