মোট ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৬.৮ বিলিয়ন ডলার, জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাত ৭০ শতাংশে পৌঁছেছে
ইসলামাবাদ, রোববারঃ
পাকিস্তানের মোট সরকারি ঋণ ২০২৫ সালের জুনে দাঁড়িয়েছে ২৮৬.৮৩২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮০.৬ ট্রিলিয়ন রুপি) — যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক ঋণ পর্যালোচনা প্রতিবেদনে (Annual Debt Review FY25) এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশীয় ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪.৫ ট্রিলিয়ন রুপি, আর বৈদেশিক ঋণ ২৬.০ ট্রিলিয়ন রুপি (প্রায় ৯১.৮ বিলিয়ন ডলার)। এতে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুনে ঋণ-জিডিপি অনুপাত বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ, যা গত বছরের ৬৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, এই ঋণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো প্রত্যাশিতের তুলনায় কম নামমাত্র জিডিপি বৃদ্ধি—মুদ্রাস্ফীতি কমে আসায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও মন্থর হয়েছে, যদিও আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদারের উদ্যোগ চলছিল।
দেশীয় ঋণ আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে, যা গত তিন অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বৃদ্ধির হার। অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণ ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯১.৮ বিলিয়ন ডলারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈদেশিক ঋণের এই বৃদ্ধি মূলত এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর ঋণ বিতরণ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB)-এর ১ বিলিয়ন ডলার গ্যারান্টি-সমর্থিত বাণিজ্যিক ঋণ, এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক সংস্থার অর্থায়নের মাধ্যমে।
প্রাদেশিক ঋণও বেড়েছে। পাঞ্জাব প্রদেশ সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা, যার ঋণ এখন ৬.১৮ বিলিয়ন ডলার (৭%), এরপর সিন্ধ প্রদেশ ৪.৬৭ বিলিয়ন ডলার (৫%), যা সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। খাইবার পাখতুনখোয়ার ঋণ ২.৭৭ বিলিয়ন ডলার, বেলুচিস্তানের ৩৭১ মিলিয়ন ডলার, আর পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ২৮১ মিলিয়ন ডলার।
মোট বৈদেশিক সরকারি ঋণের ৮৪ শতাংশ ফেডারেল সরকারের এবং ১৬ শতাংশ প্রাদেশিক সরকারের দায়ে রয়েছে।
দুই বছরের অস্থিতিশীলতার পর পাকিস্তানের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সম্প্রতি আইএমএফ ও ইসলামাবাদের মধ্যে নতুন ঋণ কর্মসূচি নিয়ে কর্মপর্যায়ের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যার ফলে পাকিস্তান এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি–এর অধীনে ১.২ বিলিয়ন ডলার পেতে পারে, বোর্ড অনুমোদনের অপেক্ষায়।
এই চুক্তির লক্ষ্য হলো ম্যাক্রোইকোনমিক স্থিতিশীলতা পুনর্গঠন, বাজারে আস্থা ফেরানো, এবং আর্থিক ও কাঠামোগত সংস্কারকে সহায়তা করা।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪–২৫ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২.৫ শতাংশ, আর ২০২৫ সালের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২.৭ শতাংশ।
সরকারি প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত (Current Account Surplus) জুলাই–এপ্রিল অর্থবছরে ১.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, আর প্রবাসী আয় বছরের শেষে ৩৭–৩৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২০২৫ সালের জুনে ১৬.৬৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক রেটিং উন্নতির প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেছে প্রতিবেদনটি।







