
আঙ্কারা, রোববার:
দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তুরস্কের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ চালানো কুর্দি জঙ্গি সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) তুরস্ক থেকে তাদের সদস্যদের প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে। এটি সরকারের সঙ্গে সমন্বিত একটি নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নেওয়া পদক্ষেপ।
গত মে মাসে কারাগারে বন্দি নেতা আব্দুল্লাহ ওজালান–এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পিকেকে অস্ত্র পরিত্যাগ ও সংগঠন ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। চার দশকের সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
গত জুলাইয়ে, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত পিকেকে উত্তর ইরাকের কান্দিল পর্বতমালায় একটি প্রতীকী অনুষ্ঠানে কিছু অস্ত্র পুড়িয়ে ফেলে তাদের সদিচ্ছা প্রদর্শন করে। ঐ অনুষ্ঠানে পড়ে শোনানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, তারা তুরস্ক থেকে সব যোদ্ধাকে প্রত্যাহার করছে যাতে “স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ জীবন” গড়ার ভিত্তি তৈরি হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই পদক্ষেপ পিকেকের নিরস্ত্রীকরণ ও সমাজে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ার প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন। সংগঠনটি তুরস্ক সরকারকে আহ্বান জানায়, এখন তাদের উচিত এমন আইন প্রণয়ন করা যাতে পিকেকে শান্তিপূর্ণভাবে “গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে” রূপান্তরিত হতে পারে।
রোববারের অনুষ্ঠানে প্রায় দুই ডজন পিকেকে যোদ্ধা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, আর তাদের পেছনে বড় করে টানানো ছিল ওজালানের ছবি।
পিকেকে–এর মুখপাত্র বলেন, “আমরা নেতা ওজালানের শান্তি প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে হাঁটছি। সুতরাং তুরস্কের উচিত এখন রাজনৈতিক সংস্কার আনা এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা।”
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ান–এর দল একেপি’র মুখপাত্র ওমের চেলিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ বলেন, “পিকেকে–র প্রত্যাহার সিদ্ধান্ত সরকারের ‘সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্ক’ লক্ষ্য অর্জনের বাস্তব ফল। এটি সংসদীয় কমিশনের মাধ্যমে আইনি কাঠামো তৈরির ইতিবাচক পথ প্রশস্ত করবে।”
গত কয়েক বছরে তুরস্কের সীমান্ত এলাকা থেকে পিকেকে-কে উত্তর ইরাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সংগঠনটি সেখানে ঘাঁটি স্থাপন করেছে এবং তুরস্কের সেনাবাহিনী নিয়মিত ওইসব ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালাচ্ছে।
প্রথমদিকে পিকেকে একটি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানালেও, পরবর্তীতে তারা মূলত তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কুর্দিদের সাংস্কৃতিক অধিকার ও সীমিত স্বায়ত্তশাসন দাবি করতে থাকে।
তুরস্ক সরকার বলেছে, তারা কুর্দিদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন মেনে নেওয়া হবে না।
তুরস্ক ও পিকেকে–র মধ্যে এই সংঘাতের অবসান হলে এর প্রভাব গোটা অঞ্চলে পড়তে পারে — বিশেষ করে প্রতিবেশী সিরিয়ায়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি বাহিনীগুলোকে আঙ্কারা পিকেকের শাখা হিসেবে দেখে।






