লন্ডন, ৫ অক্টোবর ২০২৫: মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ), ইউরোপের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) অনুষ্ঠিত হয়েছে লন্ডন মুসলিম সেন্টারে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে আসা শতাধিক প্রতিনিধি এই অধিবেশনে অংশ নেন।
সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ব্যারিস্টার হামিদ হুসাইন আজাদ এবং সভা পরিচালনা করেন মহাসচিব নুরুল মাতিন চৌধুরী। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। উদ্বোধনী বাণীতে এমসিএ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শাইখ আব্দুল কায়িউম নেতৃত্বের ইসলামী দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, নেতৃত্ব কোনো ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়; বরং বিনয়, জবাবদিহিতা ও আন্তরিক সেবার মাধ্যমে তা পালন করতে হয়।
সভায় আঞ্চলিক ও শুরা কাউন্সিলের নির্বাচন শেষে কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে ভোট গ্রহণ করা হয়। ২০২৫–২০২৭ মেয়াদের জন্য সদস্যদের ভোটে ব্যারিস্টার হামিদ হুসাইন আজাদ আবারও সভাপতি নির্বাচিত হন। ফলাফল ঘোষণার পর তিনি শপথ গ্রহণ করেন এবং নবনির্বাচিত আঞ্চলিক সভাপতি ও শুরা কাউন্সিল সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
এটি তার টানা দ্বিতীয় মেয়াদ। গত দুই বছর (২০২৩–২০২৫) এমসিএর সাংগঠনিক কার্যক্রম শক্তিশালী করা, সদস্যদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে কার্যক্রম সম্প্রসারণে তিনি প্রশংসিত হন।
ব্যারিস্টার আজাদ দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবী ও মানবতাবাদী নেতা। তিনি এমসিএর মহাসচিব হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা মুসলিম এইড ও মুনতাদা এইড–এও নেতৃত্বের ভূমিকা রেখেছেন। ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও উন্নয়নের পক্ষে তার কাজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত।
সভায় মূল বক্তব্যে তিনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সদস্যদের আস্থার জন্য ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, “এমসিএর অগ্রগতি কোনো একক প্রচেষ্টার ফল নয়; এটি তৃণমূল কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মিলিত অবদান।”
গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এটিকে তিনি অভিহিত করেন “মানবতার বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিবেকের উপর এক কলঙ্ক” হিসেবে। তিনি ব্রিটিশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান। তার ভাষায়, “গণহত্যার মুখে নীরব থাকা মানেই অপরাধে শরিক হওয়া। আমাদের অবশ্যই নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং যুদ্ধ ও অবরোধ বন্ধের জন্য জোরালো দাবি তুলতে হবে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরেন—
- তরুণদের নেতৃত্ব ও শিক্ষা কর্মসূচিতে ক্ষমতায়ন
- নীতি-নির্ধারণ ও জনজীবনে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি
- আন্তঃধর্মীয় সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা জোরদার
- শিক্ষা ও কল্যাণমূলক কর্মসূচি বিস্তার
- মানবাধিকার রক্ষা ও ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান
শেষে তিনি বলেন, মুসলমানরা আল্লাহর খলিফাহ হিসেবে ন্যায়ভিত্তিক ও করুণাময় সমাজ গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত। এমসিএ ইউরোপ আগামী দিনে সেবা, ন্যায় ও ক্ষমতায়নের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আরও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাবে।







