মহাবিশ্বের ‘মৃত্যুর দিন’ জানিয়ে দিলেন বিজ্ঞানীরা — পৃথিবীর জন্য সময় যেন এখন উল্টো দিকে চলছে
Trending
– কামাল সিকদার
আমরা প্রতিদিন চোখে যা দেখি, সেটাই কি বাস্তব? নাকি আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের সঙ্গে মজা করছে? যে সূর্যের আলোয় আপনি স্নাত হচ্ছেন তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ৮ মিনিট আগে। সুতরাং অতীতে আছি আমরা।
একটু ভেবে দেখুন। আপনি যখন ফোনের ক্যামেরা খুলে ‘লাইভ’ ভিডিও চালু করেন, ফোনের স্ক্রিন চোখের সামনে ধরে রাখলে দৃশ্যটা অনেক সময় একটু অস্বস্তিকর বা ঝাঁকুনিময় মনে হয়। ছবির গতি, রং, আলো – সব যেন এলোমেলো।
কিন্তু আশেপাশে সরাসরি তাকালে তো এমন কিছু মনে হয় না!
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাস্তবে আমাদের চোখ প্রতি মুহূর্তে এমন অসংখ্য অগোছালো দৃশ্য মস্তিষ্কে পাঠাচ্ছে। কিন্তু তারপরও কেন আমরা চারপাশকে এত সুন্দর, মসৃণ এবং স্থির দেখতে পাই?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে গবেষকরা এক অবিশ্বাস্য তথ্য জানিয়েছেন — আমরা আসলে ১৫ সেকেন্ড পেছনে পড়ে আছি!
২০২২ সালে ‘Science Advances’ নামের একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায়, ইউনিভার্সিটি অব অ্যাবারডিন এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলির বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা এখন যা দেখি, তা আসলে গত ১৫ সেকেন্ডের গড় অভিজ্ঞতা।
মানে, আপনি যখন কোনো বস্তুর দিকে তাকান, তখন আপনার মস্তিষ্ক দ্রুত পুরনো দৃশ্যগুলোর গড় হিসাব করে নিয়ে সেটাকেই ‘বর্তমান’ হিসেবে আপনার সামনে উপস্থাপন করে। এতে করে চারপাশ স্থিতিশীল মনে হয়, আর আপনি মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব অনুভব করেন না।
বিজ্ঞানীরা এটাকে বলছেন ‘ভিজ্যুয়াল স্টেবিলিটি ইল্যুশন’, অর্থাৎ, চোখের ধোঁকা যা চারপাশকে স্থির দেখায়।
না, ভুল বলে বিষয়টা নয়। বরং এটা আমাদের মস্তিষ্কের কৌশল — যাতে আমরা প্রতিনিয়ত ঝাঁকুনি অনুভব না করি।
আপনি যখন দূরে কোনও জিনিস দেখেন, চোখ কিন্তু স্থির থাকে না। চোখের ছোট ছোট নাড়াচাড়া বা ঘূর্ণনের কারণে রেটিনায় প্রতিনিয়ত ছবির অস্থিরতা তৈরি হয়। আলো, ছায়া, দৃষ্টিকোণ, ব্যাকগ্রাউন্ড – সব বদলে যাচ্ছে।
তবুও আপনি বস্তুটিকে স্থির এবং পরিপাটি ভাবেই দেখতে পান। কীভাবে?
এর পেছনে রয়েছে আমাদের মস্তিষ্কের ‘Serial Dependence’ নামের এক আশ্চর্য ক্ষমতা। এর মাধ্যমে, মস্তিষ্ক আশেপাশের বস্তুগুলোকে আগের দেখা জিনিসের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলে — যেন সব একই রকম এবং স্থির।
আপনি হয়তো খেয়াল করেননি, কিন্তু আপনার মস্তিষ্ক প্রতিদিন আপনাকে ধোঁকা দিচ্ছে — আর আপনিও খুশি মনে সেই ধোঁকায় চলছেন।
গবেষকরা এই তত্ত্ব যাচাই করতে এমন এক পরীক্ষা করেন, যেখানে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল একটি চেহারা দেখানো হয়।
এক মুখ ধীরে ধীরে বৃদ্ধ থেকে তরুণ বা তরুণ থেকে বৃদ্ধ হয়ে বদলে যাচ্ছিল। যদি আমাদের মস্তিষ্ক সবসময় অতীতের গড় দেখে, তাহলে আমরা মুখের প্রকৃত বয়সের চেয়ে একটু পিছিয়ে থাকা বয়স দেখতে পাব।
গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ সত্যিই চেহারার পরিবর্তন কিছুটা দেরিতে বুঝতে পারে।
পরীক্ষায় আরও দেখা যায়, এই বিভ্রম ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত কাজ করে। মানে, আপনার মস্তিষ্ক ১৫ সেকেন্ড পুরনো দৃশ্যও এখনকার মতোই দেখায়!
আমরা যখন মোবাইল দিয়ে ঝাঁকুনিময় ভিডিও করি, তখন ভিডিও ফ্রেম ঝাঁকুনি দেয়। কিন্তু খেয়াল করুন, আমরা যখন চোখ দিয়ে সরাসরি দেখি, তখন কিন্তু চারপাশ খুবই স্থিতিশীল মনে হয়।
কেন?
কারণ আমাদের মস্তিষ্ক খুব দক্ষভাবে আগের দৃশ্যের সঙ্গে বর্তমান দৃশ্যকে মিলিয়ে দেখায় এবং ঝাঁকুনি মুছে দেয়। তাই আপনি মসৃণ ছবি দেখতে পান।
এমনকি, আজকের অনেক ভিডিও স্ট্যাবিলাইজেশন সফটওয়্যারের ধারণাও এই প্রাকৃতিক মস্তিষ্কের কৌশল থেকে অনুপ্রাণিত।
আমরা প্রতিদিন যা দেখি, তা হয়তো পুরোপুরি বর্তমান নয়। আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের আগের ১৫ সেকেন্ডের অভিজ্ঞতার গড় হিসাব করে, আর আমরা সেটাকেই বর্তমান ভাবি।
আমাদের চোখের এই ‘প্রতারণা’ আসলে আমাদের জন্য আশীর্বাদ। না হলে হয়তো আমরা প্রতিদিন মাথা ঘোরার সমস্যায় ভুগতাম।
তাই, আপনি যখন পরেরবার আপনার ফোনের ক্যামেরায় কাঁপা কাঁপা ভিডিও তুলবেন, মনে রাখবেন — আপনার মস্তিষ্ক তখনও আপনাকে সাহায্য করছে যেন আপনি চারপাশকে সুন্দর, মসৃণ এবং স্থির দেখতে পারেন।
আপনি যেমন ভাবছেন, আপনি ততটা বর্তমানেও নেই। আপনি একটু পিছিয়ে আছেন — ১৫ সেকেন্ড।