Home ইউকে সাবেক লেবার মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ: ‘ভুয়া কোভিড টেস্টিং কোম্পানি গড়ে তিন সপ্তাহে...

সাবেক লেবার মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ: ‘ভুয়া কোভিড টেস্টিং কোম্পানি গড়ে তিন সপ্তাহে আয় করেছে £৬.৬ মিলিয়ন’

39
0

ব্রিটেনের সাবেক লেবার বিচারমন্ত্রী শাহিদ মালিক একটি প্রতারণামূলক কোভিড টেস্টিং ফার্ম গঠন করেছিলেন, যা মাত্র তিন সপ্তাহে £৬.৬ মিলিয়ন (প্রায় ৯ কোটি টাকার বেশি) আয় করেছে বলে আদালতে জানানো হয়েছে।

৫৭ বছর বয়সী মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একজন ফার্মাসিস্ট, নিবন্ধিত বিজ্ঞানী এবং তাঁর প্রাক্তন অফিস ম্যানেজারকে নিয়ে এই “ক্যাশ কাউ” প্রতিষ্ঠান আরটি ডায়াগনস্টিকস (RT Diagnostics) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

২০০৫ সালে নির্বাচিত সাবেক এমপি মালিক গর্ডন ব্রাউনের সরকারের সময় বিচার ও কমিউনিটি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে তিনি ২০১০ সালের নির্বাচনে হেরে যান। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক ব্যবসা পরিচালনা, জননিরাপত্তার ক্ষতি সাধন ও মানি লন্ডারিং–এর অভিযোগ আনা হয়েছে।

সহ-অভিযুক্ত ফয়সাল শওকত(৩৭) একই অপরাধে অভিযুক্ত। এছাড়া লিন কনেল (৬৪), পল মুর (৫৬)অ্যালেক্সান্ডার জারনে (৭০)–এর বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক ব্যবসা এবং জননিরাপত্তার ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ব্র্যাডফোর্ড ক্রাউন কোর্টে শুনানিতে বলা হয়, শওকত একজন ফার্মাসিস্ট, যিনি একটি ফার্মেসী চেইনের মালিক। তাঁর এবং মালিকের মধ্যে তুরস্কে পারস্পরিক যোগাযোগ ছিল, যার মাধ্যমে তারা অননুমোদিত ও মানহীন উপকরণ সংগ্রহ করেন এবং তা ব্যবহার করে পিসিআর টেস্ট কিট তৈরি করে গ্রাহকদের পাঠান।

প্রসিকিউটর জোনাথন স্যান্ডিফোর্ড কেসি (KC) বলেন, মালিক ও শওকত এই আরটি ডায়াগনস্টিকস প্রতিষ্ঠানের মূল অর্থদাতা ছিলেন এবং এর ল্যাবরেটরি স্থাপনে নেতৃত্ব দেন।

আদালতকে জানানো হয়, শওকত ব্যক্তিগতভাবে সরকারের ওয়েবসাইটে কোভিড-১৯ টেস্ট সরবরাহকারীদের তালিকায় কোম্পানিটির নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সক্রিয় ভূমিকা নেন।

প্রসিকিউশন পক্ষের দাবি, মালিক ও শওকত একটি দ্বিতীয় কোম্পানিও গঠন করেন, যার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আরটি ডায়াগনস্টিকসের আয় জমা হতো।

আদালতে আরও শোনা যায়, পল মুর একসময় মালিকের অফিস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি কার্কলিস কাউন্সিলের একজন স্বাধীন কাউন্সিলর, যাকে লেবার পার্টি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি আরটি ডায়াগনস্টিকসের উচ্চপদে থেকে কার্যত অপারেশনস ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন।

পড়ুনঃ  দক্ষিণ এশিয়ায় চলমান রাজনৈতিক সংকটে এবং ধর্মীয় উগ্রতায় উদ্বিগ্ন ব্রিটিশ লর্ড

অ্যালেক্সান্ডার জারনে ছিলেন হেলথ অ্যান্ড কেয়ার প্রফেশনস কাউন্সিলের নিবন্ধিত বিজ্ঞানী। কখনও তিনি প্রতিষ্ঠানের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর, আবার কখনও গভর্ন্যান্স প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানা যায়।

প্রসিকিউটর জানান, জারনে সরকারি ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানটির নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় ‘গুরুত্বপূর্ণ মিথ্যা তথ্য’ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, লিন কনেল ল্যাবরেটরির কর্মীদের তত্ত্বাবধান করতেন এবং তিনি তৃতীয় একটি কোম্পানি গঠনেও জড়িত ছিলেন, যা আরটি ডায়াগনস্টিকস পরিদর্শনে ব্যর্থ হলে তার পরিবর্তে কাজ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল।

আদালতে বলা হয়, ২০২১ সালের মার্চে তৃতীয় জাতীয় লকডাউন শেষ হওয়ার সময় সরকার পিসিআর টেস্টিং সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এই সুযোগকে মালিক ও তাঁর সহযোগীরা অবৈধভাবে ব্যবহার করে ‘ক্যাশ কাউ’ কোম্পানি গঠন করেন।

স্যান্ডিফোর্ড বলেন, ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের হ্যালিফ্যাক্সে প্রতিষ্ঠিত ওই ল্যাবরেটরির অবস্থা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের, দেয়াল ও ছাদে ছিদ্র, চারপাশে ময়লা এবং উপরের তলায় গৃহহীন লোকজন বাস করছিল। অথচ তাদের ওয়েবসাইটে ল্যাবটিকে আধুনিক, স্বীকৃত ও পরিপূর্ণভাবে সজ্জিত বলে দাবি করা হয়েছিল।

আদালতে উপস্থাপিত প্রমাণ অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া নেগেটিভ ফলাফল প্রদান করেছিল এবং সন্দেহজনকভাবে অতি কম সংখ্যক পজিটিভ রিপোর্ট তৈরি করেছিল।

এছাড়া তারা যতগুলো পিসিআর কিট বিক্রি করেছিল, তার অনেকগুলোর নমুনা কখনো পরীক্ষাই করা হয়নি, বরং ল্যাবের এক কক্ষে ফেলে রাখা হয়েছিল

যেসব গ্রাহক অভিযোগ করেছিল, তাদের বলা হতো তাদের রিপোর্ট নেগেটিভ, যদিও তাদের নমুনা আদৌ পরীক্ষা করা হয়নি।

এর ফলে বহু মানুষ, যারা সংক্রমিত ছিলেন, নিজেদের সংক্রমণমুক্ত ভেবে জনসম্মুখে বের হয়েছিলেন, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করে।

সব অভিযুক্তই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মামলার শুনানি এখনো চলমান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here