বর্ণবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে শান্তিকামী মানুষের অনন্য সমাবেশ
হোয়াইটচ্যাপেল, লন্ডন | শনিবার, প্রতিনিধি সংবাদদাতা
বর্ণবাদ, বিভেদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস। শনিবার দুপুরে হোয়াইটচ্যাপেল টাউন হলের সামনে অনুষ্ঠিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো মানুষ অংশ নেন। রূপ নেয় এক বিশাল জনসমুদ্রে।
‘শান্তি ও ঐক্যের পক্ষে’ পূর্বঘোষিত এই র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিক, ধর্মীয় নেতা, সমাজকর্মী ও বিভিন্ন কমিউনিটির প্রতিনিধিরা। সমবেত জনতা একবাক্যে ঘোষণা দেন— “টাওয়ার হ্যামলেটসে বর্ণবাদ, বিভেদ বা উগ্রবাদের কোনো স্থান নেই।” তারা বলেন, ডানপন্থী উগ্রবাদীদের উত্তেজনাকর কর্মসূচি ও মিছিল আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে ঠেকিয়েছি; ভবিষ্যতেও এই ঐক্যের ধারা অব্যাহত থাকবে।
সমাবেশে বক্তারা একে “শান্তিকামী মানুষের বিজয়” হিসেবে উল্লেখ করেন। তাদের ভাষায়, “এ বিজয় কোনো সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর নয়; এটি সেই জনগণের বিজয় যারা টাওয়ার হ্যামলেটসকে ঐক্য, সহাবস্থান ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতীকে রূপ দিতে চায়।”
নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ
সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিক ও এমপি জেরেমি করবিন, ইউনাইটেড ইস্টএন্ডের চেয়ার ড. গ্লিন রবিন, স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজমের কো-চেয়ার সাবি দেলু এবং ইউনাইটেড ইস্টএন্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. আবদুল্লাহ ফালিক।
বক্তারা বলেন, ব্যাটল অব ক্যাবল স্ট্রিট থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত উগ্রবাদীরা কখনো টাওয়ার হ্যামলেটসকে ভাঙতে পারেনি— ভবিষ্যতেও পারবে না।
মেয়রের বক্তব্য
মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন,
“এই সমাবেশ আমাদের বৈচিত্র্য উদযাপন ও ঐক্য রক্ষার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। আমরা আবারও দেখিয়েছি— বিভেদের শক্তি কখনোই ইস্টএন্ডে জয়ী হতে পারেনি, আর ভবিষ্যতেও পারবে না।”
তিনি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সফল করার জন্য পুলিশ, কাউন্সিল কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংগঠনসমূহকে ধন্যবাদ জানান।
করবিনের বার্তা
এমপি জেরেমি করবিন বলেন,
“টাওয়ার হ্যামলেটস সবসময় ঐক্যের প্রতীক ছিল এবং থাকবে। টমি রবিনসনের মতো বর্ণবাদীদের এখানে কোনো স্থান নেই।”
তিনি স্মরণ করেন যে, তার মা ১৯৩৬ সালের ব্যাটল অব ক্যাবল স্ট্রিটে ইহুদি কমিউনিটির পাশে দাঁড়াতে এখানে এসেছিলেন— “আজ আমি সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আপনাদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি।”
বহুমাত্রিক অংশগ্রহণ
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, জুইশ সোশ্যালিস্ট ফোরামের চেয়ার ডেভিড রোজনবাগ, ইস্ট লন্ডন মসজিদের সিইও জুনেদ আহমেদ, স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজমের ওয়েম্যান বেনেট, ক্রাইস্ট অ্যাপোস্টলিক চার্চের রেভারেন্ড ফাদার জেমস ওলানিপেকুন, এমসিএ প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার হামিদ হোসেন আজাদ, স্থানীয় চার্চ নেত্রী মাদার বেনেডিক্ট, সোমালি অ্যাক্টিভিস্ট সাফা জামা এমবিই, ইউনাইটেড ইস্টএন্ডের এক্টিভিস্ট সামিরা আলি, এবং টাওয়ার হ্যামলেটস ইন্টারফেইথ ফোরামের প্রতিনিধি সুফিয়া আলম।
বক্তারা বলেন, “বর্ণবাদ, সহিংসতা ও বিভেদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্য প্রদর্শনের জন্য আজ আমরা একত্রিত হয়েছি। ঐক্যই আমাদের প্রকৃত শক্তি।”
উগ্রপন্থীদের মিছিল নিষিদ্ধ
উল্লেখ্য, শনিবার টাওয়ার হ্যামলেটসে ইউকিপ (UKIP) এর ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি জননিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বিবেচনায় মেট্রোপলিটন পুলিশ তা নিষিদ্ধ করে। তার পরও, ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে স্থানীয় কমিউনিটি শান্তিপূর্ণ এই সমাবেশের আয়োজন করে।
চলতি মাসের শুরুতে টাওয়ার হ্যামলেটস ফুল কাউন্সিল মিটিংয়ে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, “ফার রাইট গোষ্ঠী ও বাইরের উগ্র কর্মীদের টাওয়ার হ্যামলেটসে প্রবেশ ও বিভাজন সৃষ্টির যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হবে।”
পুলিশের বিবৃতিতেও জানানো হয়, ইউকিপের সমাবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জননিরাপত্তা ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে।






