সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত চারজন গ্রেপ্তার, আরও দুজন র্যাবের হাতে আটক; ঘটনায় জড়িতদের আজীবন বহিষ্কার যুবদল থেকে
ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫ —
পুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ নামে এক তরুণ ব্যবসায়ীকে। এই মর্মান্তিক ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি বুধবার বিকেলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) সামনে পাথর দিয়ে বেধড়কভাবে পিটিয়ে হত্যা করে সোহাগকে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সোহাগের সঙ্গে স্থানীয় একটি ভাঙারি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। এই দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চারজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা সবাই জাতীয়তাবাদী যুবদলের সক্রিয় সদস্য বলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। র্যাব আরও দুইজনকে আটক করেছে এবং জানিয়েছে, হত্যার নেপথ্যে আরও পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এই হত্যাকাণ্ডকে ‘রোমহর্ষক ও ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন,
“যেকোনো অপরাধীর দায় দল নেবে না। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।”
তিনি আরও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে যেসব যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যদের দেখা গেছে, তাঁদের দলীয় সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
নিন্দা জানাল বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণসংহতি আন্দোলন এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক বিবৃতিতে বলেন,
“পাথর দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করার মতো নৃশংসতা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে জনগণের মনে ভয় সৃষ্টি করে রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।”
তাঁরা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এখনই কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে, যেন এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
ইসলামী আন্দোলনের তীব্র ক্ষোভ
শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন,
“সোহাগ হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে কারো পক্ষে ভাষা খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এমন নিষ্ঠুর, অমানবিক হত্যাকাণ্ড সমাজে বিভীষিকা তৈরি করছে। এ ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “যুবদলের সন্ত্রাসীরা এই হত্যার মাধ্যমে জাতিকে কী বার্তা দিতে চাইছে, তা বিএনপিকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।”
তদন্ত অব্যাহত
ডিএমপি এবং র্যাবের যৌথ তদন্তে ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও যানবাহন শনাক্ত করা হয়েছে এবং আরও কয়েকজন পলাতক আসামিকে ধরতে নজরদারি চলছে।
এই বর্বরোচিত ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে থাকলেও পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে, দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
সোহাগের পরিবার ও এলাকাবাসী এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে দ্রুততম সময়ে চার্জশিট প্রদান এবং দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরুর দাবি জানিয়েছে।






